শীতের সকালে হার্ট অ্যাটাকের শঙ্কা বেশি?
শীতের সকালে হার্ট অ্যাটাকের শঙ্কা বেশি? - ছবি সংগৃহীত
শীতের সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সকালে বাথরুমে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। শীতে যার প্রবণতা অনেকটা বেড়ে যায়। কিছু সতর্কতা মেনে চললে, এই বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে বলে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঠিক কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে? ঘুম ভাঙার পর হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়বেন না। শীতকালসহ সারা বছরই এই নিয়ম মেনে চলা উচিত। ধীরে ধীরে উঠে, বিছানায় ৩০ সেকেন্ড বসার পর নামতে হবে। গরম ঢাকা গায়ে চাপিয়ে যেহেতু আমরা শুয়ে থাকি, তাই এই সময় ঘুম ভাঙার পর বিছানায় বসে থাকা অত্যন্ত জরুরি। শরীরে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক হলেই বিছানা থেকে নামা উচিত।
হঠাৎ করে উঠে বিছানা থেকে নামলে আমাদের মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। যার ফলে অক্সিজেনের অভাবে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
শীতের সময় একেবারেই ঠান্ডা লাগানো যাবে না। অফিসের তারা থাকলে ঘুম থেকে উঠে সটান বাথরুমে গিয়ে মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালবেন না। অনেকেই আছেন যারা গরম পানিতে গোসল করা পছন্দ করেন না। তারা বাথরুমে গিয়ে প্রথমে পায়ে পানি ঢালবেন। তারপর, আসতে আসতে শরীরের উপরে পানি ঢালবেন। মূলত, বিশেষজ্ঞরা এই পরামর্শ তাদের জন্যই দিয়ে থাকেন।
এই সময় তাপমাত্রা কম থাকার জন্য হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনের চাহিদা ও রক্ত সংবহনে পরিবর্তন হয়। হার্ট পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না কিছুক্ষেত্রে। এর পাশাপাশি রক্তচাপ, কোলেস্টেরলসহ একাধিক সমস্যাও মাথাচাড়া দেয়। তাই এই সময়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে একটি সুস্থ ও নিয়ন্ত্রিত জীবনশৈলীর খুব প্রয়োজন।
হাই ব্লাড প্রেসার, হাই কোলেস্টেরল, ধূমপান, ওজন নিয়ন্ত্রণসহ একাধিক বিষয়ে নজর দিতে হবে। যাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, অবসাদ কমাতে হবে। ভালো খাবার খেতে হবে। এই সময় ধূমপান ত্যাগ করাই যথাযথ। অবসাদ কমাতে হবে।
সূত্র : জি নিউজ
শীতে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস
ডা: হুমায়ুন কবীর সরকার
শীতকাল এলেই দেখা যায় অনেকেই ঘন ঘন সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন। এটা কিছুতেই ভালো হতে চায় না। সর্দি-কাশির সাথে থাকে হাঁচি। একবার হাঁচি শুরু হলে যেন থামতেই চায় না। নাক দিয়ে প্রচুর পানি পড়ে। ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন হলে নাক দিয়ে হলুদাভ সর্দিও পড়তে পারে। মাঝে মধ্যে নাক বন্ধ থাকে। নাক বন্ধ থাকার কারণে নাক দিয়ে কোনো কিছুর গন্ধ পাওয়া যায় না। রাতে শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে। অনেক সময় চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখ লালচে হতে পারে। বছরের অন্যান্য সময়ে এ সমস্যাগুলো কিন্তু এতটা প্রকট আকারে দেখা যায় না যতটা না শীতকালে দেখা যায়। ওপরের সমস্যাগুলো সাধারণত অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে দেখা যায়। এটা এক ধরনের অ্যালার্জি। ধুলাবালি, ফুলের পরাগরেণু, হাউজ মাইট, ঠাণ্ডা বাতাস ইত্যাদি এসব সমস্যা দেখা দেয়। এগুলোকে বলে অ্যালার্জেন। এ রোগে চিকিৎসার একমাত্র ভালো উপায় হলো রোগ প্রতিরোধ করা তথা যে কারণে এটি বেড়ে যায় তা পরিহার করা।
এ জন্য প্রথমেই শনাক্ত করুন কিসে আপনার হাঁচি-কাশি বাড়িয়ে দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় নাক দিয়ে ধুলাবালি ঢুকলে বেশি হাঁচি হচ্ছে। কাজেই তাকে ধুলাবালি পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাক্স ব্যবহার করতে হবে। ঘরকে ধুলাবালুমুক্ত রাখুন। বাসায় কার্পেট ব্যবহার করবেন না, শোয়ার ঘরে তো নয়ই। বিছানায় লোমযুক্ত চাদর, কাথা, লেপ, কম্বল ও বালিশ ব্যবহার করবেন না। বিছানা অন্য কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন যেন ধুলাবালি না পড়ে। মাইট রাইনাইটিসের অন্যতম কারণ।
এগুলো মেরে ফেলার জন্য সপ্তাহে একদিন চাদর, বালিশ ধুয়ে কমপক্ষে এক ঘণ্টা রোদে শুকাতে হবে। এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার করলে ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। সকাল-বিকেল কুসুম গরম পানি বা নরমাল স্যালাইন দিয়ে নাক পরিষ্কার করবেন। এমনকি পানিতে লবণ গুলিয়েও তা দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে পারেন। এতে করে অ্যালার্জেন সহজেই শরীরের বাইরে চলে যাবে ও নাকের অতিরিক্ত ক্ষরণ কমিয়ে আপনার সমস্যা দূর করবে। কুসুম গরম পানি পান করুন। ঠাণ্ডা লাগাবেন না। বাইরে বেরুলে শীতের কাপড় পরুন। যে খাবারে অ্যালার্জি আছে তা পরিহার করতে হবে।
ফ্রিজের খাবার যতটা সম্ভব এগিয়ে চলুন। অনেকের ক্ষেত্রে নন-অ্যালার্জিক রাইনাইটস দেখা যায়। ধূমপান করলে এ সমস্যা বেশি হয়। তাই নিজে তো ধূমপান করবেনই না কেউ ধূমপান করলে সে স্থান থেকে সরে আসুন। রাইনাইটিসের চিকিৎসা হিসেবে অ্যান্টিহিসটামিন যেমন : লোরাটিডিন, ডেসলোরাটিডিন, ফিক্সোফেনাডিন ও স্টেরয়েড় জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হতে পারে। বন্ধ নাক খোলার জন্য ন্যাজাল ডিকনজেসটেন্ট যেমন : জাইলোমেটাজোলিন নাকের ড্রপ দিতে হবে। সেই সাথে নাক দিয়ে গরম পানি ভাপ টানতে হবে। আধুনিক চিকিৎসার মধ্যে আছে লেজার টারবিনেকটমি অপারেশন। বেশি সমস্যা দেখা দিলে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।