হাঁস না মুরগি, কার ডিমে বেশি পুষ্টি
হাঁস না মুরগি, কার ডিমে বেশি পুষ্টি - ছবি : সংগৃহীত
ডিমের পুষ্টিগুণ আমাদের সবার জানা। ডিম খেতে মোটামুটি সবাই ভালোও বাসেন। তবে পছন্দের ক্ষেত্রেও রকমফের আছে। কেউ হাঁসের ডিম খেতে পছন্দ করেন, কেউ আবার মুরগির। হাঁসের ডিমে একটা আঁশটে গন্ধ রয়েছে, যার জন্য অনেকেই খেতে চান না। আবার অনেকের মুরগির ডিমে অরুচি। কিন্তু জানেন কি কোন ডিমে পুষ্টি বেশি আছে?
পুষ্টিবিদদের মতে, মুরগির ডিমের থেকে হাঁসের ডিম বেশি উপকারি। আজ এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন, মুরগির ডিমের থেকে হাঁসের ডিম কেন বেশি উপকারি।
পুষ্টিগুণ
১০০ গ্রাম হাঁসের ডিম থেকে এনার্জি পাওয়া যায় ১৮৫ কিলো ক্যালোরি। যেখানে ১০০ গ্রাম মুরগির ডিমে থাকে ১৪৯ কিলো ক্যালরি এনার্জি। কার্বহাইড্রেট ও মিনারেলের পরিমাণ সমান হলেও হাঁসের ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ থাকে বেশি। দুই ডিমেই থাকে ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা, তামা, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও আয়রন। তবে সব উপাদান হাঁসের ডিমে বেশি পরিমাণ থাকে।
খাদ্যশক্তিও বেশি থাকে হাঁসের ডিমে। প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে ১৮১ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি থাকে। সেখানে মুরগির ডিমে পাওয়া যায় ১৭৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি। হাঁসের ডিমের ফ্যাট থাকে ১৩.৭ গ্রাম, মুরগির ডিমে থাকে ১৩.৩ গ্রাম। ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে ক্যালসিয়াম থাকে ৭০ মিলিগ্রাম, লোহা ৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ২৬৯ মাইক্রোগ্রাম থাকে। মুরগির ডিমে ক্যালসিয়াম রয়েছে ৬০ মিলিগ্রাম, লোহা রয়েছে ২.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ রয়েছে ২৯৯ মাইক্রোগ্রাম।
সাইজে বড় হয়
হাঁসের ডিম এবং মুরগির ডিমের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো হাঁসের ডিম প্রায় ৫০ শতাংশ বড় হয়। হাঁসের ডিম দেখতেও একটু অন্যরকম হয়।
হাঁসের ডিম দীর্ঘদিন ভালো থাকে
হাঁসরা সাধারণত পানির ধারে ডিম পারে, সে কারণে হাঁসের ডিমের বাইরের অংশ শক্ত হয়। শক্ত হওয়ার কারণে অনেক দিন পর্যন্ত ডিম ভালো থাকে। তাড়াতাড়ি ভাঙেও না।
কুসুম বড় হয়
হাঁসের ডিমের কুসুম মুরগির ডিমের থেকে বড় হয়। ফ্যাটের পরিমাণও বেশি থাকে। ক্রিমের মতো হয় হাঁসের ডিম। বেশি প্রোটিন থাকে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে হাঁসের ডিমে। প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ থাকে ১৩.৫ গ্রাম এবং ১০০ গ্রাম মুরগির ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ থাকে ১৩.৩ গ্রাম৷ যাদের মুরগির ডিমে এলার্জি থাকে তারা হাঁসের ডিম খেতে পারেন।
নিউট্রিশনে ভরপুর
হাঁসের ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ এবং ডি, আয়রন মুরগির ডিমের থেকে বেশি থাকে।
ফ্যাট
১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে ৩.৬৮ গ্রাম। যেখানে ১০০ গ্রাম মুরগির ডিমে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ থাকে ৩.১ গ্রাম। হাঁসের ডিমে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ মুরগির ডিমের থেকে ৫০ শতাংশ বেশি থাকে। অ্যামাইনো অ্যাসিডের পরিমাণ মুরগির ডিমের থেকে হাঁসের ডিমে বেশি থাকে। তবে মুরগির ডিমেও থ্রিয়োনিন, আইসোলিউসিন, ট্রিপটোফ্যান, লিউসিন, মিথায়োনিন, লাইসিন, কিস্টিন, টাইরোসিন, ভ্যালিন, সেরিন, গ্লাইসিন, প্রোলিন, অ্যাসপারটিক অ্যাসিড, হিস্টিডিন, অ্যালানিন ও আর্জিনিনের মতো অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে।
উপকারিতা
ভিটামিন বি ১২ থাকে হাঁসের ডিমে, যা হার্টের সমস্যা ও ক্যান্সার থেকে দেহকে বাঁচায়। ভিটামিন-এ রক্ত ভালো রাখে এবং স্কিন ভালো রাখে। সেলেনিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। হাঁসের ডিমে থাকা কোলিন লিভারকে কোলেস্টেরল থেকে বাঁচায়। পেশি মজবুত রাখতেও সাহায্য করে। এটি রিবোফ্ল্যাভিন (বি ২) সমৃদ্ধ, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট শরীর সুস্থ ও চনমনে রাখবে।
হাঁসের ডিম বেশি পুষ্টিকর হলেও এই ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণও বেশি থাকে। ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ থাকে ৮৮৪ মিলিগ্রাম, সেখানে ১০০ গ্রাম মুরগির ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ মাত্র ৪২৫ মিলিগ্রাম। তাই হার্টের সমস্যা থাকলে হাঁসের ডিম না খাওয়াই ভালো। হাই প্রোটিন ডায়েট মেনে চললে হাঁসের ডিমের সাদা অংশটা শুধু খান।
সূত্র : বোল্ডস্কাই