দ্বিতীয়বার কি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন ট্রাম্প?
ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম। এক মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সময়ই দ্বিতীয়বার ইমপিচমেন্টের মুখে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ইমপিচমেন্ট হলেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তা কিন্তু নয়। দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না, এমনও নয়।
• তাহলে পরিণতি কী?
২০ জানুয়ারি পদ ছাড়ার আগে সিনেট তাকে দোষী সাব্যস্ত করলে অপসারিত হবেন ট্রাম্প। তবে মিশ কনেলের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাদের মতে, ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার আগে সেনেট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না। তাহলে লাভ? সেনেট যদি ট্রাম্পকে এর পর দোষী সাব্যস্ত করে, তাহলে ফের ভোটাভুটির পথে যেতে পারে। আর এই ভোট করিয়ে ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে বসা আটকাতে পারে সিনেট।
• কেন দ্বিতীয় ইমপিচমেন্ট?
৬ জানুয়ারি তার ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে ক্যাপিটলে তাণ্ডব চালায় সমর্থকরা। প্রাণ যায় পাঁচ জনের।
• ভোটের ফল কী?
হাউসে ভোটের ফল ২৩১–১৯৭। ১০ জন রিপাবলিকানও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।
• কেন বিকল্প পথে না গিয়ে ইপমিচমেন্ট?
ইমপিচমেন্ট ছাড়া অন্য বিকল্পও ছিল। ট্রাম্প নিজে ইস্তফা দিতে পারতেন। নয়তো ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেনস এবং ক্যাবিনেটের অর্ধেক সদস্য সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে তাকে সরাতে পারতেন।
কিন্তু পেনস রাজি নন। দাঙ্গায় ট্রাম্পের ভূমিকার সমালোচনা করে ক্যাবিনেটের অনেক সদস্যই ইস্তফা দিয়েছেন। আদতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ এড়িয়ে গিয়েছেন তারা। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৪তম সংশোধনী মেনে ট্রাম্পকে ফের রাষ্ট্রপতি হওয়া থেকেও আটকাতে পারে কংগ্রেস। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট দরকার। আর এই পদক্ষেপকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায়।
• এর পর কী?
ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব সেনেটে যাবে। সেনেটের অধিবেশন ১৯ জানুয়ারির আগে বসবে না। ২০ জানুয়ারি দুপুরে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়বেন ট্রাম্প। তাই তিনি ক্ষমতায় থাকতে এই প্রস্তাব পাস হওয়া প্রায় অসম্ভব।
এর অর্থ, যখন সিনেটে ইমপিচমেন্ট নিয়ে ট্রায়াল চলবে, তখন সেখানে ডেমোক্র্যাটরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। কিন্তু একটি সমস্যাও রয়েছে। এই ট্রায়াল চলার সময় সেনেটের অন্য কাজ বন্ধ রাখতে হবে। সদস্য মনোনয়নের কাজও আটকে যাবে।
• ট্রাম্পের কী হবে?
এই বিষয়ে এখনো স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পরেও তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সিনেটের দুই–তৃতীয়াংশর সমর্থন দরকার। ডেমোক্র্যাটদের সেই সংখ্যা নেই। ১৭ জন রিপাবলিকান সদস্য এক্ষেত্রে সমর্থন করলে তবেই ট্রাম্পের কনভিকশন হবে। তিন জন রিপাবলিকান নেতা এক্ষেত্রে আগ্রাহ দেখিয়েছেন, যা যথেষ্ট নয়।
তাহলে দ্বিতীয়বার যাতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হতে না পারেন, তার জন্য কী দরকার? সংখ্যাগরিষ্ঠত ভোটে তাঁকে পদচ্যুত করতে হবে। দোষী সাব্যস্ত করতে হবে।
রিপাবলিকানদের কারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিলেন?
২০১৯ সালের পর ফের ইমপিচমেন্ট হল ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ক্যাপিটল কাণ্ড তারই উস্কানির ফল, এই অভিযোগে হলো ইমপিচমেন্ট। ২০১৯ সালে ট্রাম্পের সমর্থনে গলা ফাটিয়েছিলেন প্রায় সমস্ত রিপাবলিকান সদস্য, কিন্তু এবার ১০ জন তাঁর বিরুদ্ধে ভোটদান করলেন। এর মধ্যে আছেন বর্ষীয়ান এবং প্রভাবশালী নেতারাও।
লিজ চেনেই : ইমপিচমেন্টের পক্ষে ভোটদাতা রিপাবলিকানদের মধ্যে সবথেকে সিনিয়র ইনিই। জো বাইডেনের জয়ের সিলমোহর দেয়ার বিরুদ্ধে যে আওয়াজ উঠেছিল তার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন লিজ। প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনেইয়ের কন্যাটিকে রিপাবলিকান দলের নতুন তারকা বলে মনে করা হচ্ছে।
অ্যান্থনি গঞ্জালেজ : ওহিওর রিপাবলিকান নেতাটি টুইটারে লেখেন, ‘৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল কাণ্ডের সমস্ত ঘটনাবলি প্রত্যক্ষ করে এবং তা নিয়ে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়াহীন হতে দেখে আমি ইমপিচমেন্টের পক্ষে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’
পিটার মেইজার : মিশিগানের কংগ্রেস সদস্য পিটার জানান তিনি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ইমপিচমেন্টের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সংবিধান অবমাননা করে এবং ক্যাপিটল কাণ্ডে উস্কানি দিয়ে শপথের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন ট্রাম্প, দাবি পিটারের।
ড্যান নিউহাউস : বুধবারই হাউজে দাঁড়িয়ে ইমপিচমেন্টের পক্ষ নেওয়ার কথা জানান ওয়াশিংটনের রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য। তাঁর এই ঘোষণায় ডজনখানেক ডেমোক্র্যাট প্রার্থী তুমুল হাততালি দেন।
অ্যাডাম কিনজিঙ্গার : ড্যান নিউহাউসের মতো একই বক্তব্য ইলিনয়ের রিপাবলিকান নেতার। সেই সঙ্গে বরাবরের ট্রাম্প-সমালোচক হিসেবে পরিচিত তিনি।
জন কাটকো : রিপাবলিকান নেতাদের মধ্যে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের পক্ষে তিনিই সবার আগে ভোট দেওয়ার কথা বলেন।
ফ্রেড আপটন : আপটন বলেন, ভোটচুরি নিয়ে অভিযোগের সপক্ষে কোনও প্রমাণ দাখিল করতে পারেননি ট্রাম্প।
জেইম এরেরা বিউটলার : অতি দক্ষিণপন্থী হিসেবে কখনওই পরিচিত নন ইনি। ক্যাপিটল কাণ্ডের যা প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট হওয়াই উচিত মনে করেন তিনি।
টম রাইস : ট্রাম্প যেখানে প্রবল সমর্থন পান সেই নর্থ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান সদস্য ইনি।
ডেভিড ভালাদাও : গত নভেম্বরেই ডেমোক্র্যাটদের থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার আসনটি পুনর্দখল করেন ডেভিড।
সূত্র : আজকাল