যেভাবে বাড়ানো হচ্ছে চালের দাম
চাল - ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশে চালের দাম এখন ২০১৭ সালের পর সর্বোচ্চ৷ অথচ এখন আমনের ভরা মৌসুম৷ বাজারে বিআর-২৮ চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৪ থেকে ৫৬ টাকায়৷ আর মিনিকেট ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা৷ গত এক সপ্তাহে এই দাম দফায় দফায় বেড়েছে৷ সপ্তাহান্তে কেজিতে বেড়েছে পাঁচ-ছয় টাকা৷
বাংলাদেশে বছরে তিন কোটি ৪০ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়৷ যা চাহিদা তা এই চাল দিয়েই মিটে যায়৷ তাহলে চালের সংকট কেন সৃষ্টি হলো? কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক রোববার এক অনুষ্ঠানে এজন্য দায়ী করেছেন আড়তদার-মিলারদের৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি বলেন, ‘‘...বাংলাদেশের মিলাররা, আড়তদাররা, জোতদাররা, যারা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে, তারা চালের দাম বাড়ায় এবং এবারও তারা সেই কাজ করছে৷ মৌসুমের সময় তারা এখনও ধান কিনছে এবং ধান ও চালের দাম দুটিই বাড়িয়ে দিয়েছে৷’’
হিসাব বলছে, এবার আমনের উৎপাদন ১০ লাখ টন কম হয়েছে৷ পরিস্থিতি বিবেচনায় তাই চালকল মালিক এবং বড় কৃষকরা ধান বা চাল বাজারে ছাড়ছেন না৷ বেশি দামের আশায় মজুত করেছেন, যা বাজারে সংকট তৈরি করেছে৷
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সরকারের মজুত ঘাটতিও৷ গত বোরো-আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি৷ দাম ও বাজার ঠিক রাখতে যেকোনো পরিস্থিতিতে সরকারের মজুত সব সময় ১০ লাখ টন থাকার কথা, সেখানে এবার আছে পাঁচ লাখ টন৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে না পারার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে৷ সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘আমরা সবাই বলছি ভরা মৌসুম৷ সেটা হয়তো মৌসুমের হিসাবে ঠিক আছে৷ কিন্তু বাস্তবে নয়৷ কারণ এ বছর তিন দফা বন্যার শিকার হয়েছেন কৃষক৷ আর নানা কারণে সরকার স্টকের চাল বিতরণ করতে হয়েছে৷ ফলে প্রতিবছর এই সময়ে সরকারের ১০ লাখ টনের মজুত থাকলেও এখন আছে ৫ লাখ টন৷’’
ঠিক এমন বাস্তবতায় বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ২৫ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানির অনুমতির কথা জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়৷ ১০ জানুয়ারির মধ্যে আবেদনের ভিত্তিতে আমদানিকারকদের এই সুবিধায় চাল আনার অনুমতি দেবে সরকার৷ তবে শুধু ব্যবসায়ী নয় সরকার নিজেও মজুত ঘাটতি মেটাতে চায় আমদানি করে৷ ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকারি, বেসরকারি মিলিয়ে পাচঁ থেকে ছয় লাখ টন চাল বিদেশ থেকে আমদানি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী৷
এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম৷ তার মতে শুল্ক কমিয়ে আমদানির এই ব্যবস্থা কাজে লাগাতে আশপাশের দেশ থেকে দ্রুত এখন চাল আনতে হবে৷ এতে চালের বাজার স্থিতিশীল হবে বলে মনে করেন তিনি৷ তবে ড. নাজনীন আহমেদ মনে করেন, আমদানিটা সঠিক হিসাব করে আনতে হবে৷ কারণ পরিস্থিতি বুঝে চালকল মালিকরাও চাল ছাড়তে শুরু করবেন৷ এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন৷ সামনের বোরো ধান ওঠার সময় যেন তারা ধানের ভালো দাম পান তা লক্ষ্য রাখার উপর জোর দেন তিনি৷ তার মতে, ‘‘সরকারকে পাবলিক স্টক ১০ লাখ টন আর রাখলে চলবে না৷ এটা ১৫ লাখ টন করতে হবে৷ সামনের বোরো মৌসুমে এটা যাতে করা যায় সেজন্য উদ্যোগ নিতে হবে৷ ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি সক্ষমতা বাড়াতে হবে৷''
রোববার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘‘চাল আমদানি এবং শুল্ক কমানোর ক্ষেত্রে আমরা দুইটি বিষয় মাথায় রেখেছি৷ ভোক্তার যাতে কষ্ট না হয়৷ আবার কৃষকও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়৷ তাই নিয়ন্ত্রিতভাবে আমদানির অনুমতি দেয়া হবে৷’’
সূত্র : ডয়চে ভেলে