কেমন আতিথেয়তা পাওয়া যায় বিশ্বের একমাত্র ৭ তারা হোটেলে?

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Jan 18, 2021 03:46 pm
বিশ্বের একমাত্র ৭ তারা হোটেলে

বিশ্বের একমাত্র ৭ তারা হোটেলে - ছবি সংগৃহীত

 

সাততারা হোটেলের মাপকাঠি কী হবে? এই নিয়ে একাধিক মত আছে। নির্দিষ্ট মাপকাঠি নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্কও। তবে ইতালির মিলানের ‘সেভেন স্টারস গ্যালেরিয়া’ হোটেল কিন্তু সগর্বে নিজেই নিজেদের সাততারা পরিচয় দাবি করে। কারণ তাদের কাছে রয়েছে প্রামাণ্য সংস্থার শংসাপত্র। মিলানের বিখ্যাত ভবন ভিত্তোরিয়ো এমানুয়েল টু-এর মধ্যে রয়েছে এই হোটেলটি।

উনিশ শতকের বীর দ্বিতীয় ভিত্তোরিয়ো এমানুয়েল ছিলেন সার্বভৌম ইটালির প্রথম রাজা। তার নামেই পুরো ভবনটির নামকরণ করা হয়েছে। মিলান শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই ভবন তৈরি হয়েছিল ১৮৬৫ থেকে ১৮৭৭ খিস্টাব্দ অবধি। মূল স্থপতি ছিলেন জিউসেপ্পি মেনগোনি।

পুরো ভবনের একটি বড় অংশ ব্যবহৃত হয় হোটেল হিসেবে। অন্য দিকে, এটা ইটালির প্রাচীনতম সক্রিয় শপিং মল-ও বটে। ফলে শপিং করতে যারা ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই ৭ তারা হোটেল স্বর্গরাজ্য।

জেনিভার এক সংস্থা এই হোটেলকে শংসাপত্র দিয়েছে ‘৭ তারা হোটেল’-এর। সংস্থার কথায়, ৭ তারা পরিচয় পাওয়ার ক্ষেত্রে যেকোনো হোটেলের অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি দেখা হয় হোটেলের স্থাপত্যও। যে শহরে এটি আছে তার নামের ক্ষেত্রে এটা আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য যোগ করতে পারছে কি না, দেখা হয় সেটিও।

সংস্থার দাবি, ৭ তারা পরিচয় পাওয়ার ক্ষেত্রে আরো একটি দিক হলো, সে ক্ষেত্রে ঘরের তুলনায় স্যুইট বেশি থাকতে হবে। ‘গ্যালেরিয়া’ সে শর্ত পূর্ণ করেছে। এই বিলাসবহুল হোটেলের আরো একটি দিক হলো অতিথিদের নিরাপত্তা।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সুলতান, রাষ্ট্রপ্রধান, সেলেব্রিটি এবং ধনকুবের শিল্পপতিরা এখানে নিভৃতে অবসর যাপনের জন্য আসেন। তাদের নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত পরিসর যাতে সুরক্ষিত থাকে, সে দিকে সজাগ দৃষ্টি হোটেল কর্তৃপক্ষের।

এই হোটেলে হাই প্রোফাইল অতিথিদের পছন্দ অপছন্দের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। তাদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যই হোটেলের নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। কর্তৃপক্ষের দাবি, এখানে অতিথির ভালো লাগা-মন্দ লাগাই শেষ কথা।

অতিথিদের সেবায় নিযুক্ত থাকেন বাটলার। কোনো অতিথি হোটেলে পা দেওয়া মাত্র তার জন্য হাজির হয়ে যান নির্দিষ্ট বাটলার। ফলে এখানে সারা বছর ধরে বাটলারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। হোটেলের মালিক আলেসান্দ্রো রোসো গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তাদের একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান আছে শুধুমাত্র বাটলারদের শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের জন্য।

তবে সেখানে সুযোগ পাওয়াও যথেষ্ট কঠিন। পৃথিবীতে বহুল প্রচারিত ভাষাগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি আয়ত্তে থাকলে তবেই সেই প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। কারণ ধনকুবেররা ছড়িয়ে আছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে। ‘গ্যালেরিয়া’-র অতিথিদের সঙ্গে তাদের মাতৃভাষাতেই কথা বলেন হোটেলের বাটলার। এ ছাড়া বাটলারদের ক্ষেত্রে বয়সের সীমারেখাও কড়াভাবে পালন করা হয়। সেই নির্দিষ্ট বয়সের বেশি বা কম হলে তারা চাকরি পান না।

‘বাটলার’ বিষয়টি এসেছে ব্রিটেন থেকে। কিন্তু আজ বিশ্ব জুড়ে ইটালীয় বাটলারদের কদর আকাশছোঁয়া। সুপ্রশিক্ষণের জন্য পর্যটন ব্যবসায় তাঁদের চাহিদা থাকে বছরভর। চিন, দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, এমনকি খোদ আমেরিকাতেও বড় বড় হোটেলে খোঁজা হয় ইটালির বাটলার।

‘গ্যালেরিয়া’ হোটেলে অতিথির গোপনীয়তা রক্ষাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি প্রয়োজনে অতিথির শপিং-এর ব্যবস্থা করে দেয়া থেকে তার প্রাইভেট জেটে জ্বালানি মজুত করা— সব দিকে খেয়াল রাখতে হয় বাটলারদের। ছুটি কাটাতে এসেও যদি কোনো হাই প্রোফাইল অতিথি ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তা হলে প্রয়োজনে তার স্ত্রী এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের মিলানের দ্রষ্টব্য জায়গাগুলো দেখাতে নিয়ে যেতে হতে পারে বাটলারকেই।

অতিথিদের দিন শুরু হওয়ার আগে থেকেই তাদের সজাগ থাকতে হয়। আবার ঘুমাতে যেতে পারেন হাই প্রোফাইল অতিথি ঘুমিয়ে পড়ার পরই।

রাজকীয় স্যুইট ছাড়া এই হোটেলে ঘরের সংখ্যা মাত্র ২০। ফলে বেশির ভাগ সময়েই অতিথিদের ঘর না পেয়ে নিরাশ হতে হয়। তবে একবার বুকিং হয়ে গেলে হোটেল কর্তৃপক্ষ ঘর বা স্যুইটের বিছানার চাদর থেকে খাবার, সব বিষয়েই অতিথির পছন্দ জানতে চান।

তার পর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হয় সব কিছু। এমনকি, ঘরে কোনো মিউজিক বাজবে কিনা, বাজলে সেটা কোন মিউজিক, সেটাও ঠিক করেন সে ঘরের অতিথিই।

বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল ও মহার্ঘ্য এই হোটেলে নিশিযাপনের জন্য মাথাপিছু ন্যূনতম মূল্য ১ হাজার ইউরো। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা এক লাখ টাকারও বেশি। ধনী পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকেই আছে মিলানের এই বিলাসিতার ঠিকানা।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us