মহব্বত আলীর চুইঝালের চারা বিপ্লব
ছবি : অন্য এক দিগন্ত - ছবি : সংগৃহীত
নাম চুইঝাল হলেও তা ঝাল বা লঙ্কা নয়। কিন্তু স্বাদে ও গুণে তা অতুলনীয়। রান্নায় স্বাদ বাড়াতে যার জুড়ি মেলা ভার। খুলনা অঞ্চলে অনেকে চুইঝাল ছাড়া গরুর গোশতের স্বাদই নেন না। অনেকে বাইরে থেকে খুলনায় এসে চুই দিয়ে রান্না গরুর গোশত খেয়ে স্মৃতিতে ধরে রাখেন অনেক দিন।
স্থানীয়রা জানান, চুইঝাল মসলা জাতীয় ফসল। এর কাণ্ড, শিকড় ও শাখা সবই মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বড় মাছ বা যেকোনো গোশতের সাথে চুইয়ের ব্যবহার অতুলনীয়। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান এবং ঈদ বা অন্য কোনো উৎসবে চুইঝালের কদর অনেকগুণ বেড়ে যায়। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল ও যশোর এলাকায় চুইঝাল মসলা হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু বংশবৃদ্ধির নানা জটিলতার কারণে এর বাণিজ্যিক আবাদ ছিল অনেকটা কঠিন। অবশেষে চুইঝালের বাণিজ্যিক আবাদে সফলদের খাতায় নাম লিখিয়েছেন খুলনার রূপসা উপজেলার আলাইপুর গ্রামের কৃষক মহব্বত আলী শেখ। বসতবাড়ির আঙ্গিনায় চুইঝালের চারা (কাটিং) উৎপাদন করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি।
মহব্বত আলী শেখ জানান, গত বছর মহামারী করোনাভাইরাসের আতঙ্কে হতাশার জীবন নিয়ে বাড়িতে কর্মহীন সময় কাটছিল তার। একপর্যায়ে তিনি কৃষি অফিস থেকে চুইঝাল চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর এর কাটিং থেকে চারা উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হন। তারপর বাজার থেকে চুইঝালের লতা সংগ্রহ করে এর কাটিং (দুটি গিঁটসহ) জৈব সার ও মাটির মিশ্রণে তৈরি ছোট পলিব্যাগে রোপণ করেন। ধীরে ধীরে সবুজ পাতা বের হয়ে ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে চুই চারা।
মহব্বত আলী আরো জানান, বসতবাড়ির আঙিনায় মোট চার শতক জমিতে শেডের নিচে পলিব্যাগে তিনি প্রায় আড়াই হাজার চুইঝালের চারা উৎপাদন করেছেন। লতা ও পলিব্যাগ কেনা, জৈব সার ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এতে প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পলিব্যাগে কাটিং রোপণের দুই থেকে আড়াইমাস পর থেকে তিনি চুইঝালের চারা বিক্রি শুরু করেছেন। প্রতিটি চারা ৪০ টাকা হিসেবে এ পর্যন্ত আড়াই শ’ চারা ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। আরো প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলেও মনে করছেন তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরিদুজ্জামান চুই উৎপাদনে সার্বিক সহযোগিতা করছেন বলেও জানান মহব্বত আলী।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চুইঝালে ০.৭ ভাগ সুগন্ধি তেল রয়েছে। অ্যালকালয়েড ও পিপালারটিন আছে ৫ শতাংশ। কাণ্ড, পাতা, শিকড়, ফুল ও ফল ঔষধী গুণসম্পন্ন। খাবারের রুচি বাড়াতে ও ক্ষুধা মন্দা দূর করতে চুইঝাল কার্যকর ভূমিকা রাখে। প্রতি কেজি চুই বর্তমানে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখন চুই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরিদুজ্জামান বলেন, মহব্বত আলীকে চুইঝালের চারা উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক খেকে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলাইপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রহমান তার পাশে থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন। চুইঝালের চারা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে মহব্বত আলীর কাছ থেকে কিছ ুচারা কিনে নিয়ে আগ্রহী কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে বলে তিনি জানান। এরশাদ আলী খুলনা ব্যুরো