কী ভাবছেন এরদোগান

মাসুম খলিলী | Dec 29, 2020 03:43 pm
এরদোগান

এরদোগান - ছবি সংগৃহীত

 

তুরস্কে সবাই প্রত্যাশা করেন যে, ২০২১ আরো ভালো বছর হবে দেশটির জন্য। গত সপ্তাহে এক বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এরদোগান বলেছেন, তিনি আশা করছেন যে, সমস্ত ইউরোপীয় দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র নতুন বছরে একটি পরিষ্কার স্লেট দিয়ে যাত্রা শুরু করবে।
এই আশা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, রাশিয়া এবং মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আঙ্কারা এখনো পশ্চিমা জোটের অংশ হতে চায়। বহুমুখী বিদেশ নীতি হিসেবে এটিকে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়।

আঙ্কারা মনে করে, এই নীতিটি কেবল তুরস্ক নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও উপকৃত করেছে, যেহেতু দেশটি কৌশলগতভাবে এমন একটি অবস্থানে অবস্থিত যেখানে এটি মধ্যপ্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ তুরস্কের অবস্থান বুঝতে হবে। আঙ্কারা পূর্ব ইউরোপীয় অঞ্চলে দ্বৈত মানদন্ডের মুখোমুখি হয়েছে এবং প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কট নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা অন্যায় আচরণ পেয়েছে বলে অনুভব করে। এই কারণে, আঙ্কারা রাশিয়ান এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর শক্তিশালী সদস্য এবং কৌশলগত অংশীদারের সাথে তার জ্ঞানপ্রযুক্তি ভাগ করে নিতে রাজি ছিল না।

এই অবস্থায় এরদোগান সংলাপের মধ্য দিয়েই বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করার বিষয়ে ভাবছেন বলে মনে হয়। তিনি এই সমস্যাগুলোকে ‘কৃত্রিম অ্যাজেন্ডা’ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন যে, এই মতভেদ ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউয়ের সাথে তুরস্কের সম্পর্ককে পরীক্ষায় ফেলেছে, তবে আমরা আশা করি, বিষয়গুলোর উন্নতি হবে।’

তুর্কি বিশ্লেষকদের ধারণা, মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো তুর্কি জনগণের মধ্যে পশ্চিমা ও আমেরিকাবিরোধী মনোভাবকে গভীরতর করা ছাড়া আর কিছুই অর্জন করতে পারবে না। ওয়াশিংটন এই বাস্তবতাটি দেখবে এবং জো বাইডেন প্রশাসন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবে। আঙ্কারা আশাবাদী, বাইডেন মিত্রদের মধ্যে সমস্যা সমাধানে আরো গঠনমূলক হবেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, নানা বিপত্তির মধ্যেও তুরস্ক-ইইউ সম্পর্কের উন্নতি এ বছর হতে পারে। তবে এ জন্য গঠনমূলক সংলাপের প্রয়োজন। এই গঠনমূলক সংলাপটি ২০০৪ এবং ২০০৫ সালে হয়েছিল। তুরস্ক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশির ভাগ দেশের জনমত এ ব্যাপারে খুব সমর্থনকারী ছিল। কারণ রাজনীতিবিদরা বেশ গঠনমূলক ছিলেন এবং মিডিয়া একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করেছিল। তুরস্কেরও সেই সময় খুব বড় সমস্যা ছিল। পারস্পরিক শুভেচ্ছাই তুর্কি গণতন্ত্রের দ্বারা প্রতিবন্ধকতার অনেকগুলো কাটিয়ে উঠতে সফল হয়েছিল। তুরস্ক এবং ইইউ উভয়ই আবার এটি করতে পারে।

এরদোগান এই পথে অগ্রসর হতে চাইছেন বলে মনে হয়। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে নতুন ও দক্ষ কূটনীতিদের নিয়োগ দিয়েছেন। সৌদি আরবের সাথে দূরত্ব কমানোর ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। এমনকি, ইসরাইলের সাথেও দূরত্ব কমিয়ে আনার কথা তিনি সরাসরি বলেছেন। কূটনৈতিক উত্তেজনা নিরসনে এরদোগান সফল না হলে ২০২৩ সালে পরবর্তী যে নির্বাচন রয়েছে তখন তুরস্কবিরোধী শক্তি সর্বাত্মকভাবে একেপিকে ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস চালাবে। তুর্কি সাংবাদিক ও ‘ইনি সাফাক’ পত্রিকার সম্পাদক ইব্রাহিম কারাগুল তার সাম্প্রতিক এক কলামে এর কিছুটা তুলে ধরে বলেছেন, তুর্কিকে থামানোর বাইরের প্রচেষ্টার সাথে ভেতরের রাজনৈতিক শক্তি সিএইচপির একটি যোগসূত্র লক্ষ করা যাচ্ছে।

সঙ্কট উত্তরণে এরদোগানের একটি বিশেষ সক্ষমতা রয়েছে। এবারো সেই সক্ষমতার স্বাক্ষর রাখতে পারলে তুরস্ক সব ধরনের শক্তির বৈরিতা থেকে নিজের শক্তি সামর্থ্যকে নিরাপদ রেখে অগ্রসর হতে পারবে বলে মনে হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে ২০২১ সাল অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর।

mrkmmb@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us