কী ঘটতে যাচ্ছে তুরস্কে

মাসুম খলিলী | Dec 29, 2020 03:45 pm
এরদোগান

এরদোগান - ছবি সংগৃহীত

 

বিশ্ব পরিস্থিতির এক ক্রান্তিকালে এসে মধ্যপ্রাচ্যের উদীয়মান শক্তি, তুরস্ক এখন বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ন্যাটোর দ্বিতীয় বৃহত্তম সদস্য দেশ হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। নিষেধাজ্ঞার আওতা আরো বাড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে। রাশিয়ার কাছ থেকে এস৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনাকে আমেরিকার বিধিনিষেধ আরোপের মূল কারণ হিসেবে দেখানো হলেও তুরস্কের মুসলিম বলয়ে স্বতন্ত্র অবস্থান গ্রহণকে পাশ্চাত্য স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে বলে মনে হয় না। আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বাণিজ্যের বাজারে তুরস্কের উত্থানকেও ইউরোপ-আমেরিকা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে বলে মনে হয়।

আঙ্কারার জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিতে পারে আমেরিকান অবরোধ প্রতিরক্ষা খাত থেকে বাণিজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত হলে। এ উদ্যোগে ইউরোপীয় ইউনিয়নও সম্পৃক্ত হয়ে গেলে বিপদের বিষয়টি আরো গভীর হতে পারে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা ধরনের তৎপরতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত রাশিয়ান জেনারেল লিওনিদ ইভাশভ সম্প্রতি বলেছেন, ‘তুরস্ক স্পষ্টতই তুরান প্রকল্পের (আজারবাইজানের ওপর নিয়ে যাওয়া ইউরোপমুখী বিকল্প গ্যাস পাইপলাইন) দিকে অগ্রসর হচ্ছে আর আমরা পাশে দাঁড়িয়ে অলসভাবে দেখছি। সময়ের সাথে সাথে রাশিয়া এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠবে।’ তিনি ইঙ্গিত দেন যে, ক্রিমিয়া, আজারবাইজান এবং তুর্কি প্রজাতন্ত্রগুলোতে উদ্বেগের সাথে ক্রেমলিন তুরস্কের নীতি অনুসরণ করছে।

অন্য দিকে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কেউ কেউ বলছেন, ‘তুরস্ক অনেক ‘বেড়ে গেছে’। এটি ইউরোপের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আটলান্টিক অক্ষ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে দেশটি। আঙ্কারা পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ থেকে সরে যাচ্ছে এবং এর নতুন কেন্দ্রীয় শক্তি তৈরি করছে। নিজস্ব আঞ্চলিক অববাহিকা তৈরি করছে দেশটি। এটি ককেশাস, লিবিয়া, লোহিত সাগর, পারস্য উপসাগর, মধ্য আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের সেরা সক্ষমতা অর্জনের পক্ষে প্রভাব বাড়িয়ে নিচ্ছে। তুরস্ক পশ্চিমের ঔপনিবেশিক ডোমেইনগুলোকে সঙ্কুচিত এবং অটোমান সাম্রাজ্যের প্রভাব ও আধিপত্য পুনর্গঠন করছে। এ তৎপরতায় আমাদের অবশ্যই হস্তক্ষেপ করতে হবে, এসব বন্ধ করতে হবে! দেশটি কিছুতেই থামছে না। এটি ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, এমনকি জার্মানির মতো ইইউ দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়েও হস্তক্ষেপ করে। ভূমধ্যসাগরে পুরো ইইউর বিরুদ্ধে লড়াই করছে আঙ্কারা। তুরস্কের ‘রাজনৈতিক ওজন’ ইইউর মোট ওজনকে যেন ছাড়িয়ে গেছে। আমরা ওই অঞ্চল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার সময়, তুরস্ক পুরো গতিতে বিশ্বের কাছে নিজেকে উন্মুক্ত করে চলেছে।’

আরো বলা হচ্ছে, ‘প্রথম দিকে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পক্ষের দেশ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখন এটি আর মার্কিন স্বার্থের জন্য চেষ্টা করে না, বরং তার নিজস্ব স্বার্থের জন্য নিজস্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে চলেছে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের বিরুদ্ধেও দেশে এবং বিদেশে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তুরস্ক পশ্চিমা স্বার্থের জন্য একসময় সম্মুখ লড়াইয়ে থাকত, এখন তা পশ্চিমাদের জন্য হুমকিতে পরিণত হচ্ছে। এই অবস্থায় আমাদের অবশ্যই হস্তক্ষেপ করা উচিত। অবশ্যই তুরস্ককে থামাতে হবে।’

এদিকে ইসরাইল, আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং তাদের প্রভাবাধীন আঞ্চলিক দেশগুলোতেও বলা হচ্ছে, ‘তুরস্ক অটোমান বা ওসমানী সাম্রাজ্য পুনর্গঠন করছে। একটি নতুন শক্তি হিসেবে এর আবির্ভাব হচ্ছে। এই বাহিনীকে যদি থামানো না যায়, তবে তারা পুরো অঞ্চলটিকে তাদের প্রভাবের অধীনে নিয়ে যাবে।’ তারা একটি তুরস্কবিরোধী ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিটি ফ্রন্টে এর বিরুদ্ধে লড়াই করার কথাও বলছেন।
অন্য দিকে, ইরানও তুরস্ক একটি শক্তিশালী শক্তি হওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। ইরান তার প্রভাব বিস্তারের প্রক্রিয়াতে ককেশাস, মধ্য প্রাচ্য এবং মধ্য এশিয়ার প্রতিটি অঞ্চলে তুরস্কের সাথে প্রবেশ করতে চাইছে। ফলে তারাও অন্য দেশের সাথে, অন্য শক্তির সাথে তুরস্ককে আন্তরিকভাবে বন্ধ করতে প্রস্তুত বলে মনে হয়।
কিছু সূত্র এমনও আলোচনা করছে যে, এভাবে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে তুরস্কের ভূরাজনৈতিক পরিকল্পনা, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় এর লক্ষ্যগুলো, পাশাপাশি মধ্য আফ্রিকাতে দেশটির কার্যক্রমকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে পারে চীনও।

রাশিয়াকে উসকে দেয়ার জন্য বলা হচ্ছে, ইউক্রেন ও কারাবাখের জয়ের উদাহরণ অনুসরণ করার কথা ভাবছেন। তারা মনে করছেন, রাশিয়ার অধীনে থাকা অঞ্চলগুলোও একইভাবে ‘মুক্তি’ পেতে পারে। ইউক্রেনের মতো অনেক দেশ তুরস্ককে রোলমডেল হিসেবে দেখে এবং এই পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সন্ধান করে আসছে।

তবে তুরস্ককে আটকে রাখার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণের কাজ নানা কারণে সহজ সমীকরণ হবে না। প্রথমত, তুরস্ক ন্যাটো জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক শক্তি। সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে অপারমাণবিক শক্তির দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দেশটি। দ্বিতীয়ত, তুরস্কের ভূরাজনৈতিক অবস্থান ইউরোপ-এশিয়ার সংযোগস্থলে। দেশটি একসময় এশিয়ার বিশাল একটি অংশের পাশাপাশি প্রায় অর্ধেক ইউরোপ শাসন করেছে। প্রথম মহাযুদ্ধের ‘পরাজিত’ শক্তি হিসেবে তুর্কি খেলাফতের রাষ্ট্রগুলোকে বিচ্ছিন্ন, উপনেবিশীকরণ এবং ‘স্বাধীন’ দেশে পরিণত করা হয়। তুর্কি বংশোদ্ভূত জাতিগোষ্ঠীও অনেকগুলো স্বাধীন দেশে বিভক্ত হয়ে আছে। এই নৃতাত্ত্বিক যোগসূত্রও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয়ত, তুরস্কের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও অর্থনৈতিক বিকাশকে যে চুক্তির অধীনে সীমিত করে ফেলা হয় সেই ‘লুজান চুক্তি’র ১০০ বছর মেয়াদ পূর্ণ হতে যাচ্ছে। শতক পার হলে চুক্তি কার্যকর করার জন্য নবায়ন করতে হয়। এর অর্থ অবশ্য এই নয় যে, লুজান চুক্তির অধীনে যে ভূখণ্ড স্বাধীনে রাষ্ট্রে পরিণত রয়েছে সেসব দেশ আবার তুরস্কের অংশ হয়ে যাবে। তবে বসফরাস প্রণালী থেকে রাজস্ব আহরণ অথবা ভূমধ্যসাগরের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে যে বাধা বিপত্তি সেগুলো আর নাও থাকতে পারে। চতুর্থত, জ্ঞানবিজ্ঞান প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও সামরিক শক্তি দিয়ে যে কোনো দেশ যেভাবে প্রতিপত্তিশালী হয়ে ওঠে, সেসব ক্ষেত্রে তুরস্কের তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। জ্ঞানবিজ্ঞান প্রযুক্তিতে ও শিক্ষা গবেষণায় দেশটির অর্জন ইউরোপের শীর্ষ দেশগুলোর সাথে তুলনীয়। অন্য দিকে, তুরস্কের আবিষ্কৃত সামরিক ড্রোন যুদ্ধক্ষেত্রে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

এর মধ্যে সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য দেশটিতে একটি নিরাপদ অঞ্চল গঠন এবং আইএস ও কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী হুমকি দূর করার ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছে আঙ্কারা। লিবিয়ায় খলিফা হাফতার বাহিনী কর্তৃক জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান ব্যর্থ হয়েছে তুর্কি সহায়তায়। সর্বশেষ। আজারবাইজান ৩০ বছর পর নাগরনো কারাবাখ অঞ্চল আর্মেনিয়া থেকে ফিরে পেয়েছে তুরস্কের সামরিক সহায়তায়।
অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে তুরস্কের একেপি সরকার ২০০২ সাল থেকে একনাগাড়ে ক্ষমতায় রয়েছে। একেপি প্রথমবার ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে তাদের ভোটের অংশীদারিত্ব বেড়েছে। রাষ্ট্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ দলের রাজনৈতিক প্রভাব বেড়েছে বিশেষভাবে। সর্বশেষ, ২০১৬ সালে গুলেন মুভমেন্টের সমর্থনে সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে একেপিকে প্রতিরোধ করার মতো শক্তি দুর্বল হয়ে যায়।

এসব বাস্তবতার কারণে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বা তার দর্শনকে অপছন্দ করলেও তুরস্কের অখণ্ডতা ও জাতিগতভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়াকে যারা পছন্দ করেন, তারা এরদোগানের রাজনীতির বিরোধিতা করতে পারছেন না। সিরিয়া, লিবিয়া এবং আজাইবাইজানে তুরস্কের সামরিক ভূমিকার বিষয়টি সংসদে নিরঙ্কুশভাবে পাস হয়েছে। এমনকি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সাথে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের যে টানাপড়েন দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে তুর্কি রাজনৈতিক দলগুলো ফ্রান্সকে সমর্থন করেনি।

এ ধরনের একটি অবস্থায় রাশিয়ার সাথে একটি ন্যাটো সদস্য দেশ হিসাবে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেটি এরদোগান জানতেন। কিন্তু তিনি এও জানতেন, ন্যাটোর অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশগুলোর অঙ্গীকার তুরস্কের অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রশ্নাতীত নয়। কুর্দি দল পিকেকের সিরীয় মিত্রকে সমর্থন দিয়ে তাদের বড় এক সিরীয় ভূখণ্ডে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগদানের পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তুরস্ককে সরবরাহে অস্বীকৃতি ও এস৩৫ বিমান অগ্রিম অর্থ নেয়ার পরও সরবরাহ না করা আর সে দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের পেছনে গোপন মদদ তুর্কি নেতৃত্বকে ন্যাটোর নেতৃস্থানীয় দেশ, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সন্দিহান করেছে। তুর্কি বিমানবাহিনীর আঘাতে দুটি রুশ বিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হলে ন্যাটোর পক্ষ থেকে তুরস্ক কাক্সিক্ষত সহযোগিতা পায়নি।

এসব কারণে এরদোগান ন্যাটো জোট ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর একক নির্ভরতাকে দেশটির নিরাপত্তার জন্য কল্যাণকর মনে করেননি। ফলে রাশিয়া এবং ক্ষেত্র বিশেষে চীনের সাথেও সম্পর্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে নতুন পরিস্থিতিতে উত্তেজনা বা বৈরিতাকে বাড়তে দেয়া আঙ্কারার কৌশলগত সমীকরণের জন্য ইতিবাচক হবে বলে মনে হয় না।

তুরস্কে সবাই প্রত্যাশা করেন যে, ২০২১ আরো ভালো বছর হবে দেশটির জন্য। গত সপ্তাহে এক বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এরদোগান বলেছেন, তিনি আশা করছেন যে, সমস্ত ইউরোপীয় দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র নতুন বছরে একটি পরিষ্কার স্লেট দিয়ে যাত্রা শুরু করবে।
এই আশা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, রাশিয়া এবং মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আঙ্কারা এখনো পশ্চিমা জোটের অংশ হতে চায়। বহুমুখী বিদেশ নীতি হিসেবে এটিকে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়।

আঙ্কারা মনে করে, এই নীতিটি কেবল তুরস্ক নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও উপকৃত করেছে, যেহেতু দেশটি কৌশলগতভাবে এমন একটি অবস্থানে অবস্থিত যেখানে এটি মধ্যপ্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ তুরস্কের অবস্থান বুঝতে হবে। আঙ্কারা পূর্ব ইউরোপীয় অঞ্চলে দ্বৈত মানদন্ডের মুখোমুখি হয়েছে এবং প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কট নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা অন্যায় আচরণ পেয়েছে বলে অনুভব করে। এই কারণে, আঙ্কারা রাশিয়ান এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর শক্তিশালী সদস্য এবং কৌশলগত অংশীদারের সাথে তার জ্ঞানপ্রযুক্তি ভাগ করে নিতে রাজি ছিল না।

এই অবস্থায় এরদোগান সংলাপের মধ্য দিয়েই বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করার বিষয়ে ভাবছেন বলে মনে হয়। তিনি এই সমস্যাগুলোকে ‘কৃত্রিম অ্যাজেন্ডা’ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন যে, এই মতভেদ ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউয়ের সাথে তুরস্কের সম্পর্ককে পরীক্ষায় ফেলেছে, তবে আমরা আশা করি, বিষয়গুলোর উন্নতি হবে।’

তুর্কি বিশ্লেষকদের ধারণা, মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো তুর্কি জনগণের মধ্যে পশ্চিমা ও আমেরিকাবিরোধী মনোভাবকে গভীরতর করা ছাড়া আর কিছুই অর্জন করতে পারবে না। ওয়াশিংটন এই বাস্তবতাটি দেখবে এবং জো বাইডেন প্রশাসন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবে। আঙ্কারা আশাবাদী, বাইডেন মিত্রদের মধ্যে সমস্যা সমাধানে আরো গঠনমূলক হবেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, নানা বিপত্তির মধ্যেও তুরস্ক-ইইউ সম্পর্কের উন্নতি এ বছর হতে পারে। তবে এ জন্য গঠনমূলক সংলাপের প্রয়োজন। এই গঠনমূলক সংলাপটি ২০০৪ এবং ২০০৫ সালে হয়েছিল। তুরস্ক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশির ভাগ দেশের জনমত এ ব্যাপারে খুব সমর্থনকারী ছিল। কারণ রাজনীতিবিদরা বেশ গঠনমূলক ছিলেন এবং মিডিয়া একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করেছিল। তুরস্কেরও সেই সময় খুব বড় সমস্যা ছিল। পারস্পরিক শুভেচ্ছাই তুর্কি গণতন্ত্রের দ্বারা প্রতিবন্ধকতার অনেকগুলো কাটিয়ে উঠতে সফল হয়েছিল। তুরস্ক এবং ইইউ উভয়ই আবার এটি করতে পারে।

এরদোগান এই পথে অগ্রসর হতে চাইছেন বলে মনে হয়। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে নতুন ও দক্ষ কূটনীতিদের নিয়োগ দিয়েছেন। সৌদি আরবের সাথে দূরত্ব কমানোর ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। এমনকি, ইসরাইলের সাথেও দূরত্ব কমিয়ে আনার কথা তিনি সরাসরি বলেছেন। কূটনৈতিক উত্তেজনা নিরসনে এরদোগান সফল না হলে ২০২৩ সালে পরবর্তী যে নির্বাচন রয়েছে তখন তুরস্কবিরোধী শক্তি সর্বাত্মকভাবে একেপিকে ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস চালাবে। তুর্কি সাংবাদিক ও ‘ইনি সাফাক’ পত্রিকার সম্পাদক ইব্রাহিম কারাগুল তার সাম্প্রতিক এক কলামে এর কিছুটা তুলে ধরে বলেছেন, তুর্কিকে থামানোর বাইরের প্রচেষ্টার সাথে ভেতরের রাজনৈতিক শক্তি সিএইচপির একটি যোগসূত্র লক্ষ করা যাচ্ছে।

সঙ্কট উত্তরণে এরদোগানের একটি বিশেষ সক্ষমতা রয়েছে। এবারো সেই সক্ষমতার স্বাক্ষর রাখতে পারলে তুরস্ক সব ধরনের শক্তির বৈরিতা থেকে নিজের শক্তি সামর্থ্যকে নিরাপদ রেখে অগ্রসর হতে পারবে বলে মনে হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে ২০২১ সাল অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর।

mrkmmb@gmail.com

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us