আজারবাইজানে এবার তুর্কি বাহিনী
তুর্কি ট্যাঙ্ক - ছবি : সংগৃহীত
যুদ্ধবিধ্বস্ত নাগরনো-কারাবাখের যৌথ যুদ্ধবিরতি তদারকি কেন্দ্রে কাজের দায়িত্ব পাওয়া তুর্কি সৈন্যরা আজারবাইজানে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার এক ভার্চুয়াল বার্ষিক মূল্যায়ন সভায় এ কথা ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা আজারবাইজানে গিয়েছে, সেখানে অবস্থান নিয়েছে। যৌথ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ সমাপ্তি এবং এটি কার্যকর হওয়ার পর আমাদের একজন জেনারেল ও ৩৫ জন সামরিক কর্মকর্তা অবিলম্বে তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করবেন।’
তুরস্কের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল ইয়াশার গুলেরসহ অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তা ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয় নির্দেশ করে হুলুসি আকার স্মরণ করেন, আর্মেনিয়া দখল করে রাখা ভূমি প্রায় ৩০ বছর পর মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে আজারবাইজান।
১০ নভেম্বর রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া যুদ্ধবিরতি ও পূর্ণাঙ্গ সমাধানে কাজ করার চুক্তি স্বাক্ষর করে। তুরস্ক ও রাশিয়া পরে এ শান্তিচুক্তি তদারকি করতে একটি যৌথ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। আর্মেনিয়ার কাছ থেকে দখলমুক্ত করা আজারবাইজানি ভূমিতে এ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তানুসারে, নাগরনো-কারাবাখে প্রায় দুই হাজার রুশ শান্তিরক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অঞ্চলটিতে তারা কমপক্ষে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করবে। তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে অঞ্চলটিতে যুদ্ধবিরতি তদারকিতে যৌথ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় তুরস্ক ও রাশিয়ার চুক্তি স্বাক্ষরের পর গত মাসে তুরস্কের পার্লামেন্ট আজারবাইজানে তুর্কি শান্তিরক্ষী মোতায়েনের প্রস্তাব অনুমোদন করে।
ডিসেম্বরের শুরুতে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ জানান, আগদাম অঞ্চলে এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।
হুলুসি আকার জানান, তুর্কি সামরিক বাহিনী অঞ্চলটিতে মাইন ও বিস্ফোরক পরিষ্কারের কাজ করবে। তুর্কি সামরিক বাহিনীর মাইন পরিষ্কারে বিশেষজ্ঞ ১৩৫ সদস্যের দু’টি দল আর্মেনিয়ার কাছ থেকে দখলমুক্ত করা ভূখণ্ডে আজারবাইজানের সেনাবাহিনীকে এ কাজে সহায়তা করবে। পাশাপাশি তারা আজারবাইজানি সৈন্যদের মাইন শনাক্ত ও পরিষ্কারের কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করবে।
তিনি বলেন, ‘মানবিক সেবার অংশ হিসেবে আমরা আমাদের আজারবাইজানি ভাই ও বোনদের সহায়তায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছি এবং তা অব্যাহত রাখবো। আমরা তাদের ন্যায্য ও মর্যাদার লড়াইয়ে সহায়তা করেছি এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবো।
মঙ্গলবার অপর এক বিবৃতিতে আজারবাইজানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ‘তুরস্ক ও আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী আর্মেনিয়ার দখল থেকে সদ্যমুক্ত আগদাম অঞ্চলে মাইন শনাক্ত ও ধ্বংসের যৌথ প্রচেষ্টা শুরু করেছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, চাষের জমি ও সংযোগকারী সড়ক থেকে সৈন্যরা মাইন ও অবিস্ফোরিত শেল পরিষ্কার করছে। মাইন ও শেল পরিষ্কারের বিভিন্ন ফুটেজ প্রকাশেরর সাথে সাথে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ‘মুক্ত ভূখণ্ডসমূহে অবিস্ফোরিত শেল ও মাইন শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করার কাজ অব্যাহত থাকবে।’
১৯৯১ সালের পর থেকেই সাবেক দুই সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে উত্তেজনাকর সম্পর্ক চলে আসছে। আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের ভূমি হিসেবে স্বীকৃত নাগরনো-কারাবাখ ও এর সাথে সংযুক্ত সাতটি অঞ্চল আর্মেনিয়া দখল করলে উত্তেজনা আরো বাড়ে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর, আর্মেনীয় বাহিনী সাধারণ মানুষ ও আজারবাইজানের সামরিক বাহিনীর ওপর হামলা করলে নতুন করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
৪৪ দিনের সংঘর্ষে প্রায় তিন দশকের আর্মেনিয়ার দখলদারিত্বের পর আজারবাইজান বিভিন্ন শহর ও তিন শ’র কাছাকাছি বসতি ও গ্রাম মুক্ত করে।
যুদ্ধবিরতির এ চুক্তিকে আজারবাইজানের জন্য বিজয় ও আর্মেনিয়ার পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী, আর্মেনিয়া দখল করা ভূখণ্ড থেকে তার সেনাবাহিনী সরিয়ে নিতে বাধ্য থাকবে।
স্বন্ধি চুক্তি থাকলেও আর্মেনিয়া একাধিকবার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রানুসারে, আর্মেনিয়ার হামলায় এক আজারবাইজানি সৈন্য ও এক বেসমারিক নাগরিক নিহত এবং অপর কয়েকজন আহত হন।
সূত্র : ডেইলি সাবাহ