চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবে জাপান?
চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবে জাপান? - ছবি সংগৃহীত
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সুগা অতি সম্প্রতি হ্যানয় সফরে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে উচ্চবাচ্য করেছেন। শক্তির পরিবর্তে আইনের শাসনের কথা বারবার উচ্চারণ করেছেন। সুগার ক্ষমতারোহণে চীন সতর্কতার সাথে তার গতিবিধি লক্ষ করেছে, তবে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। সুগার হ্যানয় সফরে জাপান ও ভিয়েতনাম দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নমূলক কথা বলেছে এবং দুই দেশের মধ্যে ‘সাপ্লাই চেইন’ প্রতিষ্ঠার চুক্তি হয়েছে। মহামারীর এই সময়ে শুধু একটি ‘প্রোডাকশন বেজ’-এর ওপর নির্ভরশীল হওয়া বিপজ্জনক বলে সুগা মনে করেন। একটি প্রোডাকশন বেজ বলতে তিনি চীনকে বুঝিয়েছেন। এই সফরে জাপান-ভিয়েতনাম ‘সিকিউরিটি’ পয়েন্ট নিয়েও চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আওতায় জাপানের ডিফেন্স যন্ত্রপাতি ও টেকনোলজি ভিয়েতনামে সরবরাহ করা হবে। চীন ভিয়েতনাম সুসম্পর্কের ওপর সুগার এ ধরনের কর্মে চীন বসে থাকতে পারে না। জাপানের এই অবস্থানকে চীনবিরোধী তৎপরতা হিসেবে দেখছে বেইজিং। ভিয়েতনাম আমেরিকার সাথে প্রাণপণ লড়াই করে মার্কিন সেনাদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছিল। ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনাম চীনের সাথেও ছোট পরিসরে সীমান্ত যুদ্ধ করেছে। চীনের সাথে বন্ধুত্ব সত্ত্বেও ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সাথে সম্পর্ক আরো মজবুত করছে। সুগা প্রশাসন চীনের ব্যাপারে এখনো পরিছন্ন গাইডলাইন বের করেনি। শিনজো আবে সাত বছর আট মাস জাপানে ক্ষমতায় ছিলেন। তখন সুগা কনজারভেটিভদের একত্রিত করতে সক্ষম ছিলেন না। তাদের অনেকেই চীনা প্রেসিডেন্টের জাপান সফর পছন্দ করেন না। সুগার পেছনের শক্তি হিসেবে পরিচিত তোশিহিরো নিকাই, যিনি এলডিপি দলের সেক্রেটারি জেনারেল, একজন চীন ঘেঁষা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
সুগা চীনের সাথে বিরোধ নিয়ে আলাপের জন্য প্রস্তুত বলে জানা যায়। সুগা অনেকটা একরোখা ও যুদ্ধে জয়ী হতে চান, কিছু ছাড়া দিতে রাজি হন না। অন্য দিকে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং মিষ্টিভাষী, তার লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী। নগদ পাওনা নিয়ে তিনি কম ভাবেন। তাই উভয়ের সাক্ষাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সূর্যরশ্মির দ্যূতি ছড়াতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে।
চীনের হংকং ন্যাশনাল সিকিউরিটি আইন এবং ‘এক দেশ দুই সিস্টেম’ নিয়ে জাপান চিন্তিত। একই প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তাইওয়ানকে। কিন্তু তাইওয়ান ভ্রক্ষেপ করেনি। সেনকাকু দ্বীপ নিয়ে এমন কোনো পদক্ষেপ চীন নেবে কি-না সেটাও জাপানিদের ভাবিয়ে তুলেছে। ভিয়েতনামে সুগা দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যু তুলে ধরেছেন। তিনি আরো বলেছেন, কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়ে বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা বসানোতে জাপান নিরাপত্তাভীতিতে রয়েছে। এত তাড়াতাড়ি চীনবিরোধী মোর্চা গঠনে তোড়জোড় করা হলে বিদ্যমান সুসম্পর্কও নষ্ট হতে পারে। চীন নিয়ে এখনই সুগার কোনো অবস্থান নেয়া সঠিক নয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
পূর্ব চীন সাগরের সেনকাকুতে আটটি বড় বড় দ্বীপ রয়েছে। সামুদ্রিক সম্পদের জন্য এলাকাটি বিখ্যাত। ১৮৯০ সালে সামুদ্রিক পাখি দেখা যায় মিনামিকোজিমা দ্বীপে, ওই সময় ওকিনাওয়া কিশিও থেকে জাপানি ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবীরা সেনকাকুতে যান। ১৮৯৫ মন্ত্রিপরিষদ এই দ্বীপকে ওকিনাওয়ার সাথে সংযুক্ত বলে আদেশ জারি করে। সেনকাকুর বড় দ্বীপগুলো হলো কিতাকোজিমা, মিনামিকোজিমা, কুবা, উতসুরি ইত্যাদি। জাপান ওখান থেকে ট্যাক্স আদায় করত। ১৯৩০ সালে ভূমি রেজিস্ট্রার বানানো হয় উতসুরি দ্বীপের বাসিন্দাদের শনাক্ত করার জন্য। ১৯৫১ সালে সান ফ্রান্সিসকো শান্তিচুক্তি হলে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের হাতে পড়ে। ১৯৫০ সালের চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে জাপানের শান্তি চুক্তি হয়। সেখানে দ্বীপের নামকরণ জাপানের বলে মন্তব্য করা হয়েছে বলে জাপান দাবি তুলেছে। ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্র সেনকাকু দ্বীপের কর্তৃত্ব জাপানের হাতে দেয়। তারা দ্বীপে নিয়মিত টহল ও নিরাপত্তার বিষয় দেখভাল করেন। এখন চীন সেনকাকু দ্বীপের মালিকানা দাবি করছে এবং চীনা কোস্ট গার্ডের জাহাজ নিয়মিত সেখানে টহল দিচ্ছে এবং জাপানি জাহাজের মুখোমুখি হচ্ছে। ২০১৩ সালের ১৬ নভেম্বর চীন ‘হাইজিং’ নামে জাহাজ পাঠায়। হাইজিং-২১৫১ জাহাজের সাথে আরো তিনটি চীনা জাহাজ সেখানে অবস্থান করলে জাপান চীনা জাহাজ সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানায়।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ এলডিপি সুগাকে নতুন লিডার হিসেবে নির্বাচিত করেছে। তাকে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতিকে গতিশীল করতে কাজ করতে হবে। এটাই সবাই চায়। করোনার কারণে বছরের শেষের দিকে জাপানের জিডিপি ২৮.১ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে এটি বড় বিপর্যয়।
আবের মতো সুগার রাজনৈতিক সাপোর্ট নেটওয়ার্ক নেই। চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি থাকার সময় তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দেন, শক্ত হাতে ব্যুরোক্রেসিকে এবং সতর্কতার সাথে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করেন। কঠোর কাজ ও পরিশ্রম করার সুখ্যাতি রয়েছে সুগার। বিশাল ফ্লাটের চাইতে ডরমিটরিতে থাকতে পছন্দ করেন এবং ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠেন, ১০০ বার উঠবস করেন।
সুগার এখন বড় কাজ, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ আর আবের সময় যে অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল সেখান থেকে উঠে আসা। তিনি এখন consumption tax বাড়িয়ে দিতে চান, মোবাইল ফোন রেট কমাতে চান, ব্যাংকগুলোকে নতুনভাবে গঠন করতে চান, অর্থনীতিকে গতিশীল করতে চান। environment policy বিষয়ে তিনি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট চালু রাখার পক্ষপাতি; নতুন কয়লা চালিত পাওয়ার প্লান্ট করতে উদ্যোগী হয়েছেন। তা ছাড়া তিনি জেন্ডার ও সমতার বিষয়গুলো সুরক্ষিত করতে আগ্রহী।
সুগা স্বীকার করেন, আন্তর্জাতিক বিষয়াদি ও কৌশলগত রাজনীতিতে তার অভিজ্ঞতা কম। তাই পূর্বসূরি আবেকে তিনি অনুসরণ করছেন। তার প্রথম কাজ হবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক মজবুত রাখা, চীনের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখা। সুগা কোনো ‘এশিয়ান ন্যাটো’ চান না; তবে আসিয়ান দেশগুলো, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে সুসম্পর্র্ক রাখতে চান। আবের অপূরণীয় কাজ- সংবিধানের ৯ নং আর্টিকেল পরিবর্তন করে জাপানের ডিফেন্স ফোর্সকে সব দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করাকে তিনি দায়িত্ব মনে করছেন। তার নতুন ‘ডিফেন্স ডকট্রিন’ অনুসারে কেবিনেট কঠোর শ্রমের উদ্যোগ নিয়েছে। অচিরেই জাপান ক্রুজ মিসাইল তৈরি করবে; সে সাথে কয়েকটি ওয়ার্ল্ড ক্লাস রণতরীও বানাবে।
জাপানে নিম্নকক্ষের পরবর্তী নির্বাচন অক্টোবর ২০২১ সালে। সুগার মাত্র এক বছর সময় আছে তার রাজনৈতিক নৈপুণ্য ও সার্থকতা দেখানোর। অনেকটা কেয়ার টেকার সরকারের মতো এই সময়গুলো হয়তো অতিবাহিত হবে। সুগার এই সময়টি তার রাজনৈতিক জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সুগার জন্য চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ব্যালেন্সড সম্পর্ক রাখা একটি চ্যালেঞ্জ। সুগা প্রশাসন চীনের সাথেও ভালো সম্পর্ক রাখবে, যেমন- অর্থনীতি, বাণিজ্য, মুক্তবাণিজ্য, চিকিৎসা ও কোভিড নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। তার প্রশাসন হচ্ছে আমেরিকাপন্থী। পূর্ব চীন সাগর, দক্ষিণ চীন সাগর ও দিয়াইউ আইল্যান্ডস বিষয়ে তিনি কঠোর থাকবেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জাপানের অনেক বিষয় আছে যা মিটমাট হয়নি। যেমন- বাণিজ্য ভর্তুকি ও জাপানে আমেরিকার সেনা ঘাঁটি রাখার খরাচপাতি। জাপানের জন্য এসবই গুরুত্বপূর্ণ।
জাপানিরা অপেক্ষা করে আছেন, সুগা কিভাবে অর্থনীতির লাগাম ধরেন এবং কূটনৈতিক সমস্যাই বা কিভাবে বোঝাপড়া করেন। জাপানের নামকরা রাজনীতিবিদ সুসি তানাকা বলেন, ‘পররাষ্ট্র-কূটকৌশল সুগার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ’। তানাকা বলেন, ‘তিনি আবের ধারা বহমান রাখবেন বলে মনে হয়, কিন্তু সেখানে অনেক জটিল সমস্যা রয়ে গেছে; কোরিয়া, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। আবে ১৭০টি দেশ পরিভ্রমণ করেছেন, বহু আঞ্চলিক ফোরামে যোগ দিয়েছেন এবং তিনি দাবি করেন, জাপানের পররাষ্ট্রনীতি সার্থক। তারপরও জাপানের পড়শিদের সাথে সমস্যা রয়েই গেছে।’ কোরিয়ার সাথে এক দশকের সবচেয়ে খারাপ সম্পর্ক। কোরীয় মহিলাদের যথেচ্ছব্যবহারের বিষয়টি আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন ও কোরিয়ার সরকার ‘প্রমোদ মহিলা’দের ‘পড়সভড়ৎঃ ড়িসবহ’ ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি করেছে। সম্প্রতি এগুলোর সাথে উভয় দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা বিষয়গুলো যুক্ত হয়ে জটিল আকার ধারণ করেছে।
বিভিন্ন কারণে জাপান চীনের সাথে যুদ্ধে জড়াবে না। যেমন- সম্ভাব্য চীন-জাপান যুদ্ধে চীন জয়লাভ করবে; তবে পরাজিত হওয়াও বিচিত্র নয়। চীনের নেতা শি জিন পিং জাপানের সাথে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ শুরু করে ইতিহাসে নাম লেখাতে চান না। তেমন দিন এলে শির দিনও ফুরিয়ে যাবে; এটি তিনি ভালোভাবে বুঝেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টিও বিষয়টি বুঝে এবং এ দলও সঙ্কটে নিপতিত হবে। যুদ্ধে জয় বা পরাজয় যাই হোক না কেন, উভয় দেশ মহাবিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। জাপান ১১৭ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়েছে। যদি চীনের বাজার বন্ধ হয়ে যায়, এই অর্থ কাজ দেবে এমন ধারণা করছেন জাপানি অর্থনীতিবিদরা। চীনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, জাপানি কোম্পানিগুলো নিজেদের চীন থেকে উঠিয়ে নিলে ৫০ লাখ চীনা শ্রমিক চাকরি হারাবে। চীনের পিএলএ খুব দ্রুত আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। কিন্তু মিলিটারি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান জিউ কি লিয়ান বলেছেন, চীনের বেশির ভাগ সামরিক মহড়া মাত্র শো। ‘পিএলএ ডেইলি’ এই চমৎকার তথ্য পরিবেশন করেছে। তবে এই তথ্য শত্রুকে বিভ্রান্ত করার জন্য কি-না সেটিও এক প্রশ্ন। চীনের বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্ব নিরন্তর পরিবর্তনের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। নতুনরা জাপান বা পড়শির সাথে বড় বা সর্বাত্মক যুদ্ধ-ঝুঁকি নিতে চাইবে না। চীনের নামকরা সামরিক বিশ্লেষক দাই জু মনে করেন যে, এশিয়ার ঝামেলায় পেন্টাগন নাক গলাবে না, বিশেষ করে জাপানের জন্য যুদ্ধ ঝুঁকি নেবে না।
জাপানকে যুদ্ধ করতে হলে নিজের পুঁজিপাট্টা নিয়ে নামতে হবে। জাপান যদি মনে করে, যুদ্ধ শুরু হলে পেন্টাগন নেমে আসবে, সেটি সঠিক নয়। যদি এমন হতো তবে দ্বীপের দখল নিয়ে আবের আমলেই যুদ্ধ হতো। চীন সব সময় বলে আসছে সমস্যা সমাধানের জন্য উত্তম হলো, আলোচনা-সমঝোতা। যুদ্ধে জয় হলেও পরবর্তী আরো অনেক যুদ্ধের উপকরণ তৈরি হয়। তা ছাড়া চীনের আঞ্চলিক অনেক কাজ রয়ে গেছে যেগুলো না করলে চীনের বৈশ্বিক অগ্রগতিতে সমস্যা থেকে যাবে। সেগুলো সমাধা না করে কোনো যুদ্ধে জড়ানো চীন বুদ্ধিমানের কাজ মনে করে না; যেমন- দোকলাম, আকসাই চিন, হংকং, তাইওয়ান, জিনজিয়াং, তিব্বত, আসিয়ানে প্রতিপত্তি ও প্রভাব, ভারতের পড়শি দেশগুলোর ওপর প্রভাব, দক্ষিণ চীন সাগর ও পূর্বচীন সাগর, ¯প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জ, মেকং অববাহিকা- এসব বিস্তর জরুরি বিষয় রয়েছে, যেগুলো চীন পরাশক্তি হওয়ার সাথে যুক্ত। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, ইলেকট্রনিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এসবেও এগিয়ে যেতে চীন চেষ্টা করছে। এমন এক সন্ধিক্ষণে জাপানের সাথে যুদ্ধে অবর্তীণ হতে চাইবে না চীন। তা ছাড়া জাপানও একইভাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। অলিম্পিকের মধ্যে কোভিড বেড়ে যাওয়ায় তিনটি স্থানে ইমার্জেন্সি দেয়া হয়েছে। এসব সামনে রেখে সুগা কোনো যুদ্ধ করার ঝুঁকি নেবেন না। বহু দিন ধরে চীন বলে আসছে, বিশ্ব শান্তির জন্য চীন কোনো ‘থ্রেট’ নয়। অনেক চীনা সামরিক বিশ্লেষক মনে করেন, এই সময়ে চীন আঞ্চলিক কোনো বড় ধরনের সমস্যায় ‘উইন উইন’ সমাধান হলে সে বিষয়ে যুদ্ধ বাধানোর মতো কোনো কাজে অগ্রসর হবে না। তবে এটাও সত্য কোনো আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে চীনকে চাপ প্রয়োগ করলে, চীন সেটি মানবে না।
এসব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বলা চলে, জাপান বিরুদ্ধাচারণ করলেও বেশি দূর অগ্রসর হবে না। আবের পূর্বসূরি আবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসিহিকো নোদা সেনকাকু-দিয়াউ দ্বীপ জাতীয়করণ করে ঝামেলায় পড়েন যার উত্তাপ আজো চলছে। সুগা সেই বোঝা নিয়ে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করছেন। আবে শত চেষ্টা করেও চীনের সাথে পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে পারেননি। তবে কইজুমু সময়ের পর আবে চীনের সাথে ‘যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি’ সুসম্পর্কের সূত্রপাত করেন নতুন উচ্চতায়। সুগা কি চীন-জাপান সম্পর্ককে ব্যালেন্সে রাখতে পারবেন? কেননা সুগার সাথে নোদার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মিল বেশি। চীন ও জাপান একই দৃষ্টিকোণ থেকে শান্তির আলোকবর্তিকার দিকে চেয়ে আছে। সেনকাকু যেন কোনো কাশ্মির বা থাই-কম্বোডিয়া সীমান্ত সঙ্ঘাতের রূপ না নেয়, আঞ্চলিক সমরবিশারদরা এটিই চাচ্ছেন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব