ছোটবেলায় কেমন ছিলেন জিয়াউর রহমান
জিয়াউর রহমান - ছবি সংগৃহীত
ডাকনাম কমল। স্বল্পবাক, লাজুক ও গম্ভীর প্রকৃতির হলেও চালচলন ও আচরণে খুবই দৃঢ়চেতাসম্পন্ন। শৈশবে রোগা-পাতলা গড়নের কমলের গায়ের রং ছিল শ্যামলা। তবুও তার ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য ছিল- কেউ তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারত না। মিষ্টি আর চকোলেট ছিল খুব পছন্দের। প্রিয় ছিল মুরগির গোশত। পাখনার গোশতই বেশি পছন্দের। পাখনাকে কমল ডাকত ‘লাঙ্গল’ বলে। ছেলেবেলায় কমল খেলাধুলায় মেতে থাকত। ফুটবল, হকি ও ক্রিকেট ছিল প্রিয় খেলা। মাঝে মাঝে ডাংগুলিও খেলত। আবার বৃষ্টিতে ভিজে, কাদা মেখে বা ঘুড়ি উড়িয়েও মজা করত। তবে সন্ধ্যায় রাস্তার বাতি জ্বলে উঠলে বাসায় ফিরে বই নিয়ে পড়ায় বসত কমল।
বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার রেজাউর রহমানের বর্ণনায় শৈশবে এমন প্রাণবন্তই ছিল কমল নামের জিয়াউর রহমান। রেজাউর রহমান বিদেশে থাকতেন। ১৯৯৪ সালে দেশে এলে ঢাকার পল্লবীর বাসায় তার সাথে দেখা হয়। জিয়াউর রহমানের ছেলেবেলা সম্পর্কে জানার আগ্রহের কথা বললে সাক্ষাৎকার দিতে সম্মত হন। সাক্ষাৎকারের পুরো সময়টায় লক্ষ করি জিয়াউর রহমানকে তিনি ‘কমল’ নামেই ডাকছেন। বললেন, ওর নাম ‘কমল’ আর আমার নাম ‘বকুল’। আমরা দু’বছরের ছোট বড়। আমাদের জীবনের সবচেয়ে সোনালি সময় ছোটবেলা। বাবার চাকরির সুবাদে কলকাতা ও করাচিতে আমরা বেড়ে উঠি। ১৯৪৩ সালে কলকাতায় জাপানি বোমা বর্ষণ করা হয়েছিল। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ সময়। আমরা ওই বছরই কলকাতা থেকে বগুড়ার বাগবাড়িতে চলে আসি। দাদি তখনো বেঁচে ছিলেন। বাগবাড়ির পুকুর পাড়ে কমল ও আমি কাঁচা-পাকা আম মজা করে খেতাম। বাগবাড়ির খালে বন্যার পানিতে কমল নৌকা চালাত এবং পুঁটি মাছ ধরে আনন্দ পেত। কমল সাঁতার কাটাও শিখেছে বাগবাড়িতে। কলকাতার শৈশবের কথা জানিয়ে ইঞ্জিনিয়ার রেজাউর রহমান বলেন, আমরা দু’ভাই কলকাতার আমিন আলী এভিনিউয়ের শিশু বিদ্যাপীঠে প্রথম পড়েছি। এরপর কলেজ স্ট্রিটের হেয়ার স্কুলে। কমল পার্ক সার্কাসে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে। সে কখনো রাজনীতি করবে, পরিবারের কেউ উপলব্ধি করেনি। কিন্তু রাজনীতির প্রতি ওর আগ্রহ ছেলেবেলাতেই লক্ষ করেছি। আমরা যখন কিছুটা বুঝি, তখন দেখতাম রাজনৈতিক দলের সভা হচ্ছে কলকাতায়। এসব জনসভায় গান্ধী, জিন্নাহ, নেহরু এলে কমল জনসভায় গিয়ে তাদের বক্তৃতা শুনত। ফুটবল ক্লাবের জন্য সহযোগিতা চাইতে একবার সে শেরেবাংলার কাছে গিয়েছিল।
রেজাউর রহমান জানালেন, দেশ বিভাগের পর বাবার সাথে তারা চলে যান করচিতে। সেখানে তাদের ভর্তি করে দেয়া হয় করাচি একাডেমিতে। পড়াশোনার ফাঁকে তারা হকি খেলতেন। কমল করাচিতে স্কাউটিংয়ের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ১৯৫১-৫২ সালে সংসদ গ্যালারিতে বসে কমল রাজনৈতিক বিতর্ক উপভোগ করতেন। করাচি একাডেমি থেকে কমলকে ভর্তি করা হয় ডিজে কলেজে। ‘কিন্তু বেশি দিন সেখানে ওকে পড়তে হয়নি। অফিসার ক্যাডেট হিসেবে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমির জীবন শুরু হয় কমলের। ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবে, কিন্তু কমলকে সৈনিক জীবনই বেছে নিতে হয়। মিলিটারি একাডেমিকে থাকাকালে পাকিস্তানিদের দৃষ্টিভঙ্গি কমলের ভালো লাগত না। পাকিস্তানি ক্যাডেটরা বাঙালি জাতীয় নেতাদের গালাগাল করলে কমল তার প্রতিবাদ করত। একবার তো পাকিস্তানি এক ক্যাডেটকে ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়েছিল। মুষ্টিযুদ্ধে কমলকে পাকিস্তানি ক্যাডেটরা হারাতে পারত না।’