যে জঘন্য উপায়ে ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল
জেরুসালেম - ছবি সংগৃহীত
ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে ঊনবিংশ শতকে যে জঘন্যতম কর্মকাণ্ড ঘটেছে তা বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামের নেতা ইয়াসির আরাফাতকে হত্যা করার জন্য ইহুদিদের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ছিল তৎপর। তাকে বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়। ১৯৮২ সালে আরিয়েল শ্যারন বৈরুতে আরাফাতকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ১৯৮৫ সালে অল্পের জন্য তিউনিসিয়ায় ইসরাইলি বোমা হামলা থেকে আরাফাত রক্ষা পান। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ইসরাইলি মিসাইল রামাল্লায় তার দফতরে আঘাত হানে। এর অল্প আগেই তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যান। পরে তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়।
মার্কিন সাংবাদিক স্টিফেন লেন্ডম্যান এক প্রতিবেদনে জানান, ‘ওয়াশিংটনের সম্মতি নিয়েই ইসরাইল আরাফাতকে হত্যার সময় ও পদ্ধতি বেছে নেয়। তারা ভেবেছিল, কোনো প্রমাণ থাকবে না। কিন্তু তারা ভুল ভেবেছিল।’ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ তাকে যে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছিল, তার নাম পোলোনিয়াম-২১০। এটি এমন একটি বিষ যে, তার এক গ্রামের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগই মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। মোসাদ গুপ্তহত্যায় বিশ্বের সেরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা ‘সফল’।
ইসরাইল রাষ্ট্রকে পাকাপোক্ত করার জন্য পরপর চারটি যুদ্ধ করে আরব দেশগুলোর ওপর অতর্কিতে সামরিক হামলা চালিয়ে আরব ভূখণ্ড দখল করে নেয় ইহুদিরা। ১৯৪৮ সালে প্রথম ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারপর থেকে প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর চালিয়ে এসেছে অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনসহ চরম অমানবিক কার্যক্রম। আর তাদের কুবুদ্ধির মদদ দিচ্ছে পরাশক্তি আমেরিকা। ইসরাইলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এর অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে আমেরিকাই।
১৯৪৮ সালে ইসরাইল যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করে তখন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ইহুদি রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি দিতে সময় নিয়েছিলেন মাত্র ১১ মিনিট। ১৯১১ সালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বেলফোরের ঘোষণার মাধ্যমে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। অন্যান্য পশ্চিমা রাষ্ট্র দীর্ঘকাল ধরে একই নীতি অনুসরণ করে আসছে। প্রত্যহ ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন হচ্ছে। পুরো গাজায় এখন শুধু অশান্তির বাতাস। পুরো উপত্যকা জ্বলছে, আর ঝরছে আরবদের প্রাণ। রক্ষা পাচ্ছে না নিষ্পাপ শিশুরাও। ১৯১৭ সালে বেলফোর ঘোষণার সময় ফিলিস্তিনে ইহুদি ছিল ৮ শতাংশ।
এর মধ্যে বহিরাগত ইহুদিরা ৬ শতাংশ। বাকি ৯২ শতাংশই ছিল মুসলমান। ফিলিস্তিনের এই ৯২ শতাংশ স্থানীয় অধিবাসীকে অস্ত্রের বলে তাদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় সাম্রাজ্যবাদীদের তাঁবেদার মুসলিমবিদ্বেষী রাষ্ট্র ইসরাইলকে। এ রাষ্ট্রের জন্য ১৯৫৬ সালে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সহযোগিতায় ইসরাইল মিসরের ওপর হামলা চালায়।
১৯২১ সালে ইহুদিরা ‘হাগানা’ নামের একটি জঙ্গি বাহিনী গঠন করে। এ বাহিনী ইহুদিবাদীদের রাষ্ট্র গঠনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৬৭ সালে আমেরিকা ও ব্রিটেনের উসকানিতে ইসরাইল বিমান হামলা করে মিসরের সিনাই, গাজা এলাকা ও জর্দান নদীর পশ্চিম তীর দখল করে নেয়। ১৯৭৩ সালে সিরিয়ায় গোলান মালভূমি দখল করে। এই ইহুদিরাই বনি ইসরাইলের নবীদের হত্যা করেছে। ইসলাম ও নবীদের অবমাননা ইহুদিদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য। আজো ওরা তাদের নবীবিদ্বেষী চরিত্র থেকে মুক্ত হতে পারেনি। ২০১২ সালে সেপ্টেম্বর মাসে নাকুলা বাসিলে নামের ইহুদি নির্মাণ করে ‘ইননোসেন্স অব মুসলিম’ শীর্ষক পবিত্র ইসলাম ও মহানবী সা:-এর অবমাননাকর চলচ্চিত্র। তাকে সহায়তা করেছে কুখ্যাত মার্কিন পাদ্রি টেরি জোন্স। ইহুদি ব্যবসায়ীদের অর্থে ৫০ লাখ ডলার ব্যয়ে নির্মিত ছবিটি বেশ রহস্যজনক। এ চলচ্চিত্রে বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ সা:-এর চরিত্রকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা হয়েছে।
মোসাদের হাতে খুন হন ফিলিস্তিন লিবারেশন অরগানাইজেশনের সাবেক প্রধান ইয়াসির আরাফাতের সহযোগী, আবু জিহাদ ওরফে খলিল আল ওয়াজির। ১৯৮৮ সালে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে ইসরাইল কমান্ডো অভিযান চালিয়ে আবু জিহাদকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের ২৫ বছর পর ইসরাইলি দৈনিক ‘ইয়েদিউথ আহরোনোথ’ ১ নভেম্বর প্রকাশিত এক খবরে তাকে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে।
ইসরাইল ১৯৮১ সালে ইরাকের পারমাণবিক প্রকল্পে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেয় ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র উত্থানের আশঙ্কায়। বায়তুল মোকাদ্দাস শহরে খ্রিষ্টান ধর্মযাজকদের একটি কেন্দ্রে প্রবেশপথে হজরত ঈসা আ: ও তার মা হজরত মরিয়ম আ: সম্পর্কে হিব্রু ভাষায় অশালীন বক্তব্য লিখে তাদের অবমাননা করেছে ইহুদিবাদীরা। ইতালীয় ওয়েবসাইট ‘কাস্টডিয়া টেররা সান্টা’ এই খবর দিয়েছে। ভ্যাটিকানের সাথে সম্পর্কিত এই ওয়েবসাইট জানিয়েছে- মুসলমানদের প্রথম কেবলা অধ্যুষিত জেরুসালেমে বা বায়তুল মোকাদ্দাস শহরের জিহুন বা জায়ান পাহাড়ে ক্যাথলিকদের ধর্মকেন্দ্র, সানফ্রান্সিসকো মনাস্টারির অন্যতম প্রবেশপথের দেয়ালে এই অপকর্ম করা হয়েছে। ইহুদিবাদী দখলদাররা হজরত ঈসা মসিহের জন্ম বৈধ ছিল কি না সেই প্রশ্ন করা হয়েছে, ওই অশালীন দেয়াল লিখন।