যেভাবে দিহানের ফাঁকা বাসায় গিয়েছিলেন আনুশকা
যেভাবে দিহানের ফাঁকা বাসায় গিয়েছিলেন আনুশকা - ছবি সংগৃহীত
আনুশকা নূর আমিন ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। রাজধানীর কলাবাগানে ডলফিন রোডে ইফতেখার ফারদিন দিহানের বাসায় ঘটনার দিন একাই সেখানে গিয়েছিলেন মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিন। ঘটনার পর দিহান একাই গাড়িতে করে আনুশকাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বাসার ভেতরে ও হাসপাতালে যাওয়ার সময় দিহানের সাথে কেউ ছিল না।
দিহানদের বাড়ির দারোয়ান দুলাল মিয়া পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজামানকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন দিহানের বাসার দারোয়ান দুলাল মিয়া। পরে গতকাল সোমবার (১১ জানুয়ারি) মামলার সাক্ষী হিসেবে দুলাল মিয়াকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজামান ব্রেকিংনিউজকে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আনুশকার ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত দিহান ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছে আদালতে, এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সাক্ষী হিসেবে দুলাল মিয়াকে হেফাজতে নিয়েছি। তাকে আমরা এখন আদালতে নিয়ে যাচ্ছি। যেহেতু দুলাল এই মামলার আসামি না, তাই সাক্ষ্য দেয়া শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। দুলাল আমদের কিছু তথ্য দিয়েছে, তবে সে সাক্ষ্য দেবে বলে আমরা বিস্তারিত বলতে পারছি না। সাক্ষ্য দেয়া শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।’
পুলিশকে যা বলছে দারোয়ান দুলাল : ঘটনার দিন সকাল থেকেই দুলাল দিহানদের বাসার গেটে ডিউটিতে ছিলেন। ওই দিন বাসায় দিহান ছাড়া আর কেউ নেই বলে জানতেন তিনি। আনুমানিক দুপুরের দিকে দিহানদের বাসায় একটি মেয়েকে (আনুশকা) সে যেতে দেখে। আনুশকা বাসার ভেতরে যাওয়ার আনুমানিক ১ ঘণ্টার মধ্যে তাকে অচেতন অবস্থায় দিহান বের করে গাড়িতে (হাসপাতালের উদ্দেশ্যে) করে চলে যায়। আনুশকা যখন দিহানদের বাসায় যায় তখন সে একাই ছিল এবং তাকে হাসপাতালের নেয়ার সময় দিহান ছাড়া আরো কেউ ছিল না।
এদিকে, মামলার এজাহারে ও মামলার তদন্তে এ ঘটনায় শুধুমাত্র দিহান জড়িত থাকার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও আনুশকার বাবা এখন দাবি করছেন, ঘটনা একা ঘটায়নি দিহান। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, আমার মেয়েকে যেভাবে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে তা দিহানের একার পক্ষে সম্ভব না।
দিহানের ডিএনএ পরীক্ষায় আদালতের অনুমতি
কলাবাগানে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ-হত্যামামলার আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহানের ডিএনএ নমুনা নিয়ে উদ্ধার আলামতের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখবে পুলিশ।
রোববার আদালত দিহানের ডিএনএ পরীক্ষা এবং জব্দ করা আলামত পরীক্ষার আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আ ফ ম আসাদুজ্জামানের আবেদনে এই অনুমতি দেন ঢাকার মহানগর হাকিম ইয়াসমিন আরা।
গত ৭ জানুয়ারি কলাবাগানে দিহান তার বাড়ি থেকে তার বন্ধু ও লেভেলের ওই ছাত্রীকে মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে তার আগেই তার মৃত্যু ঘটে।
মেয়েটির ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, “তার শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া না গেলেও যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথে ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে। বিকৃত যৌনাচারের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।”
দিহান দাবি করেছেন, তারা ‘পরস্পরের সম্মতিতে’ দৈহিক সম্পর্ক গড়েছিলেন।
তবে মেয়েটির পরিবার ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ তুলে দিহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
দিহান ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়ার পর বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।