আমাদের রক্তনালীর বিস্ময়কর ব্যবস্থা
আমাদের রক্তনালীর বিস্ময়কর ব্যবস্থা - ছবি সংগৃহীত
বিজ্ঞান যতই এগিয়ে যাচ্ছে, সীমাহীন মহাবিশ্বের কোটি কোটি গ্রহ-নক্ষত্র থেকে শুরু করে আমাদের শরীরে কোষ (শরীরের ক্ষুদ্রতম ইউনিট বা অংশ) পর্যন্ত সব কিছুতে মহান সৃষ্টিকর্তার অসীম জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
‘তোমাদের সৃষ্টি কি অধিক শক্ত ও কঠিন কাজ কিংবা আসমান সৃষ্টি? আল্লাহই তো তা নির্মাণ করেছেন। এর ছাদ অনেক উচ্চে তুলেছেন, অতঃপর তাতে ভারসাম্য স্থাপন করেছেন।’ (সূরা আন নাজিয়াত ২৭-২৮) মহান আল্লাহর কাছে মানুষ সৃষ্টি করা কঠিন কাজ নয়। এদিকে বিজ্ঞানীরা মানুষের মধ্যে অনেক জটিল জিনিসের সন্ধান পাচ্ছেন। আমাদের শরীরে প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন (কোটিতে হিসাব করা কঠিন) কোষ রয়েছে। আমাদের শরীরে অনেক কোষ রয়েছে যেগুলো ৩৫ হাজার প্রোটিন তৈরি করতে পারে। প্রোটিন, ডিএনএ, আরএনএ, জিন, ক্রোমোসমসহ প্রত্যেকটি জিনিসকে সূক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে প্রোগ্রামিং বা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
‘বলুন (হে মুহাম্মদ), সমুদ্রগুলো যদি আমার সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালকের কথাসমূহ লেখার জন্য কালি হয়ে যায় তাহলে তা ফুরিয়ে যাবে; কিন্তু আমার সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালকের কথা লেখা শেষ হবে না, এ পরিমাণ কালি যদি আমরা এনে নিই তবে তাও যথেষ্ট হবে না’ (সূরা আল কাহফ : ১০৯)। একবিংশ শতাব্দীর জ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তি মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিরহস্যকে আরো বেশি উন্মোচিত করছে। শুধু মানুষের হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালীর ওপর গবেষণা ও চিকিৎসার জন্য সারা পৃথিবীতে শত শত প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে হাজার হাজার চিকিৎসক ও গবেষক কাজ করে যাচ্ছেন। আজকের আলোচনায় মানুষের শরীরের রক্তনালীর অপূর্ব বৈশিষ্ট্যের ওপর আলোকপাত করছি।
আমাদের প্রত্যেকের শরীরের রক্তনালীর মোট দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৬০ হাজার মাইল যা দিয়ে পৃথিবীকে দুইবার পেঁচানো সম্ভব। আমাদের শরীরে প্রধানত তিন ধরনের রক্তনালী রয়েছে ধমনী, শিরা এবং কৈশিক। এই রক্তনালীগুলো হৃৎপিণ্ডের সাথে দুই ধরনের Circuit বা সংযোগ তৈরি করে : ১. Pulmonary circuit যার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের ডান পাশের দূষিত রক্ত ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে গিয়ে বিশুদ্ধ হয় এবং বিশুদ্ধ রক্ত শিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের বাম পাশে ফিরে আসে। ২. systemic circuit : এর মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের বাম পাশ থেকে বিশুদ্ধ রক্ত ধমনীর মাধ্যমে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং দূষিত রক্ত শিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের ডান পাশে ফিরে আসে।
হৃৎপিণ্ড থেকে যে রক্তনালী প্রথম বের হয় তার নাম মহাধমনী যা প্রায় এক ইঞ্চি প্রশস্ত। এর তিনটি স্তর রয়েছে। এর ‘ইলাস্টিক ফাইবার’ খুব সুসংগঠিত।। এই ফাইবার যদি না থাকত তাহলে উচ্চরক্তচাপে, মহাধমনী ফেটে যেত। এর মধ্যম স্তরে অবস্থিত মসৃণ পেশী-এর সঙ্কোচন ও প্রসারের মাধ্যমে রক্ত সরবরাহ নিয়ন্ত্রিত হয়। ধমনীর সবচেয়ে ভেতরের স্তর মোজাইকের মতো, বেশ মসৃণ ও পিচ্ছিল যা রক্ত চলাচলে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ধমনীর ইলাস্টিসিটির কারণে নিরবচ্ছিন্নভাবে রক্তপ্রবাহ সম্ভব হয়। আমাদের শরীরের বেশির ভাগ ধমনী হাতের, পায়ের এবং শরীরের গভীর অংশে থাকে।
ফলে এগুলো সহজে আঘাতপ্রাপ্ত হয় না। ধমনীর রক্তচাপ বেশি হওয়াতে এর থেকে রক্তক্ষরণ হলে বিপজ্জনক হতে পারে। তবে এ রক্তনালীগুলো শরীরে কিছু কিছু জায়গায় চামড়ার নিচেই থাকে। যেমন কব্জি, কনুই, গলা, কুঁচকি, পা ইত্যাদি। এই অবস্থা ডাক্তারদের কাছে বেশ কিছু রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। যেমন হাতের নাড়ি (চঁষংব) দেখে হৃৎপিণ্ডের বেশ কিছু সমস্যা নির্ণয় করা যায়। নবম শতাব্দীর জগদ্বিখ্যাত চিকিৎসক ইবনে সিনা তার কানুন ফিত তিব বা ‘চিকিৎসার নিয়মাবলি’ বইয়ে নাড়ির ১০টি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। যখন ইসিজি বা আধুনিক যন্ত্রপাতি ছিল না, তখন এই নাড়ির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে তিনি বেশ কিছু রোগ নির্ণয় করতেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, তার এই বই প্রায় ৪০০ বছর ইউরোপে প্রধান পাঠ্যবই ছিল। Dr William 0sler-এর ভাষায় 'The Qanun has remained a medical Bible for a longer period than anyother work' অর্থাৎ- অন্য যেকেনো বইয়ের তুলনায় ‘কানুন’ দীর্ঘতর সময় মেডিক্যাল বাইবেলরূপে বিবেচিত হয়েছে। ধমনী প্রসঙ্গে ফিরে আসি। কব্জি ও কুচকির ধমনী চামড়ার নিচে থাকায় এনজিওগ্রাম, রিং বসানো ও অন্যান্য চিকিৎসা সুবিধাজনক হয়েছে। এগুলো শরীরের গভীর অংশে থাকলে উল্লিখিত চিকিৎসার পর ধমনীর রক্ত বন্ধ করা কঠিন হয়ে যেত। অর্থাৎ হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসার বিস্তার ঘটত না।
ধমনী (অৎঃবৎু) ক্রমশ সরু হয়ে আর্টেরিওল-এ পরিণত হয়। ধমনী ও শিরার মাঝে কৈশিক- এর অবস্থান। আর্টেরিওলে মাংসপেশির শক্তিশালী স্তর থাকে যা ভালভ হিসেবে কাজ করে এবং নরম কৈশিকগুলোকে উচ্চরক্তচাপ থেকে সুরক্ষা দেয়।
‘কৈশিক’ হচ্ছে আমাদের শরীরের সবচেয়ে ক্ষুদ্র রক্তনালী যা আমাদের চুলের চেয়েও সরু। এর মধ্য দিয়ে রক্তের শুধু লোহিতকণিকা (অক্সিজেন সরবরাহকারী) এক লাইনে অতিক্রম করতে পারে। আমাদের শরীরে ১০ বিলিয়ন (এক শ’ কোটি) কৈশিক রয়েছে। মস্তিষ্কে যে কৈশিক রয়েছে তার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০৩ মাইল।
প্রিয় পাঠক, এই তথ্যগুলো কি খুব আজব মনে হচ্ছে? মহান সৃষ্টিকর্তা বলেছেন : ‘আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টি হচ্ছে মানুষ সৃষ্টির চেয়ে বড়। অথচ বেশির ভাগ মানুষ তা জানে না।’ (সূরা আল গাফির : ৫৭)
উল্লেখ্য, বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করে এই সীমাহীন মহাবিশ্বের কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্রের মাত্র ২০ শতাংশ সম্বন্ধে ধারণা করতে পেরেছেন। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, মানুষের তুলনায় এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি কত বিশাল ও জটিল।
এই কৈশিকগুলোতে আবার গেট বা দরজা আছে যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রয়োজনীয় বস্তু আমাদের দেহের কোষে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের জন্য গেটের প্রয়োজন হয় না। তারা সরাসরি কৈশিকগুলোর প্রাচীর (Capillary wall) দিয়ে প্রবেশ ও বের হতে পারে। এ জন্য অক্সিজেন ধমনী থেকে কোষে পৌঁছাতে মাত্র ১০ সেকেন্ড সময় লাগে। আর শারীরিক পরিশ্রম করলে কোষে অক্সিজেন পৌঁছে মাত্র দুই-তিন সেকেন্ডে। লোহিতকণিকা দৈনিক এক হাজারবার আমাদের কোষের কাছে এসে হাজির হয় কোনো বিশ্রাম ছাড়াই।
হৃৎপিণ্ড থেকে রক্তের যে পথচলা শুরু হয়, তার ফিরতি যাত্রা শুরু হয় শিরার মাধ্যমে। মোটা শিরাগুলো পেন্সিলের মতো প্রশস্ত। এর প্রাচীর ধমনীর তুলনায় পাতলা, এর ভেতর রক্তচাপ খুব কম। আমাদের হাতে-পায়ে যে রক্তনালীগুলো দেখা যায় এগুলোই হচ্ছে শিরা। শরীরে কোনো আঘাত পেলে ও রক্তক্ষরণ হলে এ রক্তনালীগুলোই প্রধানত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এর মধ্যে রক্তচাপ ও রক্তের গতি কম থাকাতে রক্তক্ষরণ সহজে বন্ধ হয়ে যায়।
শিরার ভেতরে ভাল্ব আছে যা শুধু হৃৎপিণ্ডের দিকে রক্ত প্রবাহে সহায়তা করে থাকে। হৃৎপিণ্ড থেকে শিরাগুলো দূরে অবস্থান করায় এটা তার থেকে কোনো সহায়তা পায় না। তাই হাতের, পায়ের ও বক্ষপিঞ্জরের মাংসপেশী তাকে এ কাজে সহায়তা করে থাকে। ধমনীতে কোনো ভাল্ব নেই। কারণ হৃৎপিণ্ডের প্রেসারই তার জন্য যথেষ্ট। ধমনী ও শিরার রক্তচাপের মধ্যে অনেক পার্থক্য। শিরার সংখ্যা ও প্রশস্ততা ধমনীর তুলনায় বাড়ানো হয়েছে, ফলে রক্ত চলাচলে কোনো জট সৃষ্টি হয় না।। আমাদের শরীরে ৬৪ শতাংশ রক্ত শিরাগুলোতে থাকে। জরুরি প্রয়োজনে শিরার এই রিজার্ভ থেকে রক্ত সরবরাহ করা হয়। এ জন্য হঠাৎ করে শরীর থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত রক্তক্ষরণ হলেও মানুষ বেঁচে থাকতে পারে।। মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ সবসময় ঠিক রাখতে হয়। শরীরে কোথাও রক্তক্ষরণ হলে অনেক অঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমে যায়, কিন্তু মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ ঠিক থাকে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পরিবেশে মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি হতে পারে। তাই হাতের ও পায়ের রক্তনালী সঙ্কুচিত হয়।
তাতে মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ড ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পায়। শীতে রক্তনালীর অতিরিক্ত সঙ্কোচনের কারণে হাত ও পায়ের আঙুলের ক্ষতি হতে পারে, তবুও জীবন রক্ষা পায়। শীতে শরীর বেশি ঠাণ্ডা হলে রক্তনালী সঙ্কুচিত হয়, মস্তিষ্ক বার্তা পাঠায়, তখন কাঁপুনি শুরু হয় এবং শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত গরমে রক্তনালীগুলো সম্প্রসারিত হয়, ঘাম উৎপন্ন হয়, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। বিশ্রামের সময় মাংসপেশীর রক্তসরবরাহ অনেক কমে যায়। আবার খাদ্য গ্রহণের পর খাদ্যনালীর রক্ত সরবরাহ অনেক বেড়ে যায়। আমাদের শরীরের রক্তনালীগুলো, বিশেষ করে কৈশিকগুলো প্রয়োজনমতো খোলে ও বন্ধ হয়। যদি কৈশিকগুলো একই সময়ে সব খোলা থাকত, তাহলে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেত। দীর্ঘক্ষণ এ অবস্থা বিরাজ করলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতো। মানুষ অতিরিক্ত ভয় বা দুঃখ পেলে রক্তনালীগুলো সম্প্রসারিত হয়, তাতে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ কমে যায়। ফলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। শায়িত থাকার কারণে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ পুনঃস্থাপিত হয়, জ্ঞান ফিরে আসে। ততক্ষণে ভয় অনেক কমে যায়। এভাবেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, শরীরের যেকোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো রক্তনালীগুলোকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রোগ্রামিং দৈবক্রমে হয় না। এতে একজন প্রোগ্রামারের দরকার। আর তিনি হচ্ছেন মহান ‘আল্লাহ তায়ালা’। একবিশ শতাব্দীর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি যেখানে আমাদের শরীরের একটি কোষ তৈরি করতে পারে না, সেখানে দৈবক্রমে সবকিছু হয়েছে; তা বিবেকবুদ্ধির অগম্য।
‘হে লোকেরা! একটি দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে। মনোযোগ সহকারে শোন। আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব উপাস্যকে তোমরা ডাকো, তারা সকলে মিলে একটি মাছি পয়দা করতে চাইলেও তা পারবে না এবং মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোনো জিনিস কেড়ে নিয়ে যায়, তবে এরা তা ছাড়িয়েও নিতে পারবে না। সাহায্যপ্রার্থীরাও দুর্বল; আর যাদের কাছে সাহায্য চাওয়া হচ্ছে, তারাও দুর্বল।’ (সূরা হজ : ৭৩)
আসলে যারা ‘দৈবক্রমে সবকিছু হয়েছে’ বলে বিশ্বাস করেন তারা মহান স্রষ্টাকে শুধু নয়, গণিতকেও অস্বীকার করেন। ধরুন এক থেকে ২০ লিখে আপনি ২০টি কাগজ আপনার পকেটে রাখলেন। এখন ক্রমান্বয়ে এক থেকে ২০ নম্বর কাগজ বের করতে চাইলে এর সম্ভাবনা কতটুকু? অঙ্ক করলে দেখা যাবে, তা হবে অনেক কোটি ভাগের এক ভাগ। তাহলে আমাদের দেহের আজব রক্তনালীগুলোসহ সব কিছু দৈবক্রমে সৃষ্টির সম্ভাবনা কতটুকু?
এখানে রক্তনালী সম্বন্ধে যে আলোচনা করলাম তা কয়েক হাজার বছর ধরে মানুষের চিন্তা ও গবেষণার ফসল। এর একক কৃতিত্ব ইউরোপ বা কোনো জাতির নয়। ইতঃপূর্বে চিকিৎসাবিদ্যায় ইবনে সিনার অবদানের কথা বলা হয়েছে। গ্যালেনসহ গ্রিক চিকিৎসকরা মনে করতেন, ধমনীর রক্ত (বিশুদ্ধ রক্ত) হৃৎপিণ্ড থেকে উৎপন্ন এবং শিরার রক্ত (দূষিত রক্ত) লিভার বা যকৃৎ থেকে তৈরি হয়। এই হৃৎপিণ্ডের মধ্যে অদৃশ্য ছিদ্র আছে যার মাধ্যমে দুই রক্ত প্রবাহের মধ্যে সংযোগ হয়ে থাকে। এই থিওরি প্রায় দুই হাজার বছর ধরে চিকিৎসা জগতে প্রচলিত ছিল। তের শ’ শতাব্দীর আরব বিজ্ঞানী ইবনে নাফিস প্রথম Pulmonary circulation বা হার্টের সাথে ফুসফুসের রক্তনালীর সংযোগের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। তার হস্তলিখিত কপি বার্লিনের রাষ্ট্রীয় লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে। ইবনে সিনার ধারণা ছিল, হৃৎপিণ্ডের ডান পাশের রক্ত থেকে হৃদপিণ্ডের রক্ত সরবরাহ হয়ে থাকে। ইবনে নাফিস এই ধারণারও বিরোধিতা করে লেখেন যে, হৃৎপিণ্ডের রক্ত সরবরাহ এর মধ্যে অবস্থিত রক্তনালী দিয়েই হয়ে থাকে। এভাবে তিনি Coronary Circulation বা হার্টের রক্ত সরবরাহের সঠিক ধারণাও উপস্থাপন করেন।
ইবনে নাফিসের ৩০০ বছর আগে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী উইলিয়াম হারভে রক্তনালী ও রক্ত সরবরাহ সম্বন্ধে একই ধারণা প্রবর্তন করেন। বর্তমানে হারভেকে রক্ত সঞ্চালন আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়া হয়ে থাকে।Max Mayerhoffসহ বেশ কয়েকজন ঐতিহাসিকের মত এই, Pulmonary Circulation বা ফুসফুসের রক্ত সঞ্চালনের কৃতিত্ব ইবনে নাফিসকেই দেয়া উচিত।
লেখক : মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ