এরদোগানের সামনে ৩ চ্যালেঞ্জ
এরদোগান - ছবি : সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে তুরস্ক একটি বড় নির্ণায়ক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। সিরিয়া, লিবিয়া এবং সর্বশেষ আজারবাইজানে সামরিক সক্রিয়তার পর এই অঞ্চলে বিদ্যমান ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন এসেছে।
এরদোগান নির্বাহী রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তুরস্ক নিজেকে নতুন অবস্থানে নিয়ে গেছে তিনটি ঘটনা দিয়ে।
প্রথমত, আঙ্কারা সিরিয়ায় উদ্বাস্তুদের জন্য একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সাথে, একই সাথে সমঝোতা চুক্তি করে। এর বিরুদ্ধে আসাদের সরকারি বাহিনী তৎপরতা শুরু করে একদল তুর্কি সেনাকে হত্যা করলে এর জবাব তুরস্ক এমনভাবে দিয়েছে যাতে আসাদের সরকারি বাহিনী হিজবুল্লাহর সহযোগিতা নিয়েও তুরস্কের ওপর আঘাত করার প্রচেষ্টা আর নেবে না। একই সময়ে পিকেকে’র তৎপরতাকে কেন্দ্র করে এমন কিছু পাল্টা ব্যবস্থা তুরস্ক বিচ্ছিন্নতাবাদী এই গোষ্ঠীর ওপর নিয়েছে যাতে সিরিয়া ও ইরাকের ভূখণ্ড থেকে তুরস্কে আঘাত হানার চিন্তা তারা করবে না।
দ্বিতীয়ত, লিবিয়ায় জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত সরকারকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে পতনোন্মুখ অবস্থা থেকে একটি বিজয়ী শক্তি হিসেবে সমঝোতার টেবিলে হাজির করেছে ত্রিপলির সররাজ সরকারকে। আর ভূমধ্যসাগরের পানিসীমার ব্যাপারে চুক্তি করে তুরস্ক এই অতি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রাঞ্চলে তার প্রয়োজনীয় এখতিয়ার বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। ১৯২৩ সালের বিতর্কিত লুজান চুক্তির মাধ্যমে ভূমধ্যসাগরের প্রাকৃতিক সম্পদের এখতিয়ারকে তুরস্কের জন্য অন্যায়ভাবে অতিসীমিত করার প্রচেষ্টার ব্যাপারে প্রথম কার্যকর একটি অবস্থান তৈরি করেছে তুরস্ক। এই বিষয়টি নিয়ে গ্রিস ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে কিছুটা টানাপড়েন সৃষ্টি হলেও আলোচনা ছাড়া একতরফা কিছু করা যে এখন সম্ভব হবে না তা নিশ্চিত হয়েছে আঙ্কারা।
তৃতীয় বিষয়টি হলো- আজারবাইজানের নাগরনো কারাবাখ আজারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করা। এর মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থে আঞ্চলিক পরাশক্তির মতো একটি অবস্থান তুরস্ক নিশ্চিত করতে পেরেছে। একই সাথে মধ্য এশিয়ার একসময় তুর্কি খেলাফত শাসিত অঞ্চলে প্রভাব তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর পাশাপাশি, তুর্কি সাইপ্রাসকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার স্বীকৃতি আনা গেলে তুরস্কের জন্য প্রভাব বিস্তারের বিরাট সুযোগ আসবে।
২০২০ সাল নাগাদ এই অর্জনে একটি প্রচণ্ড বৈরিতার মুখোমুখি তুরস্ককে হতে হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, স্পেন ও গ্রিসের নেতারা তুরস্ককে নব্য উসমানীয় রাষ্ট্র’ হিসেবে সমালোচনা শুরু করেছেন। ইসরাইল-আমিরাত বলয়ও তীব্র তুর্কিবিরোধী নীতি গ্রহণের আভাস দিতে শুরু করেছে। এরদোগান ২০২১ সালে শক্রতাকে ন্যূনতম করার নীতি নিতে পারেন; যার কারণে ইসরাইল, সৌদি আরব, মিসর ও আমিরাতের সাথে উত্তেজনা কমানোর প্রচেষ্টার আভাস খোদ প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বক্তব্যে এসেছে। তবে এ জন্য ফিলিস্তিন ও উম্মাহ এজেন্ডাকে আঙ্কারা পরিত্যাগ করবে বলে মনে হয় না।
ইসরাইল মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে দুনিয়ার একটি অংশে প্রভাব বিস্তারের যে কার্যক্রম শুরু করেছে তা আসন্ন নির্বাচনে নেতানিয়াহু জয়ী হোক বা না হোক পুরোপুরি পরিত্যক্ত হবে না। দেশটি আরব বিশ্বের মধ্যে সৌদি স্বীকৃতি লাভের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে, বাদশাহ সালমানের রাজত্বকালে যেটি অর্জন প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়। অনারব মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে চারটি দেশের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তেলআবিব। এর মধ্যে চারটি দেশের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে যার মধ্যে রয়েছে- পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ। বড় কোনো অঘটন না ঘটলে পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। বাকি দু’টি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অদূর ভবিষ্যতে কী হবে, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে দু’টি দেশেই মধ্যবর্তী একটি নির্বাচন অনিবার্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।