শনিবার তৃণমূলে শনি?
মমতা ব্যানার্জি - ছবি : সংগৃহীত
কিছু দিন আগে বড় ধাক্কা খেয়েছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। ওই সময় শুভেন্দু অধিকারী সহ দলের ছয় বিধায়ক ও এক এমপি বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। আবার তৃণমূল ভাঙতে পারে। দল ছাড়তে পারেন এমপি শতাব্দী রায় এবং রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শতাব্দী জানিয়েছেন, শনিবার বেলা দুটায় তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। শনিবার তিনি দিল্লি আসছেন। অমিত শাহের সঙ্গে তার কথা হতে পারে।
বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক বেশ কিছু দিন হলো ভালো যাচ্ছে না। তিনি শনিবার বেলা তিনটার সময় ফেসবুক লাইভ করে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন। ফলে রাজ্যের রাজনীতিতে শনিবার রীতিমতো চিত্তাকর্ষক হয়ে উঠতে চলেছে।
তবে দিনকাল এখন বদলে গেছে। বলা ভালো, আমূল বদলে দিয়েছে সামাজিক মাধ্যম। রাজনৈতিক নাটকের সূচনাও হচ্ছে ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলিতে। সেখানেই দল ছাড়ার ঘোষণা পর্যন্ত হতে পারে। যার শেষতম নিদর্শন হলো শতাব্দী ও রাজীব।
রাজীব গত ১১ ডিসেম্বর ফেসবুকে ঘোষণা করেছিলেন, ১৬ জানুয়ারি, শনিবার বেলা তিনটের সময় তিনি ফেসবুক লাইভ করবেন। সেখানেই ঘোষণা করবেন তাঁর ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তের কথা। তাই রাজীবের ফেসবুক লাইভের দিকে তাকিয়ে থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। কিন্তু তিনি যদি সেখানে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন, সেটাও অভিনব হবে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে অন্তত কোনো মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক ফেসবুক লাইভ করে দল ছাড়েননি।
শুধু তো রাজীব একা নন, তৃণমূল এমপি শতাব্দী রায়ও ফেসবুকের মাধ্যমেই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। শতাব্দী রায় ফ্যান ক্লাবের ফেসবুক পেজে তিনি একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তার শিরোনাম, 'বীরভূমে আমার নির্বাচন কেন্দ্রের মানুষের প্রতি'। সেখানে তৃণমূলের এই তারকা এমপি বলেছেন, ''অনেকে প্রশ্ন করেছেন, কেন আমাকে বহু কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না। তাদের বলছি, আমি সর্বত্র যেতে চাই। কিন্তু মনে হয় কেউ কেউ চান না যে, আমি আপনাদের কাছে যাই। বহু কর্মসূচির খবর আমাকে দেয়া হয় না। আমি আমার কর্তব্য পালনের চেষ্টা করে যাব। যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিই, আগামী ১৬ জানুয়ারি দুপুর দুটোয় জানাব।''
এক ঘণ্টার ব্যবধানে এই দুই সম্ভাব্য ফেসবুক ঘোষণার দিকে তাকিয়ে আছেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ।
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''আসলে সামাজিক মাধ্যমে কিছু বললে, তা সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। সংবাদ সম্মেলন করে বললে বা বিবৃতি দিলে অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। তার চেয়ে সামাজিক মাধ্যমকে হাতিয়ার করে সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছানোকে গুরুত্ব দিচ্ছেন রাজনীতিকরা।''
সংবাদ সম্মেলন না করে এই ভাবে লোকের কাছে যাওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি সুবিধা আছে। প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''সংবাদ সম্মেলনে রাজনীতিককে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। সেই প্রশ্নের জবাব না দিলে সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে সেই সব বিড়ম্বনা নেই। ফলে ভবিষ্যতে আরো বেশি রাজনীতিক সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করেই সিদ্ধান্ত জানাবেন।''
করোনাকালে পশ্চিমবঙ্গের মানুষও সামাজিক মাধ্যমে অনেক বেশি ঢুকে পড়েছেন। সেই সুযোগটাই এখন নিচ্ছেন রাজনীতিকরাও।
সূত্র : ডয়চে ভেলে