ট্রাম্প এমন করছেন কেন?
ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত
অবশেষে জানা গেল আমেরিকায় টেররিস্ট কারা! কথিত ট্রাম্প সমর্থক যারা কংগ্রেসে ৬ জানুয়ারি ভাঙচুর চালাতে ঢুকেছিল তারা ‘টেররিস্ট’।
যেকোনো ব্যবসামাত্রই তাতে উত্থান-পতন আছে, থাকবে। এটা তেমন অস্বাভাবিক কিছু নয় হয়তো। এমনকি এই সূত্রে ব্যবসা ফেল করাতে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক নয়। কিন্তু তাই বলে দেউলিয়া হলেই ওই ব্যবসায়ীর মানসিক রোগও দেখা দেবেই তা কিন্তু নয় যদিও কারো বেলায় এটা হতেও পারে। আবার তেমন কিছু নাও হতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটা চেক করার দরকার আছে। দেউলিয়া বা ব্যাংক করাপ্ট হলে ওই ব্যবসায়ী সাথে কোনো মানসিক রোগগ্রস্ত হয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া দরকার। নইলে কংগ্রেসে ভাঙচুর পর্যন্ত ঘটাতে পারে, কিছু লোক বেঘোরে মারা পড়তে পারে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মানসিক স্বাস্থ্য চেক করার সময় বয়ে যাচ্ছে যদিও আওয়াজ উঠেছে।
সেই ২০১৬ সালে প্রার্থী হওয়ার আগেই, ট্রাম্পের মানসিক স্থিতি চেক করে নেয়া দরকার ছিল, সেটা আজ স্পিকারসহ রাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা হাড়ে হাড়ে বুঝছেন। ট্রাম্পের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে কোনো কোনো অনুসন্ধানী ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট মতে, ট্রাম্প ১১ বার নিজেকে দেউলিয়া ব্যবসা কোম্পানি হিসেবে রেজিস্টার্ড হয়েছিলেন।
কোনো প্রতিষ্ঠানকে ‘দেউলিয়া’ ঘোষণা করা মানে কী? আমেরিকান বিজনেস ল’ অনুসারে কোম্পানির মালিকেরা নিজেরাই নিজ কোম্পানিকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারেন, তবে আদালতের মাধ্যমে। সাধারণত এটা কোম্পানি মালিক ও ম্যানেজমেন্টের ঘোষিত সিদ্ধান্ত হিসেবে ঘটে থাকে। অনেকের মনে হতে পারে, মালিক নিজেই কেন ঘোষণা করবেন, নিজেকে কি কেউ পাগল বলেন বা বলবেন?
হ্যাঁ বলবেন, ও বলে থাকতে পারেন। কারণ, নিজ কোম্পানিকে দেউলিয়া ঘোষণা করিয়ে নেয়ার জন্য আদালতে ওই কোম্পানিকেই আবেদন করতে হয় আর তাতে আদালতের অনুমোদন পেতে হয়। কিন্তু কখন ও কেন? যখন সাধারণত দেখা যায় কোনো কোম্পানির আয় ও অর্জিত সম্পদের মোট মূল্যের চেয়ে ওই কোম্পানিকেই পরিশোধ করতে হবে, সম্ভাব্য এমন দায়ের পরিমাণ বেশি হয়ে গেছে।
কিন্তু এমন পরিস্থিতি কেন হয় বা হতে পারে? সাধারণত দেখা যায় কোম্পানিটা কোনো ওষুধের মতো পণ্য উৎপাদনকারী এবং বাজারে খুবই সুনাম-ওয়ালা কোম্পানি ছিল। কিন্তু ওর যেকোনো একটা পপুলার ওষুধ-পণ্যের গুণে ত্রুটি ধরা পড়েছে যা উৎপাদনে মারাত্মক ত্রুটিজনিত এক ভুল। আর তাতে ওই ওষুধ ব্যবহার করে কয়েক লাখ লোক অসুস্থ হয়ে পড়েছে আর এদের মধ্যে প্রায় শ’খানেক লোক মারাও গেছেন। এমন হলে ভুক্তভোগীরা আদালতে মামলা করা শুরু করেছে হয়তো। হয়তো দু-একটা মামলার অবস্থা থেকে বুঝাও যাচ্ছে, এসব মামলায় কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তির রায় হয়েই যাবে আর শাস্তির পরিমাণও অনেক বড়, মাথাপিছু কয়েক কোটি টাকার উপরে দিতে হবে একেকজন ভুক্তভোগীকে।
তখন ওই কোম্পানি নিজ ক্ষতি ও দায় কমাতে আদালতে নিজ উদ্যোগেই আবেদন করে যে, তার কোম্পানিকে দেউলিয়া ঘোষণা করে দেয়া হোক। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত সব ভুক্তভোগীর সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণ দিতে গেলে এর দায় কোম্পানি অ্যাসেট বা মোট সম্পদের চেয়ে বেশি। এখন এতে আদালত ঠিক কী করবেন? আদালতের এই আবেদনে সন্তুষ্টি থাকলে আদালত কোনো অ্যাসেট নির্ণয় ও মূল্যায়ন কোম্পানি নিয়োগ দিয়ে ওই দাবির যথার্থতা যাচাই করবেন যদি ওই নির্ণয় কোম্পানির রিপোর্টও মালিকদের আবেদনের সাথে মিলে যায় তখন আদালত রায় দেন যে, পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির যতটুকু সম্পদ বর্তমানে আছে সেই অনুপাতে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের অর্থ কম করে দিয়ে যেন দায় মিটিয়ে দেয়। এরপর ওই কোম্পানিকে দেউলিয়া আর নয় ঘোষণা করে দেয়া হয়। তাই কোনো কোম্পানি তার বিভিন্ন ধরনের পাওনাদারদের দাবি যদি মেটাতে ব্যর্থ হয়, সম্পদের চেয়ে দায়ের পরিমাণ যদি বেশি হয় তাহলে সে নিজেকে আদালতের কাছে দেউলিয়া প্রমাণ করিয়ে আদালতের মুখ দিয়ে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করিয়ে নেয়, যাতে পাওনাদার থেকে বেঁচে যাওয়া যায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প মূলত হাউজিং ডেভেলপমেন্টের ব্যবসায়ী। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় ২০১৬ সালের এক ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট বলছে, তিনি কমপক্ষে ১১ বার এমন দেউলিয়া ঘোষণা করিয়েছেন নিজেকে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, কোনো কোম্পানির মূল মালিকের বহু স্বপ্নের বাস্তবতা হয় তার নিজের ওই কোম্পানি। ফলে কোম্পানিকে বাজারে দেউলিয়া হয়ে যেতে দেখলে সেটা কারো কারো বেলায় এক মানসিক আঘাত হয়ে হাজির হতেও পারে। এ কারণে দেখা যায়, মালিক আর স্বাভাবিক মানুষ নাই। হয়তো দেখা যায় সামাজিক সাধারণ মূল্যবোধ দ্বারা, ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায় বা সামাজিক দায়বোধ বা জবাবদিহিতা ইতাদির আর কোনো অনুভূতিই কাজ করে না। এমনই মানসিক অসুস্থতায় পৌঁছেছেন ট্রাম্প। অনেকটা তার কোম্পানিও নাই। তাই তিনি সমাজের আর কোনো কিছু মেনে কী করবেন? এর ফলে এ অবস্থায় নিজেকে সুস্থভাবে পরিচালিত করার মতো অবস্থায় ওই মালিক নেই। অস্বাভাবিকতা দেখা দিয়েছে যেখান থেকে যেকোনো মাত্রার মানসিক স্থিতিশীলতা, অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
এখন এমন মানুষ নিজের সমাজ, পরিবারে থাকলে এক জিনিস; কিন্তু যদি রাষ্ট্রীয়-সরকারি পদ, নির্বাহী হয়ে বসেন? সেটা অবশ্যই মারাত্মক। কারণ সেটা সারা দেশের মানুষের স্বার্থের ব্যাপার। তাই নির্বাহী পদে নমিনেশন পেপার পেশ করার আগেই শর্ত হিসেবে তার মানসিক স্থিরতা (মেডিক্যাল স্টান্ডার্ড মতে) পরীক্ষা করে নেয়ার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। কারণ একটা রাষ্ট্রের প্রশাসন পরিচালনা মানে, সম্ভবত শতকোটি নাগরিক ভাগ্য নিয়ে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একজন দেউলিয়া ব্যবসায়ীর মানসিক অস্থিরতার রিস্ক ওই দেশের জনগণ নিতে পারে না।
ঠিক এই অবস্থাটা আজ আমেরিকান পাবলিক অনুধাবন করছে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে। কিন্তু ঠিক কি হয়েছিল গত ৬ জানুয়ারি?
আমেরিকার কনস্টিটিউশনের বহু কিছু দু’রকম মানে হতে পারে এমন বাক্য যতটা সম্ভব এড়িয়ে গিয়ে রচনা করা হয়েছে। যেমন নির্বাচন কবে হবে, সেটাও বলা থাকে ওমুক বছরের ওমুক মাসের প্রথম মঙ্গলবারে-এভাবে। অর্থাৎ সবকিছুই আগাম ফিক্সড। বিবেচনাবোধের ফারাক হওয়ার সুযোগই রাখা হয়নি। এভাবেই গত বছর ৩ নভেম্বর আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচনের পরে কতদিনের মধ্যে ফলাফল কে কোথায় পৌঁছে দেবেন তাও বলে রাখা আছে। এই পদ্ধতিতে এবং আনুষ্ঠনিকতার দিক থেকে গুরুত্বের দিন হলো ৬ জানুয়ারি। কারণ, ওই দিন আমেরিকার দ্বিকক্ষবিশিষ্ট কংগ্রেস বা সংসদের উভয়কক্ষ এক যৌথ অধিবেশনে মিলিত হবে। আমেরিকায় আমাদের সংসদের মতো আছে ‘প্রতিনিধি পরিষদ’ বা হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং আরেক কক্ষ আছে ‘সিনেট’। ওই দিন উভয়েই ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিল জেলায় অবস্থিত প্রতিনিধি পরিষদের নির্ধারিত হলঘরে একসাথে বসবে। আর ওই যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার পাশে বসবেন হাউজ স্পিকার। এই হিসাব মতে, ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সভাপতির আসন নিয়েছিলেন। আর সাথে পাশে বসেছিলেন পরপর চারবারের ও এবারেরও স্পিকার (ডেমোক্র্যাট) ন্যান্সি পেলোসি।
ওদিকে নির্বাচনের ফলাফল কিভাবে চূড়ান্ত হবে কে করবেন, বিতর্ক বা আপত্তি থাকলে তা কীকরে নিষ্পত্তি হবে সবই আগাম বলে দেয়া আছে। প্রত্যেক রাজ্যে নির্বাচন কমিশনের কাজ ও পরিচালনা সেখানেই শেষ করা হয়। কারণ কোনো কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন বা অফিস আমেরিকায় রাখা হয়নি। তাই ৫০ রাজ্যের আমেরিকার প্রত্যেক রাজ্যে একজন সেক্রেটারি থাকেন যিনি ওই স্টেটের (সরকারের নয়) সেক্রেটারি অব স্টেট যার প্রধান কাজ হলো তিনি প্রধান নির্বাচন অফিশিয়াল এবং এটা নির্বাচিত একটা পদ; তিনিই ভোটের ফলাফল চূড়ান্ত করেন, আপত্তি থাকলে তাও নিষ্পত্তি করেন। আপত্তিকারী এতে সন্তুষ্ট না হলে তিনি স্থানীয় জেলা জজ থেকে শুরু করে ফেডারেল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে পারেন।
ট্রাম্প নভেম্বরের নির্বাচনের আগে থেকে ‘বড় পাগলামোতেই’ আছেন। একজন প্রেসিডেন্টের জন্য এটা কোনো ভালো পরিচায়ক নয় অবশ্যই। তিনি ফলাফল নিজের বিপক্ষে হলে মেনে নেবেন না, ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না, ইত্যাদি আউড়ে চলেছিলেন নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই। ৩ নভেম্বরের দু’দিন পর থেকেই পরিষ্কার হতে থাকে ট্রাম্প হেরে যাচ্ছেন। আর ততই ট্রাম্পের পালটা পরিকল্পনার কানাঘুষা প্রচার হতে থাকে। এরই একপর্যায়ে দেখা যায় ফলাফল বিতর্ক কখনোই কোনো জেলা জজের আদালতে উপরে যেতে পারেনি। কারণ সবখানেই ট্রাম্পের অভিযোগ ছিল- তাকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে, কারচুপি হয়েছে। কিন্তু সব আদালতেই যা হাজির ছিল না তা হলো, সাথে পেশ করা তথ্য প্রমাণ। অন্তত মামলা শুরু করার মতো ন্যূনতম প্রমাণও ছিল না। ফলে অভিযোগের কোনো শক্ত পয়েন্টও হাজির করা হয়নি। প্রায় সব আদালতই ন্যূনতম প্রমাণ দেখাতে না পারার কারণে মামলা ডিসমিস করে দিয়েছিলেন। শেষে এক পর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই মিডিয়াতে বলেন যে, সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত তার মামলাগুলো দায়ের করা বা পৌঁছানোর মতো অবস্থায় বা মেরিট এগুলোর নেই।
কিন্তু তবু সবসময় তিনি শেষ কথা হিসেবে বলে চলেন যে, তাকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে, কারচুপি হয়েছে।
এরই এক বড় পরিকল্পনার দিন ছিল গত ৬ জানুয়ারি। এটা অবশ্যই একটা আনুষ্ঠানিকতার পর্ব। বিশেষ করে, আমেরিকায় কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন রাখা হয়নি বলে এর বিকল্প কিছু বলে যেন রাজ্য পর্যায়ে চূড়ান্ত ফলাফলগুলোর যোগফল চূড়ান্তভাবে কে ঘোষণা করবেন এরই এক আনুষ্ঠানিকতার দিন এটা। তাই পরিষ্কার করেই বলা আছে, যৌথসভার সভাপতি ভাইস প্রেসিডেন্টের ওই দিনের কাজ কী কী। মূলত তা দুটো। রাজ্যের পাঠানো ফলাফলের বাক্স যা তার অফিসে পাঠানো হয়েছিল তা উন্মোচন করা এবং তা গণনার জন্য নির্ধারিত স্টাফদের নির্দেশ দেয়া; আর তা হবে যৌথসভার (সংসদ ও সিনেটের) সদস্যদের সম্মুখে। সেখানে ভোট গণনার কাজ শেষ হলে উপস্থিত যৌথ সদস্যদের ভোটে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা।
এখন ট্রাম্পের বা তার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য উপদেষ্টাদের দেখা যায়, উটকো কিছু ব্যাখ্যা তারা হাজির করে যাচ্ছেন। যেমন তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে সুনির্দিষ্ট কিছু করণীয় ও নির্দেশ দিয়েছেন, সেটা তিনি প্রকাশ্যেও বলেছেন।
এখন কথা হলো, ট্রাম্প কি যা তার খুশি তা করতে পেন্সকে নির্দেশ দিতে পারেন? নাকি যা যা করার এখতিয়ার পেন্সকে কনস্টিটিউশন দিয়েছে কেবলমাত্র সেগুলো নির্দেশ দিতে পারেন? এখানে ট্রাম্পের ধারণা তিনি সব কিছু নির্দেশ দিতে পারেন। অথচ তা তিনি পারেনই না। তবু তিনি পেন্সকে (নির্দেশ) বলেছিলেন, তিনি যেন যোগফল পাওয়ার পর ঘোষণা করেন, এই ফলাফল তিনি মানছেন না বা অনুমোদন করছেন না।
বুঝা যাচ্ছে, মানসিক অসুস্থতা কেবল ট্রাম্পের, এখনো তার ভাইস প্রেসিডেন্টকে এটা তেমন স্পর্শ করেনি। তাই যৌথ অধিবেশন শুরুর মুহূর্তে পেন্স এক লিখিত ঘোষণায় জানান, তিনি প্রেসিডেন্টের অনুরোধ রাখতে পারছেন না। কেবল কনস্টিটিউশন যা তাকে করার এখতিয়ার দিয়েছে এর ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকবেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প এবার হতাশ হয়ে টুইট করেছেন, ‘পেন্স সাহসী নন। তার সাহসের অভাব আছে, তাই তিনি পারলেন না’।
শেষে ওই যৌথসভা থেকে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে বলা হয়, বাইডেন বিজয়ী বলে তারা ‘সার্টিফাই’ করছেন। তবে এর আগে অনেক নাটকীয়তা হয়েছে। ট্রাম্প তার সমর্থকদের দিয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামার ব্যবস্থা করেছিলেন সংসদের ভেতরে মূল হলসহ বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করে ভাঙচুর করা হয়েছিল। অবশ্য এর আগেই পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ডরা সব নির্বাচিত সদস্যকে একেবারে গ্যাস মাস্ক পরিয়ে সংসদ বিল্ডিংয়ের ভেতরেই গোপন কুঠিতে তাদের নিরাপদ গোপন স্থানে রেখে ছিলেন। এদের মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ট্রাম্প অসুস্থ বা কিছু হলেই তিনি প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন, তাই সেরকম এই নিরাপত্তা অবস্থা। এছাড়া ওই সংসদই কার্যত আমেরিকান রাষ্ট্রের অন্যতম বাস্তব রাষ্ট্ররূপ মনে করা হয়। তাই মূলত পুলিশের আধিপত্যেই ওই দিনটা সংসদে সবার কেটেছে। পুলিশ আধিপত্য করে গেছে দাঙ্গাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করে।
তবে মিডিয়াসহ ট্রাম্পের যে ধারণাটা দেখে গেছে তা হলো, পাবলিকের সরাসরি ভোট দেয়ার পর সেই ফলাফলের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু ঘোষণা করার ক্ষমতা কি ওই যৌথ অধিবেশনের থাকতে পারে? কনস্টিটিউশন কি এমন এখতিয়ার পেন্স বা ওই হাউজকে দিতে পারে? এর সোজা জবাব হলো, পারেই না। এমনকি আমেরিকান কনস্টিটিউশন না পড়েই বলা যায়, এটা কনস্টিটিউশনে থাকতে পারে না। কারণ সে ক্ষেত্রে এর অর্থ হবে জনগণের ম্যান্ডেটের বিরোধিতা; ওই ম্যান্ডেটকে উলটে দিতে পারে কোনো ব্যক্তি বা সমষ্টিকে এমন এখতিয়ার কনস্টিটিউশন দিতেই পারে না। কারণ পাবলিকের ভোটের এই ম্যান্ডেট সুপ্রিম, এর ওপর রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে আছে।
কিন্তু আমেরিকার সমস্যাটা কি ব্যক্তির মানসিক অসুস্থতা? তা বোধ হয় নয়। তবে সেটা জাগিয়ে তুলেছে চীনের হবু নেতৃত্ব, এর জায়গা নেয়া। অর্থনৈতিক সঙ্কট এরকম হাজারো রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরিও করে থাকে।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com