সিরিয়া যুদ্ধের মোড় যেভাবে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স

মাসুম খলিলী | Jan 12, 2021 04:13 pm
আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স

আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স - ছবি সংগৃহীত

 

 সিরিয়ার বিদ্রোহীরা যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিল সেই সময়ে আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন জায়েদ ইসরাইলের নেতানিয়াহু ও মিসরের সিসির সাথে পরিকল্পনা করে রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ পথ তৈরি করেন। আর মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রভাব কমানোর নামে নির্বিচারে বোমা ফেলে ফ্রি সিরিয়ান আর্মির লাখ লাখ যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছেন। এর ফলে সিরিয়া পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। বিদ্রোহী ফ্রি সিরিয়ান আর্মি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তুরস্ক পিকেকে সমর্থক ওয়াইপিজের হাতে সীমান্তবর্তী ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ঠেকাতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সাথে সমান্তরাল চুক্তি করে তুরস্ক সিরীয় উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য সিরিয়ার ভেতরে নিরাপদ অঞ্চল গঠন করে। অন্য দিকে, আমিরাত ইসরাইলের গোপন সহায়তায় তুর্কি বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা চালায় ।

দেখা যায়, সৌদি আরব সিরীয় পরিস্থিতিতে একেবারে নিয়ন্ত্রণ হারানোর অবস্থায় পড়ছে আর কুর্দি বিদ্রোহীদের ওপর ভর করে আমিরাত তার প্রভাব সৃষ্টির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইয়েমেন ও সিরিয়ার মতো পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ন্ত্রকের আসনে বসতে সৌদি শীর্ষ নেতৃত্বকে অন্ধকারে রেখে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় আমিরাত। নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা চুক্তির নামে ইসরাইলের সাথে যৌথ সামরিক শক্তি গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে আবুধাবি। ট্রাম্প-নেতানিয়াহুকে ব্যবহার করে ইসরাইলকে স্বীকৃতিদানকারী রাষ্ট্রের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেয় আমিরাত। এখন মিসর বাহরাইন সুদান মরক্কোর পাশাপাশি ওমানকেও একই দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমিরাতের নিয়ন্ত্রণ মেনে এই বলয়ে একাত্ম হওয়ার মধ্যে সৌদি আরব তার ক্ষমতা ও স্বার্থ কোনোটারই নিশ্চয়তা দেখতে পাচ্ছে না।

এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট প্রশাসন সৌদি রাজতন্ত্রের প্রতি খুব একটা সুপ্রসন্ন থাকে না। এ অবস্থায় ট্রাম্প এবং তার ইহুদি জামাতা কুশনারের সাথে অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে জো বাইডেনের প্রশাসন রিয়াদের প্রতি অনুকূল মনোভাব পোষণ করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ অবস্থায় আগামী মার্চে ইসরাইলে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতে নেতানিয়াহুর আবার প্রধানমন্ত্রী পদে বসার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। আর বৈরী জনমত ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে উপেক্ষা করে মুহাম্মদ বিন জায়েদের সাথে পথ মেলানো এ পরিস্থিতিতে বিপর্যয়কর বলে ভাবছেন সৌদি নীতিনির্ধারকদের বড় অংশ।

যে বিকল্প ভাবনা এখন জোরদার হচ্ছে সেটি হলো, সৌদি রাজতন্ত্রকে বহাল রাখার শর্তে তুর্কি-কাতার-ব্রাদারহুড শক্তির সাথে সমঝোতায় পৌঁছানো। এ ধরনের সমঝোতা হলে ইয়েমেন যুদ্ধের অবসানে তুর্কি-কাতার সৌদি আরবকে সহযোগিতা করবে। পাকিস্তানও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে। ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, ইরানের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ইয়েমেনে লেবানন মডেলের একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তৈরি করা হবে যেখানে সুন্নি, হুথি ও অন্যান্য শক্তির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। আর একই সাথে ইয়েমেনের অখণ্ডতা বজায় থাকবে। এ ধরনের একটি পরিকল্পনার ব্যাপারে সৌদি আরব, তুরস্ক ও ইরান একমত হলে আমিরাতের বিরোধিতায় কোনো কাজ হবে না। আর এডেন বন্দর নিয়ন্ত্রণ করে আমিরাতি বন্দরগুলোর গুরুত্ব ধরে রাখার আমিরাতের স্বপ্নও পূরণ হবে না। এ ব্যাপারে ভেতরে ভেতরে আলোচনা অনেক দূর অগ্রসর হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

একই ধরনের একটি টেকসই রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয় ভাবা হচ্ছে সিরিয়া নিয়েও। সিরিয়ার পরিস্থিতি কিছুটা জটিল হলেও সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাশিয়া, তুরস্ক, ইরানের অংশগ্রহণে ‘আস্তানা প্রক্রিয়া’ চলমান রয়েছে। সিরিয়ার নেতা বাশার আসাদের সাথে প্রেসিডেন্ট পুতিনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতপার্থক্যও দেখা দিতে শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সিরিয়ার রাজনৈতিক সমাধানের সাথে সৌদি আরব যুক্ত হলে সঙ্কটের নিরসন দ্রুততা পাবে।

সিরিয়ার পাশাপাশি লেবাননে সৌদি নীতির অকার্যকারিতার কারণে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। লেবাননের হিজবুল্লাহর ওপর এখনো ইরানের একক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এর বিপরীতে, সুন্নি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল রিয়াদের। মুহাম্মদ বিন জায়েদের পরামর্শে বিন সালমান লেবাননি প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে আটকে রাখলে লেবাননি সুন্নিরা সৌদি আরবের ব্যাপারে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়। তখন থেকে এ শূন্যতা পূরণ করা হচ্ছে তুর্কি প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে। আমিরাত লেবাননে নিজস্ব প্রভাব সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়ে সেখানে ফ্রান্সকে হস্তক্ষেপ করার জন্য ডেকে এনেছে। কিন্তু সৌদি-তুরস্ক অভিন্ন ভূমিকা পালন করলে লেবাননে ফ্রান্স-আমিরাত সিদ্ধান্তকারী কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us