পিকে হালদারের ৮০ বান্ধবী
প্রশান্ত কুমার হালদার - ছবি : সংগৃহীত
প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতিতে জানা গেল তার ৮০ জন বান্ধবী আছে৷ কিন্তু তার পাচার করা টাকাসহ তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো খবর নাই৷
লিজিং কোম্পানি দিয়ে জালিয়াতি করে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করে পিকে হালদার এখন কানাডায় আছেন৷ সেখানেও তিনি সম্পদ গড়ে তুলেছেন৷ এই টাকার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা হবে বলে মনে করছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম৷
তিনি জানান, মামলার তদন্ত পর্যায়ে অনেকেই তার কাছে এসেছেন অভিযোগ নিয়ে৷ তাদের মধ্যে সাবেক বিচারকের মেয়ে, সাবেক একজন পররাষ্ট্র সচিব, সাবেক আমলাসহ আরো সমাজের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি আছেন৷ ক্ষতিগ্রস্তরাই খুরশীদ আলমকে তথ্য দিয়েছেন যে পিকে হালদার অবিবাহিত এবং তার কমপক্ষে ৮০ জন বান্ধবী আছে৷ তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পিকে হালদার টাকা জমা রাখতেন৷
খুরশীদ আলম জানান, ‘‘পিকে হালাদারের বান্ধবীরা দেশেই আছেন বলে জানতে পেরেছি৷ তাদের নাম ঠিকানা পেয়েছি৷ তাদের তদন্তের মুখোমখি হতে হবে৷ তাদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট আমাদের হাতে আছে৷ তাদের অ্যাকাউন্টে পিকে হালদার টাকা পাঠাতেন৷’’
কিন্তু পিকে হালদার ও পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার তদন্ত কতদূর জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে৷’’ এর আগে পিকে হালদার দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করে টাকা ফিরিয়ে দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার আর কোনো অগ্রগতি নাই৷
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, পিকে হালাদারের বান্ধবীরা এই মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ এখানে আরো একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে মানি লন্ডারিং-এ এধরনের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করা হয়।তাহলে ব্যাংকের দায়দায়িত্ব আছে৷
তিনি বলেন, ‘‘পিকে হালদারের বান্ধবীদের ব্যাপারে আরো গভীর তদন্ত হলে অনেক গোপন তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে৷’’
যারা দেশের বাইরে অর্থ পাচার করেছেন তাদের একটি তালিকা চেয়েছিলো হাইকোর্ট৷ দুদক গত সপ্তাহে যে ২৮ জনের তালিকা দিয়েছে তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদালত৷ দুদক আসলে যে ২৮ জনের তালিকা দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান৷ আর তাদের তথ্য সংবাদ মাধ্যমে আগেই ছাপা হয়েছে৷ আর এই তালিকায় বিএনপির দুই-একজন রাজনীতিবিদ ছাড়া আর উল্লেখযোগ্য কারুর নাম নাই৷ আদালত তাদের নতুন করে তালিকা দিতে বলেছেন৷ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘‘আদালত এই সময়ে আলোচিত অর্থ পাচারকারীদের ব্যপারের বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু দুদক তা এড়িয়ে গেছে৷ দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়৷ সবাই তাদের চেনেন৷ কিন্তু দুদক কোনো তথ্য দিচ্ছে না৷’’
দুদক সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ থেকে ৫০ জনের পাচার করা অর্থের তথ্য এনেছে৷ তার মধ্যে আওয়ামী লীগেরও বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য রয়েছেন৷ তাদের তালিকা হাইকোর্টে দেয়া হয়নি৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘‘দেশে টপ টু বটম যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয় তার তুলনায় দুদকের তৎপরতা কিছুই না৷ তাদের আবার দ্বিচারিতা আছে৷ তার কাউকে ধরে আবার কাউকে ছাড় দেয়৷ রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে দুর্নীতির একটি শক্তিশালী চক্র আছে এদেশে৷ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে তাদের সহায়তা করার লোক আছে৷ তারা টাকা পাচার করে। বিদেশে যায় আবার দেশে ফিরে আসে৷ ফলে মূল দুর্নীতিবাজেরা ধরা পড়ে না৷’’
ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন দুর্নীতি দমনে দুদকের তিন ধরনের দুর্বলতা আছে৷ আর তা হলো: সক্ষমতার ঘাটতি, সমন্বয়ের ঘাটতি এবং সৎ সাহসের ঘাটতি৷ তিনি বলেন, ‘‘পিকে হালদারে যোগাযোগ কোথায় জানি না৷ কিন্তু অনেক সময়ই অর্থ পাচারের সাথে যারা জড়িত তারা ক্ষমতাবান৷ তাদের আর্থিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে৷ তাই যত কথা হয় বাস্তবে কাজ হয় না৷ তাদের বিচারের আওতায় আনার সৎ সাহস কতটা আছে সেটাই প্রশ্ন৷’’
আর মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘দুদক ,অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস এগুলো তো সরকারেই প্রতিষ্ঠান৷ দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সাথে সরকারের টপ লেভেলের যারা জড়িত, সরকারি দলের যারা প্রভাবশালী তাদের বিরুদ্ধে কি তারা ব্যবস্থা নিতে পারবে? পারার কথা না৷’’ তবে তিনি মনে করেন, ‘‘হাইকোর্ট যেভাবে এখন চাপ সৃষ্টি করছে এটা অব্যাহত থাকলে পাচারকারীদের নাম দেশের মানুষ জানতে পারবেন৷’’
গ্লোবাল ফাইনান্সিলিয়াল ইন্টিগ্রিটির(জিএফআই) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে গড়ে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার পাচার হয়৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে