কাশ্মীরে পরাজিত বিজেপি
কাশ্মীরে পরাজিত বিজেপি - ছবি : সংগৃহীত
ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ভোটের ময়দানে নেমেছিল আব্দুল্লাহ ফারুক ও মেহবুবা মুফতিসহ কাশ্মীরিদের গুপকর জোট। স্থানীয় কাউন্সিলের ভোটের ফলাফল বলছে, সেই বিরোধিতার পক্ষেই মত দিয়েছেন অধুনা এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সিংহভাগ ভোটার। কাশ্মীরের ২০টি জেলার প্রথম নির্বাচনে ১৩টি দখলে রাখল গুপকর জোট। কাশ্মীরে পিছিয়ে গেলেও জম্মুতে ভালো ফল করেছে বিজেপি। সেখানে ৬টি জেলায় জয়ী হয়েছে গেরুয়া শিবির। এদিন গুপকর জোটের অন্যতম মুখ মেহবুবা মুফতি বলেন, 'কাশ্মীরের মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে, দিল্লি যাই ভাবুক, আমাদের হৃদয়ে এখনও আছে ৩৭০ ধারা। আর তা ফেরাতে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমরা লড়াই করে যাব।'
পিডিপি, এনসি-সহ উপত্যকার সমস্ত অ-বিজেপি এবং অ-কংগ্রেসি দলকে নিয়ে তৈরি জোট একাই জিতে নিয়েছে একশ'র বেশি আসন। গত কয়েক মাস ধরে কার্যত মাটি চষে ফেলেও ৭৪ আসনের বেশি পেল না বিজেপি। তবে, একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে তারা। শুধু তাই নয়, জম্মু ডিভিশনে গেরুয়া ঝড় স্পষ্ট। সেখানকার বেশির ভাগ আসনই পকেটে পুরেছে বিজেপি।
উল্টা দিকে, প্রবল চেষ্টা করেও উপত্যকায় সে ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি তারা। বিশেষ করে দক্ষিণ কাশ্মীর, যেখানে পিডিপি এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স কার্যত সুইপ করেছে। তবে, বিজেপির জন্য উপত্যকা থেকে একেবারেই কোনে সুখবর নেই, এমনটা নয়। এই প্রথম শ্রীনগরে কোনো আসন জিতল বিজেপি। এই এলাকার খোনমো কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন পদ্মের প্রার্থী এজাজ হুসেন। এজাজের কথায়, ‘নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে আস্থা দেখিয়েছেন মানুষ। এই ফল থেকেই স্পষ্ট উপত্যকায় জাতীয়তাবাদ জমি পেতে শুরু করেছে।’
বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর এই প্রথম এত বড় মাপের ভোট হল জম্মু-কাশ্মীরে। গত দেড় বছরে উপত্যকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনেক বদল এসেছে। সেখানকার প্রথম সারির নেতানেত্রীরা দীর্ঘ সময় গৃহবন্দি ছিলেন। উল্টো দিকে, উন্নয়নের স্লোগানকে সামনে রেখে প্রভাব বাড়িয়েছে বিজেপি। ফলে, এই ভোট সবপক্ষের কাছেই হাওয়া বুঝে নেয়ার লড়াই ছিল। বিজেপির মোকাবিলা করার জন্য ভোটের আগে উপত্যকার সাতটি দল মিলে গুপকর জোট তৈরি করে। শত্রুতা ভুলে জোটে সামিল হন মেহবুবা, আবদুল্লারাও। বাইরেই থাকে কংগ্রেস। এ দিনের ফলাফল বলছে, এই জোটই রুখে দিল গেরুয়া শিবিরকে। একা লড়ে ২৩টি আসন দখল করেছে কংগ্রেস।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, দু’পক্ষই ভোটের ফলাফলে নিজেদের জয় দেখছে! একদিকে ওমর আবদুল্লার বক্তব্য, ‘এবার অন্তত বিজেপির চোখ খুলে যাওয়া উচিত। মানুষ যে ৩৭০ ধারা বিলোপ ভালো ভাবে নেননি, সেটা পরিষ্কার।’ উল্টো দিকে, পদ্ম শিবিরের বক্তব্য, ‘প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের উপর উপত্যকার মানুষ আস্থা দেখিয়েছেন বলেই বিজেপি এ ভাবে শক্তি বাড়াতে পেরেছে।’
এই নির্বাচনে যে সমানে সমানে লড়াই হয়েছে তা স্পষ্ট। অন্তত ১৯টির মতো আসনে জয়ের ব্যবধান ছিল ১০০ ভোটেরও কম। এনসি মূলত কাশ্মীর-ভিত্তিক দল, জম্মুতে এর তেমন জোর নেই বলে এতদিন যে তকমা জুটেছিল তা এ দিন খণ্ডন করে দিয়েছেন দলের সুপ্রিমো ফারুক আবদুল্লাহ। তিনি বলেন ‘আমরা যদি শুধু কাশ্মীরের দল হতাম,তাহলে জম্মুতে ৩৫টি আসন পেতাম না।’ উল্লেখ্য, জম্মুতে ১৪০টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৭১টি আসন।
সূত্র : এই সময় ও পুবের কলম