যেভাবে ইস্তাম্বুলের মেয়র হয়েছিলেন এরদোগান
এরদোগান - ছবি সংগৃহীত
এরদোয়ান ১৯৮৪ সালে প্রথমে রেফা পার্টির (ওয়েলফেয়ার পার্টি) বেইয়্যুল জেলা শাখার সভাপতি হন। তারপর ১৯৮৫ সালে ইস্তান্বুল শহরের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন।
১৯৮৯ সালে স্থানীয় নির্বাচন ঘোষণা হয়। এরদোয়ান বেইয়্যুল পৌরসভার মেয়র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিলেন, যেটি তার জীবনে প্রথম নির্বাচন। কেন্দ্রীয় এবং ইস্তান্বুলের অনেক নেতৃস্থানীয় নেতা একমত হলেন না। তাদের যুক্তি ছিল, ওই এলাকা কোনো সময় রেফা পার্টির
জন্যে অনুকূলে ছিল না। সেখানে রেফা পার্টির ভোটারের সংখ্যা একেবারেই কম। তাতে একজন কেন্দ্রীয় নেতা এবং ইস্তান্বুলের সভাপতির পরাজয়ে তথা রেফা পার্টির সুনাম নষ্ট হবে। কিন্তু এরদোয়ান তাঁর অবস্থানে একেবারে অনড় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতারা তার প্রার্থিতায় সম্মত হলেন।
দলের অনুমতি পেয়ে এরদোয়ান নতুনভাবে কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অল্প কিছু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নির্বাচনি প্রচারকাজে সম্পৃক্ত করলেন। বিশেষ করে তাদের জরিপের কাজ দিলেন। তরুণ শিক্ষার্থীরা উৎসাহের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে জরিপ করত ও প্রতিবেদন দিত। এছাড়া অন্য নারীদের ঘরে ঘরে ক্যাম্পেইনে পাঠাতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা তাঁর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে শেষ দিকে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে শুরু করল। প্রতিদিন প্রতিটি এলাকায় কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হতো। নারী ও তরুণদের বেশি বেশি কাজে লাগাতে চেষ্টা করতেন এরদোয়ান। তার কথা ও কাজে বিমোহিত হয়ে দলে দলে তরুণ-তরুণী ও নারীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করল। জীবনের প্রথম নির্বাচনে যদিও বিজয়ী হতে পারেননি, তবুও বহু ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হলেন। তার প্রাপ্ত ভোট প্রায় ২১ হাজার ৭০৬, যা মোট ভোটের ২২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তৎকালীন বিরোধী দলের প্রার্থী ২৭ হাজার ৮৪৭ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হলেন। এটি মোট ভোটের ২৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর ক্ষমতাসীন দল ১৯ হাজার ৫৭৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হলো, যা মোট ২০ দশমিক ৬০ শতাংশ।
এরদোয়ান নির্বাচিত হতে না পারলেও অতীতে যেখানে তার দল মাত্র তিন শতাংশ ভোট পেতো, সেখানে তিনি ২২ দশমিক ৮৩ শতাংশ ভোট পেয়ে সারা দেশে সাড়া ফেলে দিলেন। রেফা পার্টিতে যারা তার প্রার্থিতার বিরোধিতা করেছিলেন তারাও আশ্চর্যান্বিত হয়ে এটাকে এরদোয়ান মডেল বা ইস্তান্বুল মডেল বা রেফা মডেল নাম দিলেন।
১৯৮৬ সালে একটি উপনির্বাচনে গ্র্যান্ড অ্যাসেম্বলির সদস্য পদেও প্রার্থী হয়ে হেরে যান এরদোয়ান। হেরে যাওয়ার কারণ ছিল ওই আসনে রেফা পার্টির তেমন সমর্থক বা ভোটার ছিল না। দ্বিতীয়ত, তাঁর নিজেরও তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না। দ্বিতীয় দফায় হারলেন বেইয়্যুল পৌরসভার মেয়র নির্বাচনে। মেয়র নির্বাচনে হারলেও কিন্তু রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়েছেন এবং দ্বিতীয় হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী তৃতীয় হয়েছেন। মেয়র নির্বাচনে তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারা ও কর্মকৌশল প্রয়োগ করে দলের মধ্যে তাক লাগিয়ে দিয়ে নিজের সংগঠক প্রতিভার পরিচয় দিতে সক্ষম হলেন।
* লেখকের বর্তমান বিশ্বের অবিসংবাদিত জনপ্রিয় নেতা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সফলতার রহস্য গ্রন্থ থেকে