সৌমিত্র খাঁকে মারতেন 'ঝগড়ুটে' সুজাতা? একটি ডিভোর্স নিয় তোলপাড় পশ্চিমবঙ্গে
সৌমিত্র খাঁকে মারতেন 'ঝগড়ুটে' সুজাতা? একটি ডিভোর্স নিয় তোলপাড় পশ্চিমবঙ্গে - ছবি : সংগৃহীত
স্বামী-স্ত্রীর ভিন্ন রাজনীতির পথ শেষ পর্যন্ত গড়াল বিবাহবিচ্ছেদে! বিজেপি পার্লামেন্ট সদস্য তথা যুব মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি সৌমিত্র খাঁয়ের স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল খাঁ বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন সোমবারই। একইসঙ্গে তিনি আভাস দিয়েছিলেন, তার পথেই আগামী দিনে হাঁটতে পারেন সৌমিত্র। কিন্তু স্ত্রীর পথে হাঁটা তো দূরের কথা, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সুজাতাকে ডিভোর্সের নোটিস দেয়ার কথা ঘোষণা করেন সৌমিত্র! এরপরই দু'তরফের প্রকাশ্যে কান্না, আর তারপর তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরেন তিনি। সেই সূত্রেই তৃণমূলে যোগ দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সুজাতাকে নিরাপত্তা দিলো রাজ্য সরকার।
জানা গেছে, ইতিমধ্যেই কলকাতায় তার নিরাপত্তায় ৩ জনকে নিযুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে একজন AK47 ধারী, অপর দুইজন 9MM পিস্তলধারী। আবার সুজাতার বড়জোড়ার বাড়িতেও একজন এএসআই ও তিনজন কনস্টেবলকে নিরাপত্তার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, তৃণমূলে যোগ দেয়ার পরই সোমবার রাতে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন সুজাতা। বৈঠক হয় তৃণমূল এমপি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও।
উল্লেখ্য, গত লোকসভা ভোটে নিজের এলাকায় ঢুকতে না পেরেই বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে জয় পান বিজেপির সৌমিত্র খাঁ। আর তার এই জয়ের নেপথ্য কারিগর হিসেবে দল ও দলের বাইরেও সুজাতার নামই শোনা যায়। অর্থাৎ ভোটের বাজারে সুজাতার দক্ষতা আগেই প্রমাণিত। এবার সেটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল।
সোমবার দুপুর ১টায় তৃণমূলের প্রবীণ নেতা সৌগত রায় সুজাতার হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন। সুজাতা বলেন, ‘একটা চ্যালেঞ্জ নিলাম। কারণ, বিজেপির হয়ে প্রচুর লড়াই করেছি। কোনো নিরাপত্তা ছাড়া নিজের প্রাণ বাজি রেখে লড়াই করেছি। কিন্তু বিজেপি তার জন্য কোনো সম্মান দেয়নি।’ ঘটনা হলো, আইনের গেরোয় পড়ে গত লোকসভা নির্বাচনের সময়ে সৌমিত্র বিষ্ণুপুরে ঢুকতে না-পারায় স্ত্রী সুজাতাই তার সব নির্বাচনী কাজ সামলেছিলেন। সেই সুজাতা এদিন বলেন, ‘কে বলতে পারে, আগামী দিনে সৌমিত্র আমার এই সিদ্ধান্তে সামিল হবে না। তবে আমি ওকে তৃণমূলে যোগ দিতে কোনও চাপ দিইনি।’
সুজাতার এই মন্তব্যে বিজেপির অন্দরে শোরগোল পড়ে যায়। কারণ, কিছু দিন আগেই সৌমিত্র দলের প্রতি অসন্তোষ ব্যক্ত করে যুব সভাপতির পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন। তাই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়ে যায়, তা হলে কি স্ত্রীর পথে সৌমিত্রও তৃণমূলে ফিরতে চলেছেন? যদিও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সৌমিত্র সংবাদ সম্মেলন করে বিজেপি ছেড়ে যাওয়ার জল্পনায় শুধু পানি ঢেলেই দেননি, সুজাতাকে ডিভোর্সের নোটিস পাঠানোর কথা ঘোষণা করেন। সেখানে নিজের স্ত্রীকে ঝগড়ুটে, এমনকী সৌমিত্র ও তার পরিবারের সকলের গায়ে হাত তোলার মতো অভিযোগও করেছেন বিজেপি এমপি। শুধু তাই নয়, ডিভোর্স নোটিশে অভিযোগ করা হয়েছে, বিয়ের পর থেকেই সৌমিত্রের চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করতেন সুজাতা। তাকে গালিগালাজ করতেন এবং মারধর করতেন। এমনকি তাকে নিজের বাড়ি থেকেই তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিতেন।
সৌমিত্র ডিভোর্সের কথা বলায় সুজাতাও কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘যদি দলবদলের কারণে বিবাদ বিচ্ছেদ হয়, তা হলে এটা সৌমিত্রর সিদ্ধান্ত, আমার নয়। কারণ আমি মনে করি, পরিবার ও রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। পরিবারে ঘরের ভিতরে থাকে, আর রাজনীতি ঘরের বাইরে থাকে। সম্মান ও মর্যাদা না-পাওয়ার কারণে দলত্যাগ করায় স্বামী যদি ডিভোর্স দিতে চায়, আমার কিছু বলার নেই।’ সুজাতার সম্মান না-পাওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে সৌমিত্র অবশ্য বলেছেন, ‘বিজেপি ওকে ঘরের মেয়ের মতো সম্মান দিয়েছে। স্বামী ও স্ত্রীকে তো একসঙ্গে সাংসদ করতে অথবা পদ দল দিতে পারে না। পরিবারতন্ত্র এখানে চলে না। জানি না তৃণমূল ওকে কী দেবে? হয়তো মুখ্যমন্ত্রী করবে বলেছে। হয়তো মা লক্ষ্মীকে পাথর করে রেখে দিয়ে পরে ঢিল হিসেবে ছুড়ে ফেলে দেবে।’
সূত্রের খবর, ২০১১ সাল থেকে সৌমিত্র ও সুজাতার প্রেম। একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন সুজাতা। ২০১৬ সালে তাদের বিয়ে হয়। সৌমিত্র কংগ্রেস ছেড়ে প্রথমে তৃণমূলে যান। বিজেপিতে যোগ দেন ২০১৯-এ। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে সৌমিত্র নিজের কেন্দ্র বিষ্ণুপুর যেতে পারেননি আইনি বাধায়। তাকে জেতানোর পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন সুজাতা। এদিন তা বলতে গিয়ে চোখের জলে ভেসে সৌমিত্র বলেন, ‘নির্বাচনের সময় আমি গৃহবন্দি ছিলাম। তুমি পাশে ছিলে। সেটা আমি ভুলব না।’ সেই জায়গায় এমন কী হল যে সুজাতা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গেলেন? সৌমিত্রর আবেগঘন বক্তব্য, ‘হ্যাঁ, ওর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের কথা তো আমায় জানায়নি।’ তারপরই ডিভোর্স নোটিশে মারাত্মক সব অভিযোগ করেন সৌমিত্র।
সূত্র : এই সময়