আওরঙ্গজেবের নগরী আওরঙ্গাবাদ : পেছনের কথা
আওরঙ্গজেব - ছবি : সংগৃহীত
ভারতীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের ঐতিহাসিক শহর আওরঙ্গাবাদের নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে শিবসেনা ও হিন্দুত্ববাদী দলগুলি। আওরঙ্গাবাদের ইতিহাসের একঝলক...
আওরঙ্গাবাদ এখন শিবসেনা ও কংগ্রেসের মধ্যে বিবাদের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিবসেনা আওরঙ্গাবাদের নাম পরিবর্তন করে শুম্ভুজিনগর রাখতে চায় ছত্রপতি শুম্ভুজি মহারাজের সম্মানার্থে। শুম্ভুজি মহারাজ ছত্রপতি শিবাজির পুত্র ছিলেন। তাদের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে কংগ্রেস। অহেতুক নাম পরিবর্তনের ফলে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হবে বলে তাদের অভিযোগ। রাজ্য সরকারের ‘কমন মিনিমাম প্রোগ্রামে’র মধ্যেও এটা পড়ে না। এই নাম পরিবর্তন অবশ্য নতুন বিষয় নয়। নির্বাচনের সময়ে মাঝেমধ্যেই এটি প্রকাশ্যে আসে।
ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাই, আওরঙ্গাবাদের নাম পরিবর্তনের প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রয়াত শিবসেনা প্রধান বালাসাহেব ঠাকরে। সেটা ছিল ১৯৮৮ সালের মে মাস। তার যুক্তি ছিল, শুম্ভুজি মহারাজ আওরঙ্গজেবের হাতে বন্দি হয়েছিলেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত এই আওরঙ্গাবাদে বসবাস করেছিলেন। শিবসেনা এই শহরটির নাম পরিবর্তনের দাবি তুললেও এর নাম পরিবর্তনে ঘটনা নতুন নয়।
আওরঙ্গাবাদ ১৭ শতকের তাজমহল-শৈলীতে মার্বেল নির্মিত ‘বিবি কা মাকবারা,অজন্তা-ইলোরা গুহার জন্য বিখ্যাত। ষোড়শ শতকের প্রথমদিকে মালিক আম্বার নামে একজন আফ্রিকান দাস,যিনি পরবর্তীতে বড় যোদ্ধা হয়েছিলেন,তিনি এই শহর নির্মাণ করেন। তখন এই শহরটির নাম রাখা হয়েছিল ‘খিড়কি’। যোদ্ধা হিসেবে আম্বার আফ্রিকা থেকে ভারতে এসেছিলেন। মোগল যুগে আকবরের সময় থেকে ইথিওপিয়ান এই দাস বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। সে সময় দাক্ষিণাত্য অভিযান হচ্ছিল। এই আম্বার নিজেই সেনা তৈরি করেছিলেন। এর ফলে মোগলদের সঙ্গে আম্বারের দীর্ঘ লড়াই শুরু হয়। মারাঠাদেরকে সঙ্গী করে গেরিলা কায়দায় তিনি যুদ্ধ করেন। আম্বার তার নতুন রাজধানী হিসেবে ১৬১০ সালে খিড়কিতে রাজধানী স্থাপন করেন। রাজপ্রাসাদ, ঝরনা, পথ সবকিছুই এতে ছিল পরিকল্পনা অনুসারে। দু’লক্ষ মানুষের বাসস্থান হিসেবে এটি গড়ে উঠেছিল বলে ইতিহাসে উল্লেখ আছে। মোগলদের সঙ্গে শত্রুতা থাকায় আম্বার এই শহরের বেশ কিছু জায়গা মারাঠিদের বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে নামকরণ করেন যে মন মালপুরা, খেলপুরা, পরসপুরা, বিথাপুরা। ১৬১৬ সালে একটি যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ফলে শহরটি মারাঠারা দখল করে নেয়,যারা আবার মুঘলদের পক্ষে ছিল। প্রায় ধ্বংস করে ফেলা হয় এই শহরটিকে। এর কয়েক বছর পর শাহজাদা খুররম, যিনি পরে শাহজাহান হিসেবে সিংহাসনে বসেন, শহরটি দখল করেন। পরে আম্বার এটি পুনর্দখল করেন এবং মেরামত করার চেষ্টা করেন।
১৬২৬ সালে আম্বারের মৃত্যু হওয়ার পর তার পুত্র ফতেহ খান এর শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। তিনি নিজের নামে এই শহরটির নাম রাখেন ‘ফতেপুর’। পিতার মতো তিনি সামরিক শক্তি কিংবা রাজনৈতিক বুদ্ধিতে তেমন একটা বিচক্ষণ ছিলেন না। তিন বছরের মধ্যেই তিনি ফতেপুরের নিয়ন্ত্রণ হারান। মোগলরা শহরটি দখল করে নেয়। এই মোগল সেনাদলের নেতা ছিলেন আওরঙ্গজেব। তাই এবার তার নামানুসারে শহরটির রাখা হয় আওরঙ্গাবাদ। তিনি এ শহরকে বেশ উন্নত করার চেষ্টা করেন। অজন্তা-ইলোরা গুহা খুব কাছে অবস্থিত হলেও এর উপর কোনো মুসলিম শাসক আক্রমণ করেননি। পরে যখন মোগল সাম্রাজ্যের পতন হয়, হায়দরাবাদের নিজামদের হাতে আসে এই শহর। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত সেটা হায়দরাবাদ স্টেটের অধীনে ছিল। তারা অবশ্য কোনো নাম পরিবর্তন করেনি।
সূত্র : পুবের কলম