কন্যাসন্তান আল্লাহর নিয়ামত : যা বলে ইসলাম

মুহাম্মদ আবদুল জলিল | Dec 28, 2020 05:18 pm
কন্যাসন্তান আল্লাহর নিয়ামত : যা বলে ইসলাম

কন্যাসন্তান আল্লাহর নিয়ামত : যা বলে ইসলাম - ছবি সংগৃহীত

 

সৃষ্টিজীবের মধ্যে মানুষ মহান আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি। আর নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই সমাজ-সংসার সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। নারী ও পুরুষ একে অপরের মুখাপেক্ষী। পুত্রসন্তান যেমন আল্লাহর নিয়ামত; তদ্রূপ কন্যাসন্তানও আল্লাহর নিয়ামত। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা করে দেন বন্ধ্যা।’ (সূরা শুরা : ৪৯-৫০) সুতরাং সন্তান পুত্র হবে না কন্যা হবে তাতে মানুষের কোনো হাত নেই। কিন্তু আমরা দেখতে পাই সমাজের একটি শ্রেণী আছে যারা কন্যাসন্তানকে নিয়ামত মনে না করে অভিশাপ মনে করে। রাসূল সা:-এর আবির্ভাবের আগে অন্ধকার যুগেও কন্যাসন্তানকে জীবন্ত পুঁতে দেয়া হতো। রাসূল সা: মেয়েদের অনেক বেশি ভালোবাসতেন। মেয়েরা ছিল তাঁর আদরের দুলালী। আজীবন তিনি কন্যাদের ভালোবেসেছেন এবং কন্যাসন্তান প্রতিপালনে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। হাদিসে কন্যাসন্তান লালন পালনের অনেক ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

১. হজরত আনাস ইবনে মালিক রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে লোক দুটি মেয়েসন্তানকে লালনপালন করবে, আমি এবং সে এভাবে একসাথে পাশাপাশি জান্নাতে যাবো। এই বলে তিনি নিজের হাতের দু’টি আঙুল একত্র করে ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন।’ (তিরমিজি : ১৯১৪)

২. হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যার তিনটি কন্যাসন্তান আছে এবং সে তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে তাদের ব্যয়ভার বহন করে এবং তাদের সাথে দয়ার্র্দ্র ব্যবহার করে, তার জন্য বেহেশত অবধারিত হয়ে যায়। লোকজনের মধ্য থেকে একজন বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কারো যদি দু’টি কন্যাসন্তান থাকে? তিনি বলেন, দু’টি কন্যাসন্তান হলেও।’ (আবু দাউদ; তাবারানি; বাযযার; আদাবুল মুফরাদ : ৭৮)

৩. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনটি বোন আছে এবং সে তাদের সাথে মমতাপূর্ণ ব্যবহার করে, সে বেহেশতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি : ১৯১২; আবু দাউদ; হিব্বান; আদাবুল মুফরাদ : ৭৯)

৪. হজরত উকবাহ বিন আমির রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে বলতে শুনেছি, ‘কারো তিনটি কন্যাসন্তান থাকলে এবং সে তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করলে, যথাসাধ্য তাদের পানাহার করালে ও পোশাক-আশাক দিলে, তারা কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নাম থেকে অন্তরায় হবে।’ (ইবনে মাজাহ : ৩৬৬৯)

৫. হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, এক ভিখারিনী দু’টি শিশুকন্যা সাথে করে আমার কাছে এসে কিছু চাইল। আমার কাছে একটি খেজুর ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। আমি তাকে তা দিলাম। সে নিজে না খেয়ে খেজুরটি দু’ভাগ করে কন্যা দু’টিকে দিয়ে দিলো। এরপর ভিখারিনী বেরিয়ে চলে গেলে নবী করিম সা: আমাদের কাছে এলেন। তাঁর কাছে ঘটনা বিবৃত করলে তিনি বললেন, ‘যাকে এরূপ কন্যাসন্তানের ব্যাপারে কোনোরূপ পরীক্ষা করা হয় সে কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন হতে আড় হয়ে দাঁড়াবে। (সহিহ বুখারি : ১৪১৮)

কন্যাসন্তান আল্লাহর দেয়া এক বিশেষ নিয়ামত। কন্যাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করলে, যথাসাধ্য তাদের পানাহার করালে ও পোশাক-আশাক দিলে, পুত্রসন্তানকে মেয়েদের থেকে প্রাধান্য না দিলে মহান আল্লাহ বেহেশতের সুসংবাদ দিয়েছেন। সুতরাং যারা কন্যাসন্তানকে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ দান ও উপহার ভেবে তাদের যাবতীয় প্রয়োজন হাসিমুখে আনন্দচিত্তে পূরণ করবে, তারাই আল্লাহ তায়ালার এই পুরস্কারে ভূষিত হবেন। বিপরীতে যারা তাদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করবে, তাদের লালন-পালন ও প্রয়োজন পূরণে অবহেলা করবে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তার ওয়াদাকৃত সব পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করবেন এবং পরকালে কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন করবেন।

কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো অনেক পরিবারে কন্যাসন্তান জন্ম নিলে ইতিবাচক চোখে দেখা হয় না। অনেকে আবার মেয়েসন্তানের মায়ের ওপর নাখোশও হন। বিভিন্ন কায়দায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এটা সাধারণত দরিদ্র-শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে বেশি দেখা যায়। বারবার কন্যাসন্তান জন্ম দেয়ার কারণে স্ত্রীদের তালাক দেয়া হচ্ছে অথবা শুধু এ কারণে দ্বিতীয় বিয়ে করা হচ্ছে। ইসলামী জ্ঞানের অভাব, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মায়া-মমতা ও ভালোবাসার অভাব এসবের জন্য দায়ী। কন্যাসন্তান হলে অপছন্দ করা, তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা এবং তাদের লালন পালনের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করা খুবই নিন্দনীয় কাজ। এমন কাজে আল্লাহ তায়ালা ভীষণ অসন্তুষ্ট হন।

প্রসঙ্গত, কন্যাসন্তান প্রতিপালনে শুধু পিতাকেই নয়; ভাইকেও উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বোনের কথাও বলা হয়েছে হাদিসে। যারা মনে করেন, মেয়ে বা বোনের পেছনে টাকা খরচ করলে ভবিষ্যতের তার কোনো প্রাপ্তি নেই, তারা মূলত ভুলের মধ্যে আছেন। কন্যাসন্তান প্রতিপালনে যেন বৈষম্য না করা হয় এবং বস্তুবাদী ব্যক্তিরা যেন হীনম্মন্যতায় না ভোগেন, তাই তাদের কন্যা প্রতিপালনে ধৈর্য ধরার উপদেশ দেয়া হয়েছে। শোনানো হয়েছে পরকালে বিশাল প্রাপ্তির সংবাদ।

লেখক : ব্যাংকার, ‘জান্নাতি মানুষের গুণাবলি’ গ্রন্থের লেখক


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us