নায়ক যখন সিরাজ
সিরাজ - ছবি সংগৃহীত
টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম পাঁচ উইকেট পেয়েছেন তিনি সোমবারেই। হায়দরাবাদের পেসার মোহম্মদ সিরাজের কীর্তির পরে তাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাকি সদস্যরা। কিন্তু সিরাজ তাকিয়ে রয়েছেন পঞ্চম দিনের জন্য। তার আশা, অস্ট্রেলীয় বোলিংয়ের মোকাবিলা করে সিরিজ জিতে দেশে ফিরতে পারবে ভারত। শেষ দিনে জিততে গেলে ভারতের দরকার ৩২৪ রান। অস্ট্রেলিয়ার চাই দশ উইকেট। তবে রদ্ধশ্বাস সমাপ্তির পথে অন্তরায় বৃষ্টি। এ দিনও যা খেলা থামিয়ে দিয়েছিল।
সোমবার অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৩ রানে ৫ উইকেট নেয়া সিরাজ অবশ্য ভার্চুয়াল সংবদা সম্মেলনে বলছেন, ‘‘পিচে কিছু জায়গায় ফাটল তৈরি হয়েছে। বল আচমকা লাফিয়ে উঠতেও পারে। আমাদের ব্যাটসম্যানেরা তা সামলানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।’’
এই সিরিজে টেস্ট অভিষেক হওয়ার পরে তিন টেস্টে ১৩ উইকেট পেয়েছেন সিরাজ। সাব্কে ভারতীয় ওপেনার বীরেন্দ্র সেহবাগ তাকে নিয়ে টুইট করেছেন, ‘‘বাচ্চা ছেলেটা এই সিরিজে বড় হয়ে গেল। জীবনের প্রথম সিরিজেই ভারতীয় বোলিং আক্রমণের নেতা সিরাজ। আর সেই নেতৃত্ব ও দিয়েছে সামনের সারিতে থেকে। এই সিরিজে ভারতের তরুণ ব্রিগেড যে পারফরম্যান্স করেছে, তা উল্লেখ করার মতোই। আনন্দটা পূর্ণ হবে, যদি ভারত এই সিরিজ জিতে ফেরে।’’
অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়ার আগে বাবা মারা গিয়েছিলেন। তার পরেও দেশে ফেরেননি সিরাজ। ইয়ান বিশপ বলছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, এই ছেলেটা ওর বাবার পরলোকগমনের পরও দলের সঙ্গে থেকে গিয়েছিল। দেশে ফেরেনি। তাই ও টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম পাঁচ উইকেট পেয়ে সিরিজ শেষ করছে জানতে পেরে খুব ভালো লাগল।’’ সিরাজ যদিও প্রশংসা সরিয়ে মগ্ন পঞ্চম দিন নিয়েই। তাকে ব্যাট করতে নামতে হতে পারে কি না, তা জানতে চাওয়া হলে বলেন, ‘‘সুযোগ পেলে দলের জন্য ব্যাট হাতে নামব। তবে আমাদের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে সিরিজ জিতে দেশে ফেরা। একাধিক চোট আঘাতের পরেও দল দারুণ লড়াই করেছে।’’
সেরা উইকেট কোনটা জানতে চাওয়া হলে, তিনি বলেন, ‘‘এই সিরিজের সেরা শিকার কোনটা তা বলতে গেলে স্টিভ স্মিথের এ দিনের উইকেটের কথা বলতে হবে। অতিরিক্ত বাউন্সে ঠকে গিয়েছিল স্মিথ। এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান। তাই ওর উইকেট পেয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি মার্নাস লাবুশেনের উইকেট পাওয়াও দারুণ তৃপ্তি দিয়েছে।’’ সিরিজে এই দুরন্ত পারফরম্যান্সের জন্য সিরাজ ধন্যবাদ দেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানেকে। তার কথায়, ‘‘নবীনদের যথেষ্ট সুযোগ দিয়েছে রাহানে। শুধু আমি নই। নটরাজন, ওয়াশিংটনদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রত্যেকেই সুযোগ দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়েছে। রাহানেকে ধন্যবাদ নবাগতদের উপরে আস্থা দেখানোয়।’’
উঠে এসেছে সফরের মাঝপথে পিতৃবিয়োগের পরে দেশে ফিরে না যাওয়ার প্রসঙ্গও। যার উত্তরে সিরাজ বলেন, ‘‘বাবা আশা করতেন, একদিন তাঁর ছেলে টেস্ট খেলবে আর গোটা বিশ্ব তার খেলা দেখবে। আজ পাঁচ উইকেট পাওয়ার দিনে বাবা নিশ্চয়ই তা দেখেছেন। তার আশীর্বাদ ছিল বলেই পাঁচ উইকেট নিতে পেরেছি।’’ যোগ করেছেন, ‘‘ওটা খুব কঠিন সময় গিয়েছে। বাবার মৃত্যু। মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পরেই মানসিক শক্তি ফিরে পাই। মনোনিবেশ করেছিলাম, বাবার ইচ্ছাপূরণের জন্য।’’
চলতি টেস্ট সিরিজে ভারতীয় দলের একাধিক বোলার যখন চোট-আঘাতে কাবু হয়েছেন, তখন সিরাজ তিন টেস্টে ১৩৪-এর বেশি ওভার বল করে ১৩ উইকেট নিয়েছেন। যে প্রসঙ্গে ভারতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফ সোহম দেশাইয়ের কথা উল্লেখ করে সিরাজ বলেন, ‘‘এই কৃতিত্ব সোহম ভাইয়ের। প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন (এই কারণেই বিরিয়ানি খাওয়া ছেড়েছেন সিরাজ)। আমার অনুশীলনের চার্ট বানিয়ে ফিটনেস ট্রেনিং করিয়েছিলেন লকডাউনের সময়ে। তার সুফল পেয়েছি।’’
সাফল্যের নেপথ্যে ভারতীয় ‘এ’ দলের অভিজ্ঞতা সাহায্য করেছে জানিয়ে সিরাজ আরও বলেন, ‘‘নিজেকে সিনিয়র ক্রিকেটার ভাবি না। ঘরোয়া এবং ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে দিয়েছে।’’ যোগ করেন, ‘‘জসসি ভাইয়ের (যশপ্রীত বুমরা) অভাব বোধ করছি। তাই আরো বেশি দায়িত্ব নিয়ে বিপক্ষের উপরে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছি।’’
এ দিন পাঁচ উইকেট নিয়ে স্মারক বল-সহ ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে যশপ্রীত বুমরাকে দেখেই জড়িয়ে ধরেন সিরাজ। চোটের জন্য এই টেস্টে খেলেননি বুমরা। তিনিও সিরাজকে অভিনন্দন জানান। সিরাজ ও বুমরার এই আলিঙ্গনের ছবি ও ভিডিয়ো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড-সহ টুইট করেন অনেক ক্রিকেট ভক্ত।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা