কোন পথে পাকিস্তান-ইসরাইল সম্পর্ক?
কোন পথে পাকিস্তান-ইসরাইল সম্পর্ক? - ছবি সংগৃহীত
ইসরাইলি হাইয়ুম পত্রিকায় নূর দাহারি নামে এক ব্রিটিশ-পাকিস্তানি বিশ্লেষক বলেছেন, পাকিস্তানের উচিত উপসাগরীয় দেশগুলোকে অনুসরণ করা এবং ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। দাহারি যুক্তরাজ্যে অবস্থিত থিওলজি অব কাউন্টার টেররিজমের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী ডাইরেক্টর। বলা হয়েছে, আমিরাত ও বাহরাইন কূটনৈতিক সম্পর্ক করায় বাণিজ্য ও কৌশলগত দিকে ইসরাইলের সাথে কাজ করতে পারছে।
তেলআবিবকে আরব এবং আবুধাবি-দুবাইকে ইসরাইলিদের মুখর পদচারণা চলছে। প্রচার চলছে, সুদান-মরক্কোর পর ওমান-সৌদি আরবও সম্পর্ক স্থাপন করবে। দাহারি আরো জানান, আজ হোক কাল হোক, কাতারও ‘আব্রাহাম চুক্তি’তে অংশ নেবে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের দরজা বন্ধ না হলেও জাতীয় স্বার্থ ইহুদি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক অনুমোদন করে না।’ তিনি দাবি করেন, ‘উভয় দেশের মধ্যে ইন্টেলিজেন্স, সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান এবং পাকিস্তান ইসরাইলকে শত্রু রাষ্ট্র মনে করে না।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এমনও বলেছেন, সারা বিশ্ব ইহুদি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করলেও পাকিস্তান এমনটি করবে না। ‘নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আমরা তাদের সাথেই আছি।’ জনাব খান উর্দু ৯২ নিউজ টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের সমস্যার কোনো সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা উচিত।’
‘টাইমস অব ইসরাইল’ সংবাদপত্রে প্রকাশ, ইমরান খানের এক উপদেষ্টা গত নভেম্বরে ইসরাইল সফর করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা চালান। পাকিস্তান সরকার সফরের বিষয়টি অস্বীকার করেছে, তবে নাম প্রকাশ না করে ইসরাইলি পত্রিকা হাইয়ুম সফরের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। খানের কূটনৈতিক প্রতিনিধি দু’দেশের বিদ্যমান সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। দাবি করা হয়েছে, জনবিরোধিতার কারণে ‘সফট’ ও ‘সেøা’ নীতিতে দুই দেশ অগ্রসর হচ্ছে। দাহরির মতে, তুরস্কের সাথে বেশি সম্পর্কের কারণে পাকিস্তান আরব দেশগুলোতে সম্পর্কের সমস্যায় পড়েছে। গত নভেম্বরে আমিরাত পাকিস্তানিদের ওয়ার্ক ভিসা স্থগিত করেছে, অথচ লাখ লাখ পাকিস্তানি আমিরাতে কাজ করে। এসব কর্মী দেশে বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার পাঠাচ্ছে। সৌদি আরব সম্প্রতি পাকিস্তানকে ঋণ পরিশোধ করতে চাপ দিলে চীন থেকে ধার করে দু’দফায় পাকিস্তান রিয়াদের ঋণ অনেকটা শোধ করেছে। সৌদি আরবে কর্মরত ২০ লাখ পাকিস্তানিকে সে দেশের সরকার দেশে ফেরত পাঠাতে পারে মর্মে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা দিয়েছেন এবং পাকিস্তানের পরিবর্তে ভারতে কয়েক বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প নেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। এ সবই পাকিস্তানের জন্য বড় ধরনের আঘাত। ইরানের সাথে সম্পর্ক এবং তুরস্ক-ইরান-পাকিস্তান রেললাইন প্রকল্পের বিষয়ে আরব বিশ্বের ‘দুই ক্রাউন প্রিন্স’ পাকিস্তানের ওপর খুবই অসন্তুষ্ট।
সামা জুনেজু, যিনি লেসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, পাকিস্তানি পত্রিকা ‘ডেইলি খবর ইনে’র কলামিস্ট হিসেবে লিখেছেন, ‘পাকিস্তানি মিলিটারি সোর্সের সাথে কথা বলেছি। তারা সব অস্বীকার করেছে। আমার নিজস্ব সূত্র জানিয়েছে, একজন পাকিস্তানি উপদেষ্টা তেলআবিব গিয়েছেন লন্ডন হয়ে।’ জানা যাচ্ছে, উভয় দেশের কর্মকর্তারা নাকি গোপনে কয়েক দফা আসা-যাওয়া করেছেন। নওয়াজ শরিফের আমলেও এমন হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এই সূত্রে আরো দাবি করা হয়, পাকিস্তানের আইএসআই ও ইসরাইলের মোসাদের মাঝেও একাধিক বৈঠক হয়েছে, তদুপরি উইকিলিকসও এ বিষয়ে ‘ডকুমেন্ট’ প্রকাশ করেছে। ইসরাইল সতর্কতার সাথে চলছে। ২০১৬ সালে নিউইয়র্কে এক রেস্টুরেন্টে ইমরান খান ডিনারে ছিলেন। ইসরাইলি নেতা নেতানিয়াহু সেখানে ডিনারের পৃথক রিজার্ভেশন ছিলেন। ইমরান খান ডিনারে আছেন জানতে পেরে তিনি সেখানে খাবার খেতে যাননি।
ভারত মনে করে, পাকিস্তান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলে এবং তার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করলে পশ্চিম এশিয়ায় এর কোনো প্রভাব পড়বে না, বরং কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে। ভারতীয় মিডিয়া দ্য প্রিন্ট এ বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এটাকে অলাভজনক বলে মন্তব্য করেছে। তেলআবিবের সাথে সম্পর্কের গ্রাউন্ড ওয়ার্ক পাকিস্তান শুরু করছে বলে আওয়াজ উঠলেও পাকিস্তান ফিলিস্তিন এবং কাশ্মির প্রশ্নে কোনো ফোরামে ছাড় দিতে নারাজ। মিডল ইস্ট আইতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে জানা যায়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ায় বলেছেন, ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান ও সম্পর্ক করতে পাকিস্তানের ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে।’ এই চাপটি আসছে কোন উৎস থেকে? অবশ্যই ওয়াশিংটন। সৌদি আরব সরাসরি ওয়াশিংটনের পক্ষে এই ‘চাপ দিচ্ছে’ বলে জানা যায়। ২০০২ সালের আরব শান্তি পরিকল্পনার বিধি-নিষেধের কারণে সৌদি আরব নিজে এই মুহূর্তে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক ‘অফিশিয়ালি’ স্বাভাবিক করতে পারছে না।
ভারত মনে করে, ইসরাইলের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক স্থাপন করা এত সোজা ব্যাপার নয়। ২০০৫ সালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ কাসুরি ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলভান সালুমের সাথে উচ্চপর্যায়ে গোপন মতবিনিময় করেছিলেন। সেটিই উভয় দেশের মধ্যে প্রথম ‘ঐতিহাসিক’ বৈঠক। ২০১৮ সালে ব্যবসায়ী জেট তেলআবিব থেকে ইসলামাবাদে আসেন। নেতানিয়াহুর প্রথম ওমান সফরের আগের দিন এই ঘটনা ঘটলেও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে। নেতানিয়াহুর এই ওমান সফর ছিল গত ২০ বছরে প্রথম।
সরকারি সূত্রে জানা যায়, পাকিস্তান ওয়াশিংটন থেকে ভীষণ চাপ পাচ্ছে, বিশেষ করে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে। তিনি চান বিদায়ের আগেই পাকিস্তানকে ‘আব্রাহাম চুক্তি’র আওতায় নিয়ে আসতে। সৌদি আরব ও আমিরাতে সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তালমিজ আহমদ জানান, পাকিস্তানের ওপর ট্রাম্প প্রশাসন ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বড় চাপ রয়েছে। আহমদ বলেন, ‘ট্রাম্প ইসরাইলের সাথে কয়েকটি আরব ও মুসলিম দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্রত নিয়ে কাজ করছেন এবং তিনি সেটি করে ইতিহাসে স্বাক্ষর রেখে যেতে চান। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী ও প্রো-ইসরাইল লবিকে রাজনৈতিক কারণে সমর্থন দিতে চাচ্ছেন।’
ভারত মনে করে, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন কাশ্মির প্রশ্নে কোনো ফল দেবে না। যদি এই স্বীকৃতি আগেভাগেই না হয় তবে জো বাইডেন ক্ষমতায় এলে তা স্থগিত বা দেরি হয়ে যেতে পারে। বাইডেন প্রশাসন ইসরাইল ও সৌদি আরবের সব কিছু হুবহু অনুমোদন দেবে, এমন কথা বলা যায় না। তা ছাড়া পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ইসলামপন্থীরা ইসরাইলের সাথে সম্পর্ককে ভালোভাবে নেবে না। এতে ইমরান খানের রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হবে এবং দেশে প্রচণ্ড জনরোষ সৃষ্টি হবে যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। পাকিস্তানি ও আফগান তালেবানরা সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করতে পারে। তখন সেনাবাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন হবে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য। ওয়াশিংটনস্থ উইলসন সেন্টারের ডেপুটি ডাইরেক্টর মাইকেল কুগেলমেন এই মত সমর্থন করেন। কুগেলমেন বলেন, ‘পাকিস্তান বহু বছর ধরে ফিলিস্তিন ও কাশ্মির ইস্যুর ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক করলে এই ইমেজ ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।’
আরব আমিরাতও পাকিস্তানের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। কেননা, আব্রাহাম চুক্তিতে আমিরাতই প্রথম স্বাক্ষর করেছে। আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান গত বছর জানুয়ারিতে ইসলামাবাদ সফরে এলে আলোচনার টেবিলে ‘সম্পর্কের’ বিষয়টি ওঠান। গত নভেম্বর মাসে পাকিস্তান বিজনেস জেট, যেটি শুধু সেনাবাহিনীর গোপন সফর ও মিটিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হয় সেটি ‘বিশেষজ্ঞ’ নিয়ে আম্মানে যায় এবং ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছে। ইসরাইলি হারেৎজ পত্রিকার সম্পাদক, আভি সর্ফ, আর ঝপযধৎভ, টুইটে বিষয়টি জানান। প্রখ্যাত পাকিস্তানি কলামিস্ট আয়শা সিদ্দিকী বলেন, ‘কোনো কাজ না থাকলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিমান পিএ-৯৮৩৪ আম্মানে দুই দিন ধরে কী করছিল?’
পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক করলে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থীদের সুনজরে আসবে। যদি বাইডেন তালেবানের বিষয়ে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা ও চরমপন্থীদের নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই পদক্ষেপ তখন কাজ দিতে পারে। এফএটিএফ, ফিনানশিয়েল অ্যাকশান টাস্কফোর্স বিষয়েও পাকিস্তানকে তা সুবিধা এনে দেবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
গত ডিসেম্বরে পাকিস্তান ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে- এমন একটি কথা ছড়িয়ে পড়লে পাকিস্তানে ইসলামপন্থীসহ বিভিন্ন সংগঠন রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করে। পররাষ্ট্র দফতর বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। সরকারিভাবে অস্বীকার করা হলেও মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা মনে করছেন, ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’। পাকিস্তান-ইসরাইল সম্পর্ক হলে তা অবশ্যই ইতিহাস সৃষ্টি করবে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের হঠিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলে পাকিস্তান তাকে স্বীকৃতি দেয়নি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, আরব উপদ্বীপে একটি পরিবর্তন এসেছে; তার ঢেউ আরো কিছু দেশে আছড়ে পড়বে।
পাকিস্তানে এমন কোনো ঢেউ আছড়ে পড়লে দেশে উত্তাল-বিক্ষোভ শুরু হবে। পাকিস্তান মুসলিম লিগের মুসাদ্দিক মালিক বলেছেন, এমন একটি বিষয় কয়েকজন চিন্তা না করে বৃহত্তর পর্যায়ে এবং ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিসহ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। পার্লামেন্টে বিষয়টি আলোচনা করা যেতে পারে। তবে এটি ঠিক যে, এই সিদ্ধান্ত পার্লামেন্টে আসবে না এবং বিদেশী চাপ এমপিদের চাইতে প্রধানমন্ত্রীর ওপরই আপতিত হবে সর্বাধিক।
সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের সময়ও পর্দার আড়ালে ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল। তবে তা বাস্তব রূপ লাভ করেনি। অনেক পাকিস্তানি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করছেন, যখন আরবরা তাদের শত্রুর সাথে বোঝাপড়া করে শান্তিতে থাকতে চায়, তখন অনারবরা কেন ইসরাইলবিরোধী ভূমিকা নেবে, তা ভেবে দেখার বিষয়।
ইসরাইলি মিডিয়া প্রকাশ করে দেয়, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও মোসাদ প্রধান ইউসি কোহেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে সৌদি নিওম সিটিতে, যা আন্তর্জাতিক সেরা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে, সেখানে, ‘রে মিটিং’ করেন। বিষয়টি ছিল পাকিস্তানকে ‘লাইনে আনা’।
পাকিস্তান ফরেন রিজার্ভ ও আর্থিক সঙ্কটের সময় সৌদি আরব ও আমিরাতের ওপর নির্ভরশীল। এই সুযোগ দুই দেশ কাজে লাগাতে চায়। এর অর্থ এই নয় যে, পাকিস্তানকে বিপদে ফেলা বা সম্পর্ক ছিন্ন করা। সৌদি আরব ও আমিরাতে কর্মরত পাকিস্তানি ৪০ লাখ নাগরিক ফি বছর চার বিলিয়ন ডলার দেশে প্রেরণ করে যা পাকিস্তানের ৯ বিলিয়ন রেমিট্যান্সের প্রায় অর্ধেক। তাই পাকিস্তানের পক্ষে এই দুটি দেশের সাথে বৈরিতায় অবতীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়। গত আগস্টে পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদকোরেশি কাশ্মির ইস্যুতে ওআইসি সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করেন ও সৌদি আরবকে ‘নেতৃসুলভ আচরণের’ আহ্বান জানান। তার এই মন্তব্যে সৌদি প্রিন্স বিন সালমান অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়াদের আগেই তিন বিলিয়ন ডলার লোনের দুই বিলিয়ন তাড়াতাড়ি ফেরত দিতে বলেন। পাকিস্তান চীন থেকে দুই কিস্তিতে হাওলাত করে দুই বিলিয়ন ফেরত দেয়। মেজাজি প্রিন্স বাকিতে ৩.২ বিলিয়ন ডলারের তেল বিক্রির চুক্তিও বাতিল করে দেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া রিয়াদ সফরে গেলে ক্রাউন প্রিন্স সাক্ষাৎ দেননি।
বলা হচ্ছে, ইসরাইলের সাথে পাকিস্তানের গোপন সামরিক সম্পর্ক রয়েছে সেই ১৯৭০ থেকে যখন জিয়াউল হক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে জর্দানে পোস্টিং পান এবং ১৯৭০-৭১ সালে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর ওয়্যারে জর্দানের পক্ষে অংশ নেন। ওই যুদ্ধে সাত হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং জেনারেল জিয়া ‘ইহুদি রাষ্ট্রের ডার্লিং’ আখ্যায়িত হন। পাকিস্তান-ইসরাইল সহযোগিতা ১৯৮০ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে; তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ চালায়। আফগান যুদ্ধের সময় ইসরাইল ও পাকিস্তান ডিফেন্স তথ্যাদি বিনিময় করেছে।
জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সময় ইসরাইলের সাথে গোপন সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। তার আমলে উভয় দেশ প্রথম কূটনৈতিক আলোচনার সূত্রপাত করে। কূটনৈতিক কর্তারা আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলে প্রতিরক্ষা ও টেররিজম সম্পর্কিত তথ্যাদি আলোচনা করতেন।
২০০৯ সালে আইএসআই মোসাদকে এক তথ্য সরবরাহ করে যেখানে ভারতে কিছু ইসরাইলিকে হত্যার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কেবলে তথ্যটি স্থান পেলে সেখান থেকে উইকিলিকস তথ্যটি পাচার করে জনসমক্ষে নিয়ে আসে। ২০২০ সালের মার্চে পারভেজ মোশাররফ ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তার মতে তেলআবিব-দিল্লি সম্পর্ককে কাউন্টার দেয়ার জন্য ইসরাইলের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা দরকার। দুবাইতে গত মার্চে এক প্রেস কনফারেন্সে মোশাররফ স্বীকার করেন যে, তিনি ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ‘ইসরাইলিরা আমার ডাকে দ্রুত সাড়া দিয়েছিল। আমি বিশ্বাস করি, ইসরাইল পাকিস্তানের সাথে আরো ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী।’
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব বাংলাদেশ সরকার