আজ কী হবে বসুরহাটে!
কাদের মির্জা - ছবি : সংগৃহীত
আজ শনিবার নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন। প্রথমবারের মতো ইভিএমে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা নৌকা প্রতীকে লড়ছেন। তিনি এ পৌরসভার তিনবারের মেয়র ও চেয়ারম্যান। এছাড়া বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থনে যথাক্রমে ধানের শীষ ও মোবাইল ফোন প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কামাল উদ্দিন চৌধুরী ও মোশাররফ হোসেন।
অপরদিকে নয়টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৫ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। এখানে ভোটার সংখ্যা ২১ হাজার ১১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৬২১ ও মহিলা ভোটার ১০ হাজার ৪৯৪ জন।
শুরু থেকেই নিজদলীয় কয়েকজন নেতার সমালোচনা এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আলোচনায় আসেন সরকার দলীয় প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা। তাকে ঘিরে নির্বাচন নিয়ে সারাদেশেই কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। শেষ নির্বাচনী সভাতেও তিনি নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানারকম ষড়যন্ত্র চলছে। আশপাশের আওয়ামী লীগ দলীয় নেতারা ওই এলাকায় ব্যাপক অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়েছেন। এমনকি তাকে হারানোর জন্য প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে কোটি টাকা দেয়ার অভিযোগও করেন তিনি।
তিনি বলেছেন, নির্বাচনে কোনোরকম অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা হলে দায়ভার নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও নির্বাচন অফিসারকে নিতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদেরকে প্রতিটি কেন্দ্রে লাঠি নিয়ে পাহারা দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘লাঠি ছিলি রান- ঠ্যাঙের গিরার নিচে মাইরবেন’। এছাড়া তিনি তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।
তবে সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানালেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জার ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি নিজে ও তার নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। পুলিশ তার বাসা ও অফিস পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। শুধু কাদের মির্জাই নয়, অপর প্রার্থীদেরও নিরাপত্তায় পুলিশ যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে বসুরহাট পৌর এলাকাকে সিল করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি। তিনি জানান, ওই এলাকায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, গণমাধ্যম কর্মী ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। পৌর এলাকায় প্রবেশের প্রতিটি রাস্তায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে অবৈধ অস্ত্রতো দূরের কথা, বৈধ অস্ত্র এমনকি লাঠিও বহন করতে পারবে না।
নোয়াখালী জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম জানান, এখানে ৯টি ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে মোট ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটসহ ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট, তিনটি টিমে ২৪ জন র্যাব, ৮০ জনের চার প্লাটুন বিজিবি সদস্য ও ২০০ জন পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার জন্য সার্বক্ষণিক পাঁচজন পুলিশ ও ১৩ জন করে আনসার সদস্য, তিনটি কেন্দ্রের জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ৭টি জরুরি টিম রাখা হয়েছে।
এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে গত কয়েক দিন মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা সমানতালে প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে শেষ মুহূর্তে শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন বিএনপি প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বিভিন্ন স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্ট ও ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে সরকার দলীয় কর্মীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নিরাপত্তার আশঙ্কায় অভিযোগকারীরা কেউ নাম প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তিনি নিজেই লড়াই করছেন। এক ভোট পেলেও নির্বাচনে ভোট ডাকাতি, জালিয়াতি হতে তিনি দেবেন না।