গোল গাছের মিষ্টি রস

মিজানুর রহমান কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) | Jan 20, 2021 12:40 pm
গোল গাছ

গোল গাছ - ছবি সংগৃহীত

 

কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে বেশ পরিচিত গোল গাছ। গোলগাছ ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের পাম জাতীয় একটি গাছ। এ গাছটি যারা দেখেননি তারা মনে করেন এর পাতা গোল। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে গাছটির পাতা নারিকেল গাছের পাতার মতো লম্বা। কাদা মাটি থেকে অনেক শাখা আর পাতা সোজা আকাশ পানে উঠে যায় এই গাছ। যুগ যুগ ধরে উপকূলীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছে এই গাছ। লবণ পানির শক্তিতে বেড়ে ওঠা গাছ থেকে বের হয় অদ্ভুত এক সুমিষ্ট রস। খেজুর রসের চেয়ে এর মিষ্টতা ও ঘনত্ব দ্বিগুণ। যেখানে ১৬ ফোঁটা খেজুর রসে এক ফোঁটা গুড় হয় সেখানে আট ফোঁটা গোল রসেই এক ফোঁটা গুড় হয়। কুয়াকাটার অদূরে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবীপুর, নেয়ামতপুর ও তাহেরপুরের দুই শতাধিক পরিবারের জীবন-জীবিকার উৎস এই গোল গাছের রস। এ গাছের উচ্চতা ১৫ থেকে ১৮ ফুট। আষাঢ় মাসে গোলপাতা গাছে ফল আসার পর পৌষ মাসে ফলসহ কাঁদি মাটিচাপা দিয়ে নুইয়ে রাখতে হয়।

অগ্রহায়ণের শুরু থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত কাঁদির ডাণ্ডিতে পা দিয়ে মৃদু ম্যাসেজ করতে হয়। ১৫ দিন পরে ফলের থোকাটা কেটে নিতে হয় ডাণ্ডিটা রেখে। ডাণ্ডির মাথা কাটার ৩ দিন পর্যন্ত শুকাতে হয়। এরপর প্রতিদিন বিকেলে ডাণ্ডির মাথা সামান্য কেটে রস সংগ্রহ করা হয়। এভাবে অগ্রহায়ণের ১৫ থেকে চৈত্রের ১৫ তারিখ পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি ডাণ্ডি থেকে প্রতিদিন ৩০০-৫০০ গ্রামের মতো রস সংগ্রহ করা হয়। একেকজন চাষি দুই থেকে আড়াই শত ডাণ্ডি রাখেন কাটার জন্য। একেকজন চাষি ১০০ থেকে ১৫০ কেজি রস সংগ্রহ করে প্রতিদিন। এই রস থেকে ১৫-২০ কেজি গুড় তৈরি করে। এক কেজি গুঁড়ের বাজার মূল্য এখন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। দৈনন্দিন কম বেশি দেড়-দুই হাজার টাকা আয় করতে পারেন। এখন চলছে গোল গাছের রস সংগ্রহের মৌসুম।

শীত উপেক্ষা করে প্রতিদিন ভোরে ঘর থেকে বেরিয়ে গোলের রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত থাকে গোল গাছিরা। বাড়ির আঙ্গিনায় চুলায় জাল দিয়ে চলছে রস দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। আর সেই গুড় কলাপাড়া বাজারসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছেন গোল চাষিরা। গোল চাষে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতে হয় না। সহজলভ্য এবং ব্যয় কম হওয়ায় চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক। গোলগাছ চাষে রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। এ ছাড়া গোলের গুড় কৃমিনাশক বলে অনেকে মনে করেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অখিল মজুমদারের স্ত্রী সুবর্ণা তাফালে গোলের মুথা ও পাতা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ঢোঙ্গায় রস দিয়ে গুড় তৈরি করছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, বিয়ের পর থেকেই আমার শাশুড়িকে দেখি প্রতি বছর এই সময় রস জ্বাল দিতে। আবার তা দিয়ে গুড় তৈরি করতে। শাশুড়ি রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করার নিয়ম আমাকে শিখিয়েছে। এখন আমি রস দিয়ে গুড় তৈরি করতে পারি।

গোলচাষি নির্মল চন্দ্র জানান, এখন বাজারে গিয়ে গুড় বিক্রি করতে হয় না। অনেক খুচরা বিক্রেতা বাড়িতে এসেই গুড় নিয়ে যান। প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি করি। আর আমাদের দেশের লোক বিদেশে গুড় নিয়ে যায়। এই গুড় এক বছরের নষ্ট হয় না। ক্রেতা মোবারক বলেন, অন্য গুড়ের চেয়ে আলাদা স্বাদযুক্ত, সাশ্রয়ী ও দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকে বলে গোলের গুড়ের চাহিদা ব্যাপক।

উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মন্নান বলেন, গোল গাছে পরিচর্যা করতে তেমন কোনো খরচ নেই। গুড় উৎপাদন ছাড়াও রয়েছে এ গাছের বহুবিধ ব্যবহার। এ অঞ্চলে গোলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us