গলস্টোন এড়াতে যা করতে পারেন?
গলস্টোন এড়াতে যা করতে পারেন? - ছবি সংগৃহীত
গলব্লাডারে পাথর নিয়ে ভুগছেন এমন রোগী প্রতি ঘরে ঘরে৷ গলস্টোন এড়াতে কী করবেন? জানাচ্ছেন নারায়ণ মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের বিশিষ্ট ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন ডা. পার্থপ্রতিম সেন৷
অপারেশনের পর খেজুর সাইজের একটা পাথর নার্সরা দীপা মজুমদারকে দেখাতেই উনি আঁতকে উঠেছিলেন৷ ‘এত বড় স্টোন!’ অনেকদিন ধরেই পেট ব্যথা, গা বমি ভাব নিয়ে ভুগছিলেন৷ লক্ষণ দেখে ডাক্তার আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করতে বলেন৷ তখনই ধরা পড়ে পিত্তথলিতে জমে ওঠা পাথরের উপস্থিতি৷ কুচি পাথরও ছিল প্রচুর৷ অপারেশন করে পাথর সাফাই করতে কালঘাম ছুটেছিল ডাক্তারদের৷
এখন প্রায় প্রতি বাড়িতেই কেউ না কেউ গলব্লাডারে স্টোন নিয়ে ভুগছেন৷ পিত্তথলিতে পাথর যাতে না জমে তার জন্য কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি৷
কেন হয়?
লিভার থেকে নিঃসৃত পিত্তরস খাবার হজম করতে সাহায্য করে৷ পিত্তরসের ভিতর জল ও ফ্যাটের পরিমাণের অসামঞ্জস্যতাই গলস্টোন সৃষ্টির মূল কারণ৷ কারও যদি হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া বা থ্যালাসেমিয়া থাকে সেক্ষেত্রেও গলব্লাডারে স্টোন হয়৷
কাদের বেশি হয়?
• দীর্ঘক্ষণ খালিপেটে থাকলে গলস্টোন হওয়ার আশঙ্কা বেশি৷
• ওজন বেশি হলে৷
• অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার খেলে৷
• হঠাৎ করে কম সময়ের মধ্যে ওজন কমা৷
• ৫০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তি ও মেয়েদের গলব্লাডারে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা বেশি৷
• অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের আশঙ্কা বেশি৷
• পরিবারে কারো যদি গলস্টোন হয়ে থাকে সেক্ষত্রে পরিবারের অন্যদেরও এই সমস্যা হয়৷
• লিভার সিরোসিস থাকলে সতর্ক থাকুন৷
• কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ ও কন্ট্রাসেপটিভ পিল ব্যবহার করলে স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷
• কোনও ওষুধ খেতে থাকলে হঠাৎ করে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বন্ধ করলে বিপদ৷
জরুরি পরীক্ষা
• প্রথমে করতে হবে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি৷ আল্ট্রাসাউন্ড করে কোনও সন্দেহ থাকলে কিংবা লিভার ফাংশন টেস্টের রিপোর্ট স্বাভাবিক না থাকলে MRCP (ম্যাগনেটিক রিসোনেন্স কোলাঙ্গিও প্যানক্রিয়াটিক) অথবা ERCP (এন্ডোস্কোপি রেট্রোগ্রাড কোলাঙ্গিও প্যানক্রিটোগ্রাফি) পরীক্ষার প্রয়োজন হয়৷ ERCP করে পিত্তনালীতে পাথর থাকলে তা অনায়াসে বার করে আনা যায়৷ পেট কেটে অপারেশনের প্রয়োজন হয় না৷
• রক্ত পরীক্ষা করে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা দেখা হয়৷ যা লিভারের কার্যক্ষমতা ঠিক আছে কি না তা বুঝতে সাহায্য করে৷
চিকিৎসা
• গলস্টোন হওয়ার ফলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হলে অপারেশন করে গলস্টোন বাদ দেওয়া হয়৷
• প্রেগন্যান্ট মহিলাদের গলব্লাডারে স্টোন হলে সন্তান প্রসবের ৪-৫ মাসের মধ্যে তা নিজে থেকেই মিলিয়ে যায়৷ অপারেশনের প্রয়োজন হয় না৷ তাই সন্তান হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই উচিত৷ ৬ মাস পর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত৷
অপারেশনের পর
• রক্তক্ষরণ বা জীবাণুর সংক্রমণ এড়াতে অবশ্যই ভাল প্রতিষ্ঠান ও অভিজ্ঞ সার্জনের কাছে অপারেশন করানো উচিত৷
• গলব্লাডার অবশ্যই বায়োপসিতে পাঠাতে হবে৷
• অনেক ক্ষেত্রে ডায়েরিয়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা জরুরি৷ ফ্যাট জাতীয় খাবার কম খেতে হবে৷ ফাস্টফুড এড়িয়ে যান৷ কফি, হাই ফ্যাট ডায়াটারি প্রোডাক্ট খাওয়া চলবে না৷ ফাইবার যুক্ত খাবার বেশি করে খান৷ খালি পেটে থাকলে বিপদ৷ বারবার খান অল্প অল্প করে৷
• মাইক্রোসার্জারি হলে ২ দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাওয়া যায়৷ অপারেশনের পর পুরোপুরি শয্যাশায়ী না থেকে অল্প হাঁটাচলা করলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়া যায়৷
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন