সিগন্যালের চেয়ারম্যান কে এই ব্রায়ান অ্যাকটন?
ব্রায়ান অ্যাকটন - ছবি : সংগৃহীত
গত ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাইভেসি পলিসিতে বদল আনার পর থেকেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের একাংশের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। আর রক্ষা হবে না গোপনীয়তা, এই ভয়ে শুরু হয়েছে টুইটার অ্যাকাউন্ট ডিলিট। এমতাবস্থায় বিকল্প মেসিজিং অ্যাপ হিসেবে উঠে এসেছে ‘সিগন্যাল’।নতুন করে ইতিমধ্যেই কয়েক লাখ মানুষ নতুন অ্যাপটি ব্যবহার শুরু করেছেন। জানেন কি, সিগন্যালের প্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন হোয়াটসঅ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা?
১৯৭২ সালে আমেরিকার মিশিগানে জন্ম নেন ব্রায়ান অ্যাকটন। ১৯৯৪-তে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে স্নাতক হন তিনি। বর্তমানে সিগন্যালের এগজিকিউটিভ চেয়ারম্যান অ্যাকশন ২০১৮ সালে মক্সি মার্লিনস্পাইকের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সিগন্যাল অ্যাপের। এই ব্রায়ানই জান বোকুমের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপও প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৪ সালে ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকারবার্গকে ১৯ বিলিয়ন ডলারে হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করে দেন। এরপর হোয়াটসঅ্যাপের মানিটাইজেশন নিয়ে ফেসবুকের সঙ্গে বনিবনা না হলে হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন অ্যাকশন।
এর আগে ইয়াহু-তে কাজ করার সময় জান বোকুমের সঙ্গে পরিচয় হয় অ্যাকটনের। প্রোডাক্ট পরীক্ষক হিসেবে অ্যাপল এবং অ্যাডোবেও কাজ করেছেন তিনি। হোয়াটসঅ্যাপ শুরু করার আগে টুইটার এবং ফেসবুকের মতো বড় সংস্থার চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অ্যাকশন। অবশেষে এখন সিগন্যালের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন, সিগন্যাল সম্পূর্ণভাবে অলাভজনক সংস্থা। এর উন্নতির অর্থ আসে অনুদানের মাধ্যমে। তিনি এও জানিয়েছেন, কোনো বড় টেক-সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া নেই সিগন্যালের।
টেলিগ্রামের–সিগন্যালের, টাকা ঢালতে চান পুঁজিপতিরাও
এতটা প্রত্যাঘাত হয়ত আশা করেনি হোয়াটস্অ্যাপ! সুরক্ষা সংক্রান্ত নীতি বদলে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাওয়ায় নেটাগরিকদের একটা বড় অংশ ভীষণ চটেছে ফেসবুকের মালিকানাধীন ম্যাসেজিং অ্যাপটির ওপর। সেই সুযোগই কাজে লাগাতে চাইছে এলন মাস্কের ‘সিগন্যাল’ এবং ‘টেলিগ্রাম’ ম্যাসেজিং অ্যাপ। ইতিমধ্যেই টেলিগ্রামের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ কোটি ছাড়িয়েছে। গত ৭২ ঘন্টায় আড়াই কোটির বেশি ব্যবহারকারী টেলিগ্রাম ব্যবহার করা শুরু করেছেন, হিসেব দিয়ে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে সিগন্যাল সংস্থার সহ–প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান অ্যাকটন জানান, ‘যা ভেবেছিলাম, ভারতের বাজারে সিগন্যালের জনপ্রিয়তা তার চেয়ে অনেক বেশি এখন। বিগত কয়েক দিনে ব্যবহারকারীর সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, কর্মীদের রাতের ঘুম উড়েছে!’
নীতিগত বদল এনে গত ৮ জানু্য়ারি হোয়াটস্অ্যাপের তরফে জানানো হয়, নয়া নীতিতে ব্যবহারকারীরা একমত না হলে এই ম্যাসেজিং অ্যাপটি তারা আর ব্যবহার করতে পারবেন না। খবর ততক্ষণে দাবানলের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটাগরিকদের অভিযোগ, ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর, লোকেশন, অনলাইন কেনাকাটা এবং ব্যাঙ্কিং লেনদেন সংক্রান্ত ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তা ফেসবুকের হাতে তুলে দেবে হোয়াটস্অ্যাপ। ম্যাসেজিং অ্যাপ সংস্থার তরফে এই অভিযোগ খারিজ করা হলেও ততক্ষণে যা ঘটার ঘটে গেছে।
২০০৯ সালে জ্যান কৌমের সঙ্গে যৌথভাবে ‘হোয়াটস্অ্যাপ’ ম্যাসেজিং অ্যাপ তৈরি করেছিলেন অ্যাক্টন। পরে ফেসবুকের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আপত্তি প্রকাশ করে ইস্তফা দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘ফেসবুকের নতুন নীতি অত্যন্ত জটিল। সাধারণ মানুষের পক্ষে তা বোঝা সম্ভব নয়। কেন এই নীতি বদল, উদ্দেশ্যই বা কী, অনেকেই তা বুঝতে পারছেন না। ম্যাসেজিং অ্যাপে ব্যবহারকারীরা শুধুমাত্র কথাবার্তা নিয়ে ভাবেন। সহজ এবং সোজাসাপ্টা নিয়ম পছন্দ করেন তারা। সিগন্যাল সেরকম পরিষেবাই দিয়ে থাকে। কোনো বিজ্ঞাপন নেই। নজরদারি নেই। ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত এখানে।’
ভারতের বাজারে শুধু সিগন্যাল ব্যবহারকারীর সংখ্যাই বাড়েনি, নজর কেড়েছে বিনিয়োগকারীদেরও। ইতিমধ্যেই উৎসাহ দেখিয়েছেন পেটিএম প্রতিষ্ঠাতা বিজয়শেখর শর্মা এবং মাহিন্দ্রা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান আনন্দ মাহিন্দ্রা।
সূত্র : আজকাল