দেড় শ' বছরের লজ্জায় কোহলিরা

অ্যাডিলেডে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের দ্বিতীয় ইনিংস। গ্রাফিক : শৌভিক দেবনাথ - আনন্দবাজার পত্রিকা
ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের রান পর পর লিখলে ফোন নম্বর বলে ভুল হতেই পারে। অ্যাডিলেডে শনিবার তারা এলেন এবং ফিরে গেলেন। প্রথম ইনিংসে গোলাপি বল সামলে ২৪৪ রান করা ভারতীয় দলের দ্বিতীয় ইনিংসের স্কোর ৯ উইকেটে ৩৬। মোহম্মদ শামি চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় অলআউট হতে হয়নি। তবে তাতে যে লজ্জা কমেছে এমন নয়। কোনো ব্যাটসম্যান ২ অঙ্কের রানই করতে পারেননি। ১৮৭৭ সাল থেকে শুরু হওয়া টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস দেখলে দেড় শতকে এমন ঘটনা এই প্রথমবার। এর আগে ব্যাটসম্যানরা না পারলেও অতিরিক্ত রান ছিল ২ অঙ্কের, কিন্তু শনিবার ভারতের ইনিংসে নেই সেটাও। ভারতের এমন ব্যাটিংকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কালো দিন ভারতীয় ক্রিকেটের, অনূর্ধ্ব-১৩ দলেও এমন দেখা যায় না।”
১৯৭৪ সালে সুনীল গাভাস্কর, অজিত ওয়ারেকর সমৃদ্ধ ভারতীয় দল যখন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪২ রানে অলআউট হয়েছিল, সেবারেও ১৮ রান করেছিলেন একনাথ সোলকার। কিন্তু বিরাট কোহালির দলের কোনো ব্যাটসম্যান ১০ রানও করতে পারলেন না। একের পর এক ব্যাটসম্যানের ব্যাটে বল লেগে জমা পড়ল উইকেটকিপার টিম পেনের হাতে। শনিবার ৫ খানা ক্যাচ নিলেন তিনি। আউট হওয়ার ধরন বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানেরই এক। সম্বরণ বলেন, “অবিশ্বাস্য! কোনো ব্যাটসম্যানের পায়ের মুভমেন্ট দেখতে পেলাম না। এত জন ব্যাটসম্যান উইকেটের পিছনে আউট হয়েছে মানে সুইং খেলতেই পারিনি আমরা।”
ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাই কি মূল কারণ? শনিবার টেস্ট ক্রিকেটে ২০০তম উইকেট নিলেন জশ হ্যাজেলউড। অস্ট্রেলিয়ায় তাকে ‘জুনিয়র ম্যাকগ্রা’ বলা হয়ে থাকে। ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়া হ্যাজেলউড বা টেস্টের সেরা বোলার প্যাট কামিন্সের কৃতিত্ব কি একেবারেই অস্বীকার করার মতো? উইকেটকিপার সম্বরণ এক সময় বহু বোলারকে দেখেছেন উইকেটের পিছন থেকে। তিনি বলেন, “দারুণ প্ল্যান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। বিরাটকে অফস্টাম্পের বাইরে বল করেছে, ঋদ্ধির পায়ে বল করেছে। যে ভাবে পরিকল্পনা করেছিল সেই ভাবেই খেলেছে ওরা। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের থেকে পাল্টা কিছু দেখলাম না।”
পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অধিনায়কের মতে রোজ রোজ বিরাট রান করে দেবেন না, অন্য ব্যাটসম্যানদেরও পারফর্ম করতে হবে।
১৯ ডিসেম্বর : কোহালিদের আসমান, জমিন
১৯ ডিসেম্বর তারিখটি ভারতীয় ক্রিকেটে এখন ইতিহাস। এই দিনে ভারত টেস্ট ক্রিকেটে তাদের সবথেকে কম রান করল। ১৯ ডিসেম্বরের তাৎপর্য এখানে শেষ নয়। চার বছর আগে এই দিনেই ভারত টেস্টে তাদের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও খেলেছিল।
দুটি ঘটনাই বিরাট কোহালির অধিনায়কত্বে। এবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬ রানে গুটিয়ে গেল ভারতের ইনিংস। চার বছর আগে এই দিনে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৭ উইকেটে ৭৫৯ রান তুলে ডিক্লেয়ার করে দিয়েছিল ভারত।
২০১৬ সালে চেন্নাইতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টসে হেরে ফিল্ডিং করতে হয় কোহালিদের। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৪৭৭ রান তোলে। জবাবে ভারত ৭ উইকেটে ৭৫৯ রান করে। করুণ নায়ার ৩০৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। লোকেশ রাহুল মাত্র ১ রানের জন্য দ্বিশতরান পাননি।
এছাড়া পার্থিব পটেল ৭১, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৬৭ এবং রবীন্দ্র জাডেজা ৫১ রান করেন। দ্বিতীয় দিন ১৭ ডিসেম্বরে ব্যাট করতে নামে ভারত। দিনের শেষে ভারতের রান ছিল বিনা উইকেটে ৬০। তৃতীয় দিনের শেষে ভারত ছিল ৪ উইকেটে ৩৯১। পরের দিন, অর্থাৎ ১৯ ডিসেম্বর ৭ উইকেটে ৭৫৯ রান তুলে ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করে ভারত। ইংল্যান্ডকে ওই ম্যাচে ইনিংস ও ৭৫ রানে হারায় ভারত।
এবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দিন-রাতের অ্যাডিলেড টেস্টে বিরাট কোহালি টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম ইনিংসে ভারতের ২৪৪ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া ১৯১ রানে শেষ হয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে কোহালিরা গুটিয়ে যান ৩৬ রানে। ভারতের কেউ দুই অঙ্কের রানে পৌঁছতে পারেননি। কোহালিদের হারতে হয় ৮ উইকেটে। বিরাট কোহালি ছাড়াও এই ম্যাচের তিনজন, চেতেশ্বর পূজারা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, উমেশ যাদব ওই ম্যাচেও খেলেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা