প্রধানমন্ত্রী নাজমুদ্দিন আরবাকান
নাজমুদ্দিন আরবাকান - ছবি সংগৃহীত
ড. নাজমুদ্দিন আরবাকান ১৯৬৯ সালে সুলেমান দেমিরেলের আদালত পার্টি থেকে নমিনেশন চেয়ে পাননি। কিন্তু কোনিয়া থেকে নির্বাচন করে স্বতন্ত্র হিসেবে গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি আলেমওলামা ও ইসলামি চিন্তাবিদদের নিয়ে মিল্লি গুরুস নামে প্রথম একটি অরাজনৈতিক নতুন দল গঠন করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৭০ সালের ১৭ জানুয়ারি মিল্লি গুরুসের রাজনৈতিক দল হিসেবে মিল্লি নিজাম পার্টি গঠন করেন। সামরিক বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে এ দল নাকি তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধী, তাই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আবার নতুন নাম দিয়ে মিল্লি সালামত পার্টি গঠন করেন। মাত্র তিন মাসের মধ্যে তিন বার নাম বদলিয়ে নতুন নামে ১৯৭২ সালে মিল্লি সালামত পার্টি গঠন করেন।
ড. নাজমুদ্দিন আরবাকান উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছিলেন। কিন্তু অদূরদর্শিতার কারণে ক্ষমতায় বেশি দিন থাকতে পারেননি। ধর্মনিরপেক্ষ সামরিক বাহিনী তাকে ক্ষমতায় থাকতে দেয়নি।
নাজমুদ্দিন আরবাকান ছাত্র হিসেবে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ইসলামের জন্যে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। দেশের পরিবেশ ও আন্তর্জাতিক অবস্থা সত্যিকারভাবে না বুঝেই অনেক বিশাল কিছুই করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী তা করতে দেয়নি। তিনি ডি৭ ও মুসলিম জাতিসংঘ গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে মুসলিম দেশগুলো সফর শুরু করছিলেন। সাধ ছিল কিন্তু সাধ্য ছিল না, তিনি তা অনুধাবন পারেননি। তাই তাকে সামরিক বাহিনীর চাপে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। তিনি যদিও ইসলামি আন্দোলনকে অনেক সফল পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু তুরস্কের তখনকার প্রেক্ষাপটে অনেকগুলো পদক্ষেপ ভুল ও আত্মঘাতী প্রমাণিত হয়েছে। যেজন্য শক্তিশালী সামরিক বাহিনী তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়।
এমনকি এরদোয়ান সব সময় ড. নাজমুদ্দিনের শিষ্য ছিলেন। এবং আমৃত্যু তাঁকে সম্মান করছেন। তাঁর মৃত্যুর পর নিজ কাঁধে কফিন বহন করেন।
ইসলামি দলকে জয়ী করার উদ্দেশ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার মতামতে ও সমর্থনে এ কে পার্টি করে ড. আরবাকানেরই তৈরি করা কর্মীবাহিনীকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে, নিজেও অসম্ভব পরিশ্রম করে, নতুন ধ্যান-ধারণা ব্যবহার করে প্রায় এক বছরের মধ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যান এরদোয়ান। দীর্ঘ ১৬/১৭ বছর একাধারে প্রতিটি নির্বাচনে সর্বমোট এই পর্যন্ত ১৫টি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। গণতান্ত্রিক তুরস্ক বা অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে কোনো নেতা জয়ী হয়েছেন কি না, আমাদের জানা নেই।
এ নির্বাচনগুলোর ঘটনাপ্রবাহ থেকে এটি স্পষ্ট, তুর্কি জনগণ ইসলামি আদর্শের প্রতি দুর্বল। ইসলামি ভাবধারায় বিশ্বাসী। এ ভাবধারাকে জনপ্রিয় করে তুলতে বড় ভূমিকা রেখেছেন আরবাকান। কিন্তু সমসাময়িক অবস্থাও বিবেচনায় নিতে হয়। বিরোধী দলে থাকাকালে অনেক কিছুই বলা যায়, কিন্তু রাষ্ট্রের দায়িত্ব পেলে সবই বাস্তবায়ন করা যায় না। বিশেষ করে ইসলামসংক্রান্ত বিষয়গুলো তো সহজে বাস্তবায়ন করা সম্ভবই নয়, যে দেশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
* লেখকের বর্তমান বিশ্বের অবিসংবাদিত জনপ্রিয় নেতা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সফলতার রহস্য গ্রন্থ থেকে