কারা এই মরো মুসলিম?

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Jan 03, 2021 01:41 pm
মরো মুসলিম

মরো মুসলিম - ছবি সংগৃহীত

 

মিন্দানাও বা দক্ষিণ ফিলিপাইনের পশ্চিম অঞ্চলে মোরো জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। মোরো আসলে একটি সামগ্রিক জাতিগত নাম- ১৭টি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী এর অন্তর্গত। এর মধ্যে আছে সামা, বাজাও, জামা মাপুন, তাউসুগ, সুলুক, ইরানুন, কালাগান, মারানাও, মাগিন্দানাও, পালাওয়ানন, মলবগ, সাঙ্গিল, ইয়াকান, সুবানন, কালিবুগান, বাঙ্গিঙ্গি ও সাঙ্গির। এরা সবাই প্রধানত ইসলাম ধর্মাবলম্বী। ‘মোরো’ নামটি মুর শব্দের স্পেনীয় রূপান্তর হিসেবে এসেছে। উত্তর আফ্রিকার আরব-বারবাররা ৭৮১ বছর ধরে স্পেন শাসন করার সময় তাদের ‘মুর’ বা ‘মোরো’ বলা হতো। ১৫৬৫ সালে ফিলিপাইনে আসার পর স্পেনীয় উপনিবেশকারীরা দক্ষিণ ফিলিপাইনের মুসলিম জাতিগোষ্ঠীগুলোকে মুসলিম হওয়ার কারণে ‘মোরো’ নাম দেয়।

মোরো জাতি সব সময়েই স্বাধীনচেতা ছিল। ফিলিপাইনে স্পেনীয় শাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে জোরদার প্রতিরোধ গড়ে তোলে মোরোরাই। ৩৩৩ বছর ধরে স্পেনের অধীনে থাকা ফিলিপাইনে মোরোরাই শুধু স্পেনীয়দের আধিপত্য অস্বীকার করে চলেছিল। স্পেনীয়দের হাজারো প্রচেষ্টা ও ক্রমাগত সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কখনোই আত্মসমর্পণ করেনি মোরোরা। আঠারো দশকের শেষে এসে স্পেন সরকার মোরো অনেকখানি পর্যুদস্ত করতে সক্ষম হলেও সম্পূর্নভাবে বশীভূত করতে সক্ষম হয়নি।

এরই মধ্যে স্পেনীয়-মার্কিন যুদ্ধ শুরু হলে ১৮৯৮ সালে স্পেনের আরও অনেক উপনিবেশসহ ফিলিপাইনও মার্কিন দখলে চলে যায়। কিন্তু মার্কিন উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধেও তীব্র বিদ্রোহ করে মোরোরা। প্রথম দিকে মার্কিন সেনাবাহিনী স্থানীয় সুলু সুলতানাতের সাথে সন্ধি করে। কিন্তু তাদের লক্ষ্য ছিল প্রথমে উত্তর ফিলিপাইনকে নিয়ন্ত্রণে আনা, যাতে পরে মোরোদের বশ করা সহজসাধ্য হয়। অবশ্য চুক্তির পরও মোরোদের হাতে মার্কিন সেনা ও অন্যান্য বেসামরিক লোকদের হতাহতের ঘটনা ঘটে। ১৯০৪ সালে মার্কিন সেনারা মিন্দানাওকে দখল করতে সামরিক অভিযান চালায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান মোরোদের মাতৃভূমি মিন্দানাওসহ ফিলিপাইন ও পূর্ব এশিয়ার বিশাল এলাকা দখল করে। এ সময় জাপানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও সংগ্রাম করে মোরোরা। তারা অবশ্য মার্কিন ও ফিলিপিনোদের থেকে কোনো ধরনের সহায়তা গ্রহণ করেনি।

মার্কিন আমল থেকেই মিন্দানাওয়ে উত্তরের লুজন ও ভিসায়াস অঞ্চল থেকে বিভিন্ন জাতির ফিলিপিনোদের বসত স্থাপন করানো হয়। ফিলিপিনো সরকারের আমলে এই অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ তুঙ্গে ওঠে। বসতকারী অন্য ফিলিপিনোরা প্রায় সবাই মূলত খ্রিস্টান। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মোরোসহ মিন্দানাওয়ের অন্য আদিবাসীরা বাস্তুচ্যুত হয়। মোরো বিদ্রোহের পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ এই ভূমি বিরোধ। খ্রিস্টান ফিলিপিনোরা সাধারণত মিন্দানাওয়ের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে বসতি স্থাপন করে। মার্কিন ও ফিলিপিনো সরকার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে খ্রিস্টানদের প্রাধান্য দেয়। ফলে মোরোদের ঐতিহ্যবাহী প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। এর পাশাপাশি মিন্দানাওয়ের খনিজ সম্পদ ঢালাওভাবে আহরণ করা শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার। বিপুল পরিমানে বহিরাগতদের বসতি স্থাপনের জন্য ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি ও বন উজাড় করে ঘরবাড়ি নির্মান করা হয়। এসব কর্মকান্ড স্থানীয় পরিবেশের প্রচুর ক্ষতিসাধন করে। মোরোদের দারিদ্র্যের কোনো সুরাহা অবশ্য হয়নি।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us