কী করবেন বাইডেন
জো বাইডেন - ছবি সংগৃহীত
সুদানের সামরিক জান্তা আমিরাতের ইন্ধনে আর ট্রাম্প-কুশনারের চাপে সন্ত্রাসী তালিকামুক্তির আশ্বাসে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলেও দেশটির জনগণ এর তীব্র বিরোধী। মধ্যপ্রাচ্যে তুর্কি-সৌদি বলয় তৈরি হলে দেশটির ইসরাইল-আমিরাতপন্থীদের জন্য ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন হবে। এমনকি আমিরাতের পক্ষে এককভাবে ইসরাইলের সহায়তায় মিসরে আবদুল ফাত্তাহ সিসি সরকারকে টিকিয়ে রাখাও কঠিন হতে পারে।
এ কথা সত্যি যে, মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের একটা প্রধান ভূমিকা থাকবে। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতি কিছুটা হলেও পাল্টাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেট’ এমনকি, বাইডেন নিজেও ইসরাইল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু আমেরিকান নীতি ও স্বার্থের নিজস্বতাকে যেভাবে ট্রাম্প-কুশনার ইসরাইলের স্বার্থে বিসর্জন দিয়েছেন সেটি বাইডেন অব্যাহত রাখবেন বলে মনে হয় না। ফিলিস্তিনের দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান আবার সক্রিয়তা লাভ করতে পারে বাইডেন প্রশাসনের সময়।
বাইডেন ইরানের সাথে ছয় জাতির পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরে আসার অঙ্গীকার পূরণ করার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে হয়। তা হলে ইরান এখন অবরোধের কারণে যে চাপের মধ্যে রয়েছে সেটি থাকবে না। তবে বাইডেন প্রশাসনের সৌদি-তুরস্ক বিরোধী একটি মনোভাব থাকবে বলে অনেকে উল্লেখ করলেও ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে একক শক্তিতে পরিণত হতে যুক্তরাষ্ট্র দেবে বলে মনে হয় না। এতে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন মেরুকরণে মোটা দাগে তিনটি বলয় বা পক্ষ থাকতে পারে। একপক্ষে সৌদি আরব, তুরস্ক ও মিত্র রাষ্ট্রগুলো। দ্বিতীয়পক্ষে ইসরাইল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিত্র দেশগুলো। তৃতীয় পক্ষে ইরান ও তার মিত্র দেশগুলো।
জো বাইডেনের আমলে আমেরিকার নীতিনির্ধারকরা এই তিন পক্ষের কোনোটিকে এককভাবে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সহযোগিতা করবেন বলে মনে হয় না। তবে তিনটি পক্ষই মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হলেও আরব জনগণ এবং শক্তির ভরকেন্দ্রগুলোর সমর্থনে সৌদি-তুরস্ক বলয় মূল শক্তিতে পরিণত হতে পারে। মুসলিম উম্মাহ অ্যাজেন্ডার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ফিলিস্তিন ইস্যু। আমিরাত বলয় এই ইস্যুকে আর সামনে আনতে চায় না, তাদের প্রধান ইস্যু হলো ‘রাজনৈতিক ইসলাম’কে নির্মূল করা। অন্য দিকে সৌদি আরব তুরস্কসহ বেশির ভাগ মুসলিম দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয় নিশ্চিত করে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দানের পক্ষে। ইরানসহ কিছু দেশ রয়েছে দৃশ্যত যারা ইসরাইলের অস্তিত্ব মেনে নিতে চাইছে না।
বর্তমান বাস্তবতায় মধ্যপন্থী নীতিটি আন্তর্জাতিক সমর্থন বেশি লাভ করতে পারে। ওআইসি এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এ নীতিকেই সমর্থন করছে। ফলে ২০২১ সালেই আবার ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা নতুন অবয়বে শুরু হতে পারে। এর মাধ্যমে কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত হলে সেটি হতে পারে মুসলিম উম্মাহর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এতে ফিলিস্তিন ইস্যুর পাশাপাশি কাশ্মির ও রোহিঙ্গা ইস্যুটিও সামনে চলে আসবে। ওআইসিকে কার্যকর সংস্থা করা গেলে এবং মধ্যপন্থী একটি কর্মপন্থা এসব সমস্যাকে জটিল করে তোলার পরিবর্তে সমাধানমুখী করতে সক্ষম হবে।
তবে এ কথা ঠিক যে, প্রতিটি রাষ্ট্রেরই নিজস্ব কিছু নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক কৌশলের ইস্যু থাকে। ফলে চাইলেই যেকোনো মেরুকরণ সম্পন্ন হওয়া সরল রৈখিক কিছু হয় না। ২০২১ সাল এমনিতেই এক জটিল বিশ্বপরিস্থিতি হাজির করেছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী চীন আর রাশিয়ার পারস্পরিক সমঝোতা ও বোঝাপড়ায় নতুন এক পরিস্থিতি আসবে বলে মনে হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর প্রলয়ঙ্করী প্রভাব এবং এর ভবিষ্যৎ নীতিধারা নিয়ে এখনো নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। এর পরও মুসলিম উম্মাহর সামনে আশাবাদী দৃশ্যপটই রয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তুর্কি-সৌদি সমঝোতার সম্ভাবনা তার মধ্যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মনে হয়।
mrkmmb@gmail.com