ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট

গৌতম দাস | Jan 16, 2021 05:32 pm
ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট

ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট - ছবি সংগৃহীত

 

ট্রাম্পের চোখে তার শত্রু কারা? তিনি কার বিরোধিতা করতে মাঠে নেমেছিলেন? চীন না বাইডেনের? আমেরিকান সংসদ ভেঙে তছনছ করেছেন কার বিপক্ষে যাবেন বলে? তিনি নিজে সিটিং প্রেসিডেন্ট হয়েও সংসদে হামলা করিয়েছেন! আর এতেই আমেরিকান সক্ষমতা যতটুকু যা ছিল তা নষ্ট করে দেশটিকে আরো কয়েক ধাপ দুস্থ অবস্থায় নিয়ে ফেলে গ্যালেন! পিউ রিসার্চের ফাইন্ডিংস মতে ট্রাম্পের পাবলিক রেটিং এখন ২৯ শতাংশে নেমে গেছে। আমেরিকার এখনকার মারাত্মক অর্থনৈতিক সমস্যা হলো মুখ্যত কোভিড ভাইরাস মোকাবেলায় ট্রাম্পের চরম অক্ষমতা। এক দিকে চার লক্ষাধিক মানুষের ভাইরাসে মৃত্যু, সাথে বেকারত্ব, অর্থনীতিতে ধস প্রভৃতি। যে দিকটা ভেবেই সম্ভবত বাইডেন শপথ নেয়ার আগেই প্রায় ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি রিকভারি পরিকল্পনা সিনেটে অনুমোদনের জন্য পেশ করতে রেডি করেছেন। সিনেটে দুই দল একসাথে কেবল ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টে মেতে থাকা নয়, বাইডেনের নতুন ক্যাবিনেট অনুমোদন বা অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অনুমোদনের মতো জরুরি কাজগুলো সম্পন্ন করতেও নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছেন। আগামী এক বছরের মধ্যে এসবের ফলাফল যদি ইতিবাচক হয়ে ফলতে থাকে, তবে মধ্যবিত্ত, স্বল্প আয় ও পেশার মানুষের ট্রাম্প সম্পর্কে তাদের মূল্যায়নে বদল আসবে। আর এতে তাদের নিজ হতাশ জীবন পেছনে ফেলে সামনে আগাতে তারা ইতিবাচক দিশা পেতে পারে!

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার আয়ু আর মাত্র চার দিন। কিন্তু ক্ষমতার টার্ম শেষ হওয়ার শেষ দুই সপ্তাহ যেন কঠিন থেকে কঠিনতর অসহায়ত্বের দিন হয়ে তার কাটছে। প্রতিদিনই নতুন আরেকটা খারাপ কিছু ঘটে চলেছে। এভাবে গত ১৪ জানুয়ারি আমেরিকান সংসদে (হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে) তিনি ইমপিচড হয়েছেন। নিজ দলের ১০ জন সদস্যও তার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ আইনত তিনি এখন দাগী বা ইমপিচড। আর তার বিরুদ্ধে ‘ইনসাইটিং ভায়োলেন্ট ইনসারেকশন’ বলে এবারের ইমপিচমেন্টে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তোলা হয়েছিল। যার বাংলা হলো- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই ‘সহিংস বিদ্রোহ-বিশৃঙ্খলা করতে উসকানি’ দিয়েছেন। যদিও এটা আংশিক, মানে ইমপিচমেন্টের পুরো আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি এখনো। কারণ আমেরিকান সংসদ আমাদের মতো একটা না দুইটা, মানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। অর্থাৎ আমেরিকার আরেক সংসদ আছে যেটাকে ওরা সিনেট বলে। প্রতি রাজ্য থেকে দু’জন নির্বাচিত সিনেটর নিয়ে এই সিনেট গঠিত। তবে আমেরিকান কনস্টিটিউশন অনুসারে, সংসদ সদস্য বা আইনপ্রণেতাদের দুটো কক্ষ (সিনেট ও হাউজ) থেকেই একই বিল অনুমোদন পেলে তবেই এরপর সেটি ‘পালনীয় পূর্ণ আইন’ বলে বিবেচিত হয়। তাই এখন সিনেট থেকেও ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পাস হওয়ার অপেক্ষায়; প্রস্তুতি চলছে।
ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার আগে কি সিনেটেও ইমপিচমেন্ট শেষ হবে?

একেবারেই সংক্ষিপ্ত জবাব, মনে হচ্ছে না। পরিস্থিতি সম্পর্কে এক্সপার্ট এক্সপ্লেনারের ব্যাখ্যা হলো, এটি সম্ভব নয়। এক কথায় বললে ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি তার টার্ম শেষে হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাওয়ার পরেই কেবল সিনেটে ওই ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব উঠবে।

এর মানে তা হলে, ট্রাম্প আর প্রেসিডেন্ট না থাকলেও সিনেটে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব জীবিত থাকছে? হ্যাঁ, ঠিক তাই। আর এর একটা কারণ হলো, সংসদ বা হাউজে ওঠা প্রস্তাব ও তা পাস হওয়ার পর তা সিনেটেও পেশ ও পরিণতি ভোটাভুটিতে যাই হয় তা সম্পন্ন হতেই হবে। কারণ প্রস্তাব একবার উঠেছে, এর প্রক্রিয়া শেষ হতে হবে। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, যদি সিনেটেও ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবটা পাস হয়ে যায় তখন এর পরে আরেক বাধ্যতামূলক কাজ বাকি থাকবে। সেটি হলো, সিনেটের প্রস্তাব পাস হওয়া মানে তখন এটা গৃহীত হয়ে যাওয়া আইন। যার সোজা অর্থ ট্রাম্প দোষী ও অযোগ্য বলে প্রমাণিত। তাই এর সাথে যে প্রশ্নটা উঠবেই যে, তা হলে ট্রাম্প কী এর পরও পাবলিক অফিসে কোনো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জন্য যোগ্য থাকেন? এ বিষয়টির মীমাংসা করতে হবে। কারণ সেটি মীমাংসা করা যায় আবার কেবল সিনেটেই আরেকটা প্রস্তাব তুললে। সেটা হলো, ইমপিচড হয়ে যাওয়া ট্রাম্প এরপরে পাবলিক অফিসে কোনো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জন্য যোগ্য কি না- এ প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি করা।

তবে এখানে আমাদের একটা জিনিস পরিষ্কার রাখা দরকার। ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব হাউজে যখন প্রথম তোলা হয়েছিল, তা পাস হওয়ার নিয়ম ছিল, সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেই পাস মনে করা হয়। মানে ওই দিন উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে ‘সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের’ (৫০% +) পক্ষ-ভোট পেলেই যথেষ্ট আর তাতে ট্রাম্প হাউজে ইমপিচড হয়েছিলেন ২৩২/১৯৭ ভোটে। কিন্তু এরপর ওই প্রস্তাব সিনেটেও পাস হতে গেলে তা হতে হবে দু-তৃতীয়াংশ (৬৭%) ভোটে। কিন্তু আবার এরপরে সিনেটেই অভিযুক্ত ট্রাম্প জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জন্য যোগ্য থাকবেন কি না এ প্রস্তাবের ভোট এবার সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় হলেই পাস হয়ে যাবে। এভাবেই ইমপিচমেন্টের পুরো প্রক্রিয়াটা কনস্টিটিউশন অনুসারে সম্পন্ন হবে বলে মনে করা হয়।

এ দিকে যদিও নিয়ম অনুসারে হাউজে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব (বা আর্টিক্যাল) পাস হওয়ার পরে এরপর সিনেটে তা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বটা কনস্টিটিউশন দিয়েছে হাউজ স্পিকারকে (এখানে ডেমোক্র্যাট স্পিকার পেলোসিকে)। কথা আরো আছে, তিনি কবে তা সিনেটে পাঠাবেন এর বিবেচনা তার নিজের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই প্রস্তাব হাউজে কেন পাস হয়েছে, তা সিনেটে গিয়ে এর পক্ষে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য আগেই তিনি ৯ জন ম্যানেজার বা এজেন্ট সিলেক্ট করে সিনেটে নাম পাঠিয়ে দেয়ার কথা। ইমপিচ-প্রস্তাব আলোচনার সময় সিনেট এদের থেকে তা শুনে নেবে। সেই ম্যানেজার নিয়োগ পেলোসি শেষ করেছেন এরই মধ্যে।
এ দিকে ইতোমধ্যে সিনেটেরও কিছু ডেভেলপমেন্ট বা নতুন ঘটনা আছে। চলতি সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ আছে রিপাবলিকানরা আর এর নেতা হলেন ম্যাক-কনেল। কিন্তু ২০ জানুয়ারি থেকে সিনেট হয়ে যাবে রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাট সমান সমান ৫০, এরকম। আমেরিকান কনস্টিটিউশনে এর সমাধান দেয়া আছে। রাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট যিনি থাকেন তিনিই পদাধিকারবলে সবসময় সিনেটের প্রেসিডেন্ট হন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হলেও তিনি ওই সিনেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করতে আসেন বিশেষ অনুষ্ঠান হলে অথবা সিনেট অধিবেশনে সমসংখ্যক ভোট পড়ার মতো পরিস্থিতি উদ্ভব হলে। কারণ কেবল তখনই তিনি সিনেটের ভোটাভুটিতে কোনো একটা পক্ষে নিজের ভোট প্রদান করে প্রস্তাবে সিদ্ধান্তমূলক ফলাফল এনে দেন। নইলে সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা যিনি থাকেন তিনিই পদাধিকারবলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে সিনেট পরিচালনা করে থাকেন।

এখন সিনেটে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পাস হতে গেলে ৬৭ ভোট লাগবে, অর্থাৎ ন্যূনতম ১৬টি রিপাবলিকান ভোট লাগবে। আর সাথে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ভোট, এমন হতেই হবে। কিন্তু কমলা হ্যারিস শপথ নেবেন বাইডেনের সাথেই ২০ জানুয়ারি। চলতি সিনেট যা ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে টার্ম শেষ হবে এতে ডেমোক্র্যাটরা ৫৭/৪৭-এ মাইনোরিটিতে আছে।

এসব বিবেচনায় আমেরিকান মিডিয়ার দুটো (এপি আর নিউ ইয়র্ক টাইমস) এক্সপ্লেনার রিপোর্ট বলছে, আগামী ১৯ জানুয়ারির আগে পেলোসির ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব সিনেটে পাঠানোর সম্ভাবনা নেই। কারণ তখনই একমাত্র ডেমোক্র্যাটরা সিনেটে শক্তিশালী। এ ছাড়া মেজরিটি লিডার রিপাবলিকান ম্যাক-কনেল জানিয়েছেন, ১৯ জানুয়ারির আগে সিনেট বসার শিডিউল এখনো পর্যন্ত নেই। আর তার অবস্থানটা হলো, তিনি ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের পক্ষে ভোট দিতেন হয়তো কিন্তু তিনি উদ্যোগী হয়ে প্রস্তাব আনতে চান না। আবার ১৯ জানুয়ারি তার সদস্য থাকার শেষ দিন। বোঝা যায়, এ জন্যই এক্সপ্লেনার ব্যাখ্যা কেন এমন।
সাথে আরেকটা খবর দিচ্ছে রয়টার্স যে, ক্ষুব্ধ ক্ষ্যাপাটে ট্রাম্পকে সামলাতে তার স্টাফরা পেরেশান দশায়। আর ২০ জানুয়ারি শপথের দিনেই সকালে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ও ওয়াশিংটন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সম্ভবত ফ্লোরিডায়, থাকবেন সেখানেই।

এবার আসা যাক ট্রাম্প আমেরিকাকে কোথায় নিয়ে এনে ফেললেন? এর পরিণতি কী হবে?
প্রথম কথা, এখনো যে দিকে বেশির ভাগ মিডিয়া বা আলোচক ফোকাস করতে চাইছে না; তা হলো ট্রাম্পের সমর্থক কারা, আমেরিকান সমাজের কোন অংশ? এবং কেন? নিশ্চয় আমরা মনে করব না যে ট্রাম্পের সমর্থকরা সব ট্রাম্পের মতোই পাগলাটে যাদের আচরণের দিশা বোঝা বা কার্যকারণ বের করা যায় না। রাজনৈতিকভাবে দেখলে ট্রাম্পের সমর্থকরা মূলত হোয়াইট সুপ্রিমিস্টরা। বিভিন্ন নামে এদের সংগঠন আছে, ডেরা আছে। এদের সাথে ট্রাম্পের প্রমোটার যারা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে পেশ করেছেন, এমন লোকদের বোঝাপড়া আছে যে, ট্রাম্প তাদের দাবি, তাদের চিন্তা পপুলার করতে সহায়তা করবেন। এ দিকে ট্রাম্পের ভোটার-সাপোর্টার যারা তাদের বড় অংশ হলো মূলত স্বল্প আয়ের বা ছোট এন্টারপ্রাইজ, ছোট উদ্যোক্তা অথবা চাকরি হারানো নানা ধরনের মানুষের বিরাট অংশ।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দুনিয়া এখন গ্লোবাল অর্থনৈতিক নেতৃত্বে এক পালাবদলের জাংশন পয়েন্টে। চীনা উত্থানের এই পর্বে সব দেশের তো বটেই, এমনকি পুরনো গ্লোবাল নেতা আমেরিকার অর্থনীতিতে এর বড় ছাপ পড়বেই। আগের নেতা হিসেবে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ যেসব পেশা বা প্রডাক্টকে সে সহজেই জন্ম ও প্রটেক্ট করতে পারত এর ক্ষমতা আমেরিকার কমে যাচ্ছে, কমে নিঃশেষ হওয়ার পথে যাচ্ছে। তবে এসব পেশা উদ্যোক্তাদের আর কোনো সম্ভাবনা নেই, ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। বরং ব্যাপারটা একটা ঢেলে সাজানো ধরনের কিছু; যা একেবারেই পুরনোদের বাদ দেয়া নয়। বরং নতুন কিছু করা, কিছুর বেলায় নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপখাইয়ে নেয়ার সুযোগ বের করা, কিছুতে নিজ কম লাভে প্রতিযোগিতায় নেমে যাওয়া ইত্যাদি এসব করে পেশা উদ্যোক্তাদের অনেকটাই বাঁচানো সম্ভব। আর সর্বোপরি চীনের সাথে বারগেন করা। যত বেশি পারা যায় (কৃষি বা শিল্পপণ্যের) বাজার ছাড় নিয়ে আসা, রাজনৈতিক নেগোসিয়েশন করার সুযোগ এখনো যা আছে তা ব্যবহার করা। এক কথায় চীনকে গ্লোবাল নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে নিজের বাজার যতটা সম্ভব ফিরিয়ে হাতে আনা, ধরে রাখার জন্য দরকষাকষি করা- এই মূলনীতিতে চলা। বাইডেন সম্ভবত সেদিকেই যাচ্ছেন। এমন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

কিন্তু গত চার বছর ট্রাম্প উলটা পথে চলেছেন। ট্রাম্প ও তার প্রমোটার ও অদৃশ্য উপদেষ্টারা ভেবেছেন, এগুলো হোয়াইট সুপ্রিমিস্টদের মতো সংগঠন বা চিন্তা দিয়ে চালাতে হবে। আর কথিত আমেরিকান ‘জাতিকে’ চীনের বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে পারলে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া যদিও এ কথা সত্য যে, আমেরিকা এখনো সামরিকভাবে চীনের থেকে ৬-৮ গুণ শ্রেষ্ঠ। কাজেই এদের অনুমান, আমেরিকা কেন চীনের কাছে হেরে যাবে। এই চিন্তার ত্রুটির দিকটা হলো এরা মনে করে গ্লোবাল অর্থনৈতিক সামর্থ্যকে পালটা সামরিক সক্ষমতা দিয়ে মোকাবেলা করা সম্ভব।

গত ৮ জানুয়ারি রয়টার্স একটা ইন-ডেপথ নিউজ করেছে; যার শিরোনাম হলো, ‘ট্রাম্পের ফ্যানেরা ভায়োলেন্সের নিন্দা করে কিন্তু তাই বলে ট্রাম্প এজন্য দায়ী মনে করে না।’ গত ৬ জানুয়ারি আমেরিকান সংসদে হামলার পরে রয়টার্স দেখানোর চেষ্টা করেছে যে ট্রাম্পের ভোটার সমর্থক কারা? কেমন পেশার লোকেরা আর সংসদে হামলা নিয়ে তাদের ক্ষোভ বা বক্তব্য কী? দেখিয়েছে, এরা ছোট শপে, রেস্টুরেন্টে বা সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি করে। তাদের দাবির সারকথা হিসেবে রয়টার্স বলছে, তারা কেউই এখনো ট্রাম্পকে ত্যাগ করতে চায় না। তারা ট্রাম্পকে তাদের আর্থিক অবস্থা-পরিস্থিতির পক্ষের প্রবক্তা মনে করে। কিন্তু তারা সংসদে ভায়োলেন্স বা সহিংসতার দায় নিতে চায় না। ট্রাম্পের উপরেও দিতে চায় না।

যদিও গত চার বছর ট্রাম্প চলেছেন উলটা বা ভুলনীতি নিয়ে। নিজের ক্ষ্যাপাটে নীতিতে। একটা উদাহরণ এখানে টানলে বাস্তবতাটা বোঝা যাবে। সাধারণভাবে আমেরিকায় উপস্থিত চীনা কোম্পানির ওপর ট্রাম্প খড়গহস্ত হওয়ার নীতিতে চলেছিলেন। চীনা কোম্পানিমাত্রই, বিশেষ করে টেলিফোন কিংবা ইলেকট্রনিকস সম্পর্কিত প্রযুক্তি কোম্পানি আমেরিকা থেকে তথ্য পাচার করছে বা এরা চীনা সামরিক বাহিনীর সাথে জড়িত ভাড়াটে অথবা বাহিনীর হয়ে তথ্য পাচার করছে, এটাই ছিলো ট্রাম্প প্রশাসনের কমন অভিযোগ বা উছিলা।

কিন্তু কোনোটার বেলাতেই তিনি কোনো প্রমাণ সাথে হাজির করেননি। নেহায়তই কখনো কোনো চীনা লোকের বিরুদ্ধে আদালতে যা ক্ষুদ্র বা পেটি মামলা দেয়া হয়েছে প্রপাগান্ডার জন্য, তাও টেকাতে পারেননি। কিন্তু জাতিবাদী, বিদেশবিরোধি প্রপাগান্ডা যা ট্রাম্পের এক বিশেষ অস্ত্র যা সাদা সুপ্রিমিস্টদের জন্য খোরাক ও ভুয়া সুসংবাদ- এসব ঠিকই চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেয়া হয়েছে। যেমন টিকটক সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়েও তিলকে তাল বানানো হয়েছে। আবার যতই আমেরিকা নভেম্বরের ভোটের দিকে আগাচ্ছিল, ভোট পাইতে পাবলিককে প্রভাবিত করতে ততই তিনি এসব প্রপাগান্ডা চরমে তুলছিলেন। এতে শেষের দিকে তিনি নতুন নীতি জাহির করলেন। টাইটান, আলিবাবা, টেনসেন্ট, বাইদু ছাড়াও আরো নয় বড় জায়ান্ট চীনা কোম্পানিগুলোর নামের একটা লিস্টর বানিয়ে দাবি করলেন, এগুলো চীনা সেনাবাহিনীর সাথে জড়িত কোম্পানি। এরপর সরকারি নির্দেশ জারি করলেন যে, এসব কোম্পানির সাথে আমেরিকানরা বিনিয়োগ-ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখতে পারবে না।

কোনো দেশ গ্লোবাল পাওয়ার হতে গেলে বা গ্লোবাল পাওয়ারের লক্ষণ হিসেবে কী থাকতে হবে এই প্রশ্নের জবাবে দুনিয়াতে মানা হয় যে ওই দেশটি- হাইটেকে কত এগিয়ে আছে, কত তার দখল এবং সর্বোপরি হাইটেকে তার মোট বিনিয়োগ কী পরিমাণ ইত্যাদি।

সম্প্রতি হংকংভিত্তিক এশিয়ান টাইমস এক রিপোর্টের শিরোনাম করেছে, চীনের টেক কোম্পানি টাইটান নিয়ে। লিখেছে ‘ট্রাম্প চায়না টেক কোম্পানি টাইটানকে সাদা পতাকা দেখিয়েছে।’ কেন?
কারণ গত নভেম্বরের নির্বাচনের আগে ট্রাম্প নির্বাহী নির্দেশ জারি করেছিলেন চীনা টেক কোম্পানির বিরুদ্ধে। অথচ আজ এর উলটা করছেন। কেন?

কারণ ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তের পর ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, রয়টার্সের মতো আরো গ্লোবাল মিডিয়া এই সিদ্ধান্তের ব্যাপক সমালোচনা করেছিল। ওয়ালস্ট্রিট লিখেছিল আলিবাবা বাইদ্যু নিউইয়র্কে রেজিস্টার্ড কোম্পানি, টেনসেন্ট হংকংভিত্তিক। এই তিন কোম্পানির মোট বিনিয়োগ হলো ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার যা অস্ট্রেলিয়ার ইকোনমির চেয়েও বড়। ট্রাম্পের কী সে খবর আছে?

অর্থাৎ আসলে এরা বলতে চেয়েছে, আমেরিকার পক্ষে এমন পালটা ট্রিলিয়ন ডলারের টেক কোম্পানি জন্ম দেয়ার সক্ষমতার দিন পেরিয়ে গেছে। কাজেই ওই কোম্পানির সাথে আমেরিকার ব্যবসায়িক সম্পর্কও যদি ভেঙে দেয়া হয় তবে আমেরিকা ততই আরো ‘কেউ না’ হয়ে যাবে। যেমন ওদিকে মোবাইল ফোনে ৫জি টেকনোলজিতে চীন ইতোমধ্যেই লিড নিয়ে ফেলেছে। যেখানে আমেরিকা কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে চলতি শতকের শুরু থেকেই ফোন টেকনোলজি থেকে ছিটকে পড়ে ‘কেউ না’ হয় গেছে। ইউরোপ কেবল ছোট তরফের কোম্পানি হয়ে আছে।

সার কথায় অর্থনৈতিক সক্ষমতা ঢলে পড়লে এবার সবাইকে শাসানো কিংবা ডমিনেট করার ক্ষমতা কোথায় পাবেন? তখন আর আমেরিকা ফার্স্ট বা জাতিবাদী স্লোগান বা সাদা সুপ্রিমিস্ট জজবা তুলে কিছুই ঠেকানো যাবে না।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us