অসহায়ত্বের দিন হয়ে কাটছে ট্রাম্পের
ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার আয়ু আর মাত্র চার দিন। কিন্তু ক্ষমতার টার্ম শেষ হওয়ার শেষ দুই সপ্তাহ যেন কঠিন থেকে কঠিনতর অসহায়ত্বের দিন হয়ে তার কাটছে। প্রতিদিনই নতুন আরেকটা খারাপ কিছু ঘটে চলেছে। এভাবে গত ১৪ জানুয়ারি আমেরিকান সংসদে (হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে) তিনি ইমপিচড হয়েছেন। নিজ দলের ১০ জন সদস্যও তার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ আইনত তিনি এখন দাগী বা ইমপিচড। আর তার বিরুদ্ধে ‘ইনসাইটিং ভায়োলেন্ট ইনসারেকশন’ বলে এবারের ইমপিচমেন্টে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তোলা হয়েছিল। যার বাংলা হলো- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই ‘সহিংস বিদ্রোহ-বিশৃঙ্খলা করতে উসকানি’ দিয়েছেন। যদিও এটা আংশিক, মানে ইমপিচমেন্টের পুরো আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি এখনো। কারণ আমেরিকান সংসদ আমাদের মতো একটা না দুইটা, মানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। অর্থাৎ আমেরিকার আরেক সংসদ আছে যেটাকে ওরা সিনেট বলে। প্রতি রাজ্য থেকে দু’জন নির্বাচিত সিনেটর নিয়ে এই সিনেট গঠিত। তবে আমেরিকান কনস্টিটিউশন অনুসারে, সংসদ সদস্য বা আইনপ্রণেতাদের দুটো কক্ষ (সিনেট ও হাউজ) থেকেই একই বিল অনুমোদন পেলে তবেই এরপর সেটি ‘পালনীয় পূর্ণ আইন’ বলে বিবেচিত হয়। তাই এখন সিনেট থেকেও ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পাস হওয়ার অপেক্ষায়; প্রস্তুতি চলছে।
ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার আগে কি সিনেটেও ইমপিচমেন্ট শেষ হবে?
একেবারেই সংক্ষিপ্ত জবাব, মনে হচ্ছে না। পরিস্থিতি সম্পর্কে এক্সপার্ট এক্সপ্লেনারের ব্যাখ্যা হলো, এটি সম্ভব নয়। এক কথায় বললে ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি তার টার্ম শেষে হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাওয়ার পরেই কেবল সিনেটে ওই ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব উঠবে।
এর মানে তা হলে, ট্রাম্প আর প্রেসিডেন্ট না থাকলেও সিনেটে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব জীবিত থাকছে? হ্যাঁ, ঠিক তাই। আর এর একটা কারণ হলো, সংসদ বা হাউজে ওঠা প্রস্তাব ও তা পাস হওয়ার পর তা সিনেটেও পেশ ও পরিণতি ভোটাভুটিতে যাই হয় তা সম্পন্ন হতেই হবে। কারণ প্রস্তাব একবার উঠেছে, এর প্রক্রিয়া শেষ হতে হবে। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, যদি সিনেটেও ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবটা পাস হয়ে যায় তখন এর পরে আরেক বাধ্যতামূলক কাজ বাকি থাকবে। সেটি হলো, সিনেটের প্রস্তাব পাস হওয়া মানে তখন এটা গৃহীত হয়ে যাওয়া আইন। যার সোজা অর্থ ট্রাম্প দোষী ও অযোগ্য বলে প্রমাণিত। তাই এর সাথে যে প্রশ্নটা উঠবেই যে, তা হলে ট্রাম্প কী এর পরও পাবলিক অফিসে কোনো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জন্য যোগ্য থাকেন? এ বিষয়টির মীমাংসা করতে হবে। কারণ সেটি মীমাংসা করা যায় আবার কেবল সিনেটেই আরেকটা প্রস্তাব তুললে। সেটা হলো, ইমপিচড হয়ে যাওয়া ট্রাম্প এরপরে পাবলিক অফিসে কোনো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জন্য যোগ্য কি না- এ প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি করা।
তবে এখানে আমাদের একটা জিনিস পরিষ্কার রাখা দরকার। ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব হাউজে যখন প্রথম তোলা হয়েছিল, তা পাস হওয়ার নিয়ম ছিল, সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেই পাস মনে করা হয়। মানে ওই দিন উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে ‘সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের’ (৫০% +) পক্ষ-ভোট পেলেই যথেষ্ট আর তাতে ট্রাম্প হাউজে ইমপিচড হয়েছিলেন ২৩২/১৯৭ ভোটে। কিন্তু এরপর ওই প্রস্তাব সিনেটেও পাস হতে গেলে তা হতে হবে দু-তৃতীয়াংশ (৬৭%) ভোটে। কিন্তু আবার এরপরে সিনেটেই অভিযুক্ত ট্রাম্প জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জন্য যোগ্য থাকবেন কি না এ প্রস্তাবের ভোট এবার সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় হলেই পাস হয়ে যাবে। এভাবেই ইমপিচমেন্টের পুরো প্রক্রিয়াটা কনস্টিটিউশন অনুসারে সম্পন্ন হবে বলে মনে করা হয়।