দুই দলের লড়াই নেপালে!
ওলি ও প্রচন্ড - ছবি সংগৃহীত
সংসদ ভেঙে দেয়ার পরদিনই তিনটি পৃথক বৈঠক হয়েছে নেপালে। কে পি ওলি তার অনুগত মন্ত্রীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠক করেছেন। পুষ্প কুমার দাহল প্রচন্ড ও মাধব চন্দ্র নেপাল বৈঠক করেছেন তাদের উপদলের মন্ত্রী ও নেতাদের নিয়ে। দল থেকে বহিষ্কার করেছেন প্রধানমন্ত্রী ওলিকে। সে সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে নাকচ করে দিয়েছেন ওলি। আরেকটি বৈঠকের আয়োজন করেন নেপালি কংগ্রেসের নেতা দিউবা বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে। এই টানাপড়েনে সামনে দুটি গন্তব্য লক্ষ করা যায়। প্রথমত, প্রেসিডেন্টের সংসদ ভেঙে দেয়ার আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা। সংসদ ভাঙার পরদিনই সেটি করা হয়েছে নেপাল সুপ্রিম কোর্টে। বিরোধী পক্ষ বলছে, সংসদ ভাঙার এই আদেশে সংবিধান অনুসৃত হয়নি। সংসদ বহাল রেখে সরকার গঠনের অবকাশ নিঃশেষ হয়ে গেলে সংসদ বাতিল করা যেতে পারে বলে তারা মনে করেন। অন্য দিকে ওলির সমর্থকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে সংসদ বাতিলের এখতিয়ার সংবিধানে প্রেসিডেন্টকে দেয়া হয়েছে।
সংবিধানের ব্যাখ্যা দেয়ার চূড়ান্ত এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের। কোর্ট নির্ধারণ করবে সংসদ বাতিলের আদেশ কার্যকর হয়ে নতুন নির্বাচন হবে নাকি সংসদ বহাল ঘোষণা করে নতুন সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হবে।
পৌনে তিন কোটি মানুষের অন্যতম দরিদ্র দেশ নেপাল এখনো মহামারী নিয়ে লড়াই করছে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সারা বিশ্ব থেকে আসা পর্বতারোহীরা এখনো ঘরে বসে আছেন। নেপালের অভিবাসী কর্মীরা বিশ্বের অনেক জায়গায় বেকার হয়ে পড়েছেন। এই চাপ মোকাবেলায় চীন নেপালিদের ইউনানে কাজ করার বিশেষ অনুমতি দিয়েছে। ভারতের সাথে সম্পর্কের টানাপড়েনের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে বেইজিং। অবশ্য নেপালি নাগরিকদের অর্থনৈতিক দুরবস্থা যতটা, গণমাধ্যমগুলোতে ভারতপন্থীদের প্রভাব বেশি থাকায় প্রচারণা হয় তার চেয়ে বেশি।
রাখঢাক নেই চীনা সমর্থনে, ভারসাম্য দিল্লিমুখী
কে পি ওলির সরকারের প্রতি চীনের সমর্থনে কোনো রাখঢাক নেই। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং গত বছর নেপাল সফর করেন। ওলি তার দেশে শি জিনপিংয়ের চিন্তাধারার ওপর প্রশিক্ষণের আয়োজন করেন এবং মাউন্ট এভারেস্টের জন্য যৌথভাবে একটি নতুন উচ্চতার ঘোষণা দিয়ে বেইজিংয়ের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের চেষ্টা করেন। চীনের সাথে মহাসড়ক যোগাযোগ প্রকল্পের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ। এটি শেষ হলে বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য এককভাবে ভারতের ওপর নির্ভরতা নেপালের কমবে। এ ছাড়া এভারেস্টের নিচ দিয়ে একটি টানেল নির্মাণ করে চীন-নেপাল সংক্ষিপ্ত রুটে বহুপক্ষীয় যোগাযোগের একটি প্রকল্পের কাজও হচ্ছে।
চীনের-নেপাল সহযোগিতার সম্পর্ক সামনে কতটা অব্যাহত থাকবে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে নতুন রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে। কোর্টের আদেশে সংসদ বহাল থাকুক অথবা এপ্রিল-মে মাসে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক উভয় ক্ষেত্রে পরিস্থিতি চীনপন্থী প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলির পক্ষে যাবে বলে মনে হয় না। ওলি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জানতেন, তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী থাকুন তা দিল্লি চায় না। এ কারণে তিনি ভারসাম্য বজায় রাখার পরিবর্তে চীনের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে সম্ভব সব পদক্ষেপ নেন। এতে আরো বেশি ক্ষুব্ধ হয় বড় প্রতিবেশী ভারত। লিপুলেখ কালাপানিকে নেপালের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ এবং সর্বশেষ অযোধ্যায় যখন বিজেপি সরকার ঘটা করে রাম মন্দির স্থাপনের আয়োজন করছিল তখন রাম জন্মভূমি নেপালে বলে দাবি করে বিজেপি-আরএসএসের বিরক্তি ও ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছেন ওলি।
ফলে ভারত নেপালের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের সব উপায় উপকরণ সক্রিয় করে তোলে। এই কার্যক্রমে সরকারের পাশাপাশি ভারতের সেনাবাহিনীও যুক্ত হয়ে পড়ে দেশটির সেনাবাহিনীতে নেপালি গোর্খা রেজিমেন্ট নিয়ে বিতর্ক তোলার কারণে। নেপাল সরকার প্রকাশ্যে নেপালিদের অন্য দেশের পক্ষে যুদ্ধ করে জীবন দেয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে। দিল্লিøøর কর্মকর্তারা মনে করছেন, চীনের ইন্ধনে এতদিন পরে নেপাল সরকার এ নিয়ে প্রশ্ন করার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। যদিও এর মাধ্যমে নেপালের প্রায় ৫০ লাখ মানুষের বাইরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতীয় সেনাপ্রধানের নেপাল সফরের সাথে এ ঘটনার যোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর পরপরই চীনের তিন নম্বর প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাঠমান্ডু সফর করেন। শোনা যায়, ভারতীয় গোর্খা রেজিমেন্টের পুরোটাকে নেপালি সেনাবাহিনীতে আত্তীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পুরো তহবিল বেইজিং দিতে চেয়েছে। কিন্তু ভারতীয় পক্ষ এত দ্রুত রাজনৈতিক দাবার চাল খেলে যে এই বিষয়টি খুব দ্রুত এগোতে পারেনি। তার আগেই ক্ষমতার বিন্যাস এলোমেলো হয়ে যায়।