নেপালে চীনা প্রভাবে ভাটির টান!

মাসুম খলিলী | Dec 22, 2020 06:52 pm
নেপালে চীনা প্রভাবে ভাটির টান!

নেপালে চীনা প্রভাবে ভাটির টান! - ছবি সংগৃহীত

 

কে পি ওলির সরকারের প্রতি চীনের সমর্থনে কোনো রাখঢাক নেই। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং গত বছর নেপাল সফর করেন। ওলি তার দেশে শি জিনপিংয়ের চিন্তাধারার ওপর প্রশিক্ষণের আয়োজন করেন এবং মাউন্ট এভারেস্টের জন্য যৌথভাবে একটি নতুন উচ্চতার ঘোষণা দিয়ে বেইজিংয়ের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের চেষ্টা করেন। চীনের সাথে মহাসড়ক যোগাযোগ প্রকল্পের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ। এটি শেষ হলে বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য এককভাবে ভারতের ওপর নির্ভরতা নেপালের কমবে। এ ছাড়া এভারেস্টের নিচ দিয়ে একটি টানেল নির্মাণ করে চীন-নেপাল সংক্ষিপ্ত রুটে বহুপক্ষীয় যোগাযোগের একটি প্রকল্পের কাজও হচ্ছে।

চীনের-নেপাল সহযোগিতার সম্পর্ক সামনে কতটা অব্যাহত থাকবে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে নতুন রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে। কোর্টের আদেশে সংসদ বহাল থাকুক অথবা এপ্রিল-মে মাসে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক উভয় ক্ষেত্রে পরিস্থিতি চীনপন্থী প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলির পক্ষে যাবে বলে মনে হয় না। ওলি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জানতেন, তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী থাকুন তা দিল্লি চায় না। এ কারণে তিনি ভারসাম্য বজায় রাখার পরিবর্তে চীনের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে সম্ভব সব পদক্ষেপ নেন। এতে আরো বেশি ক্ষুব্ধ হয় বড় প্রতিবেশী ভারত। লিপুলেখ কালাপানিকে নেপালের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ এবং সর্বশেষ অযোধ্যায় যখন বিজেপি সরকার ঘটা করে রাম মন্দির স্থাপনের আয়োজন করছিল তখন রাম জন্মভূমি নেপালে বলে দাবি করে বিজেপি-আরএসএসের বিরক্তি ও ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছেন ওলি।

দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের আধিপত্যে আবার ভাটার টান পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর পশ্চিমা প্রভাবকে আবার সুপ্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা নেয়া হতে পারে। দক্ষিণ চীন সাগরে দুটি মার্কিন রণতরী মোতায়েন করে তাইওয়ানের নিরাপত্তা বিধান করা, এই অঞ্চলের সমুদ্রসীমায় আন্তর্জাতিক নৌচলাচল উন্মুক্ত রাখার জন্য সমন্বিত চাপ বজায় রাখা এবং কোয়াডের মতো নিরাপত্তা জোট গঠন করে চীনের প্রভাব সীমিত করার প্রচেষ্টা জোরদার হতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হতে পারে নেপাল ও মিয়ানমার। মিয়ানমারের সু চি দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠনের পর এমন কিছু সংস্কার পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানা যাচ্ছে যাতে চীনের একতরফা প্রভাব কমে আসতে পারে। ইতোমধ্যে ভারত মিয়ানমারের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক তৈরি করেছে। সামরিক বাহিনীর প্রভাব ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হচ্ছে। আরাকান আর্মি ও অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোর তৎপরতা নতুনভাবে তৈরি হচ্ছে।

নেপালে সুপ্রিম কোর্টে সংসদ ভাঙার মামলায় রায় সরকারের বিপক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে হচ্ছে। আর সে ক্ষেত্রে ওলি ও তার অনুগতরা কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারেন। প্রচন্ড বা দিউবা যিনিই কোয়ালিশন সরকারে নেতৃত্ব দিন না কেন, চীনা প্রকল্পগুলো অতি দ্রুত গতি হারাবে। আর এপ্রিল-মে মাসে নির্বাচন হলে তাতে কমিউনিস্ট পার্টি বিভাজিত রূপ নিয়ে নির্বাচনে গেলে কংগ্রেস আবার বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। আর এতে প্রচন্ডের অনুসারী মাওবাদীরা মাওয়ের দেশের সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে দিল্লির আনুগত্য কবুল করাকেই তাদের স্বার্থের অনুকূল মনে করবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ২০২১ সাল হতে যাচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতির জন্য খুবই জটিল একটি সময়। নতুন বছর আসার আগেই সঙ্ঘাতের বাজনা বিভিন্ন অঞ্চলে যেভাবে বেজে উঠছে তাতে কিসিঞ্জারের মতো ব্যক্তিও চীন-মার্কিন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র্রের সেনাপ্রধানদের মুখ থেকেও মহাযুদ্ধের আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে। আর বাস্তবে এটি ঘটলে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য বিপদ তৈরি হতে পারে।

বিশেষত বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো যেসব দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য বিদেশের কর্মসংস্থান বা বহুপক্ষীয় সহায়তার জন্য পাশ্চাত্যনির্ভরতা রয়েছে তাদের বিপদ আরো বেশি। নেপাল পরিস্থিতিতে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার পাশাপাশি এ বৈশ্বিক প্রেক্ষিতও সামনে রাখতে হবে। দুই এশীয় জায়ান্টের আধিপত্য বিস্তারের এই খেলায় নেপালের পর দক্ষিণ এশিয়ার আরো দেশকে রাজনৈতিক অস্থিরতা গ্রাস করতে পারে।

mrkmmb@gmail.com

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us