রেকর্ড করা হলো দিহানের বাসার দারোয়ান দুলালের জবানবন্দি
দিহান - ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীর কলাবাগানে ‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থীকে (১৭) ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় একমাত্র আসামি ফারদিন ইফতেফার দিহানের (১৮) বাসার দারোয়ান দুলাল মিয়া সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে সোমবার আটক করা হয়েছিল। এই মামলায় তার সাক্ষী গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে।
গত ৭ জানুয়ারি কলাবাগানের ওই বাসা থেকেই ‘ও’ লেভেলের ওই ছাত্রীকে মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বন্ধু দিহান। তবে তার আগেই মেয়েটির মৃত্যু হয়।
পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, “তার শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া না গেলেও যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথে ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে। বিকৃত যৌনাচারের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।”
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদের আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এর আগে রোববার (১০ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান আসামি দিহানের ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি প্রার্থনা করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা আবেদনটি মঞ্জুর করেন।
কলাবাগান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক স্বপন কুমার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদের আদালতে দিহান দায় স্বীকার করে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এছাড়া ওই দিনই নিহত ছাত্রীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের ফলে যৌন ও পায়ুপথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছে কিনা, তার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে কেমিক্যাল পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।’
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৭ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। এর এক ঘণ্টা পর তার বাবাও ব্যবসায়িক কাজে বাসা থেকে বের হয়ে যান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপারস আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন।
পরে মামলার একমাত্র আসামি ‘ও’ লেভেল পড়ুয়া শিক্ষার্থী দিহান দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীর মাকে জানান, মেয়েটি তার বাসায় গিয়েছিলেন। হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। অফিস থেকে বের হয়ে আনুমানিক দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে ভুক্তভোগীর মা হাসপাতালে পৌঁছান।
হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তার কলাবাগান ডলফিন গলির বাসায় ডেকে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মারা যান।
দিহানের বাসার সিসিটিভিতে যা পাওয়া গেল
মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনকে ধর্ষণ ও খুনের দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ইফতেখার ফারদিন দিহানকে। আর এ ঘটনায় আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে দিহানের কলাবাগান বাসার দারোয়ান দুলালকেও। উদ্ধার করা হয়েছে বাসাটির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ।
মঙ্গলবার দুপুরে রমনা জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্তের স্বার্থে ওই বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজেসহ অনেক কিছুই জব্দ করা হয়েছে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেদিন বাসাটিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা অবস্থান করছিল আনুশকাহ।
এ সময় রহস্যজনক গতিবিধির উপস্থিতি পাওয়া গেছে তিন ব্যক্তির। পুলিশের ধারণা, সর্বগ্রাসী মাদকের পরিণতিতেই এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
সিসিটিভি বিশ্লেষণ করে পুলিশ আরও জানায়, ঘটনার দিন দুপুর ১২টা ১২ মিনিটে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার ওই শিক্ষার্থী প্রবেশ করে। বাসার সিঁড়ি ঘরের দিকে সে যায়। দুপুর ১টার দিকে বাসার সামনে তিন ব্যক্তির রহস্যজনক গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়। ১টা ৩৬ মিনিটে গাড়িতে করে দিহান বাসা থেকে বের হন। ওই তিন ব্যক্তি বাসার সামনে নজরদারি করেন।
পুলিশ আরও জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই তিনজনের দেয়া তথ্য ও আটক দিহানের বাসার দারোয়ান দুলালের দেয়া তথ্যের মিল রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে তাদের আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গত ৭ জানুয়ারি দুপুরে দিহান ওই ছাত্রীকে মৃত অবস্থায় আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন কিশোরীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। খবর পেয়ে দিহানের তিন বন্ধু হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার একমাত্র আসামি করা হয় দিহানকে। যেখানে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ আনা হয়।