কাশ্মিরে কী হচ্ছে?

ফারুক আনসারি | Dec 19, 2020 06:19 pm
কাশ্মিরে কী হচ্ছে?

কাশ্মিরে কী হচ্ছে? - ছবি সংগৃহীত

 

স্বাধীনতার পর আজ পর্যন্ত অর্থাৎ ৭৩ বছরের মধ্যে জম্মু-কাশ্মিরকে ধীরে ধীরে জাহান্নাম বানিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ এর আগে এটাকে ‘ভূস্বর্গ’ বলা হতো। দেশভাগের আগে কাশ্মিরের জনগণ অত্যন্ত সুখী জীবনযাপন করত। কিন্তু স্বাধীনতার সময় দেশ যখন ভাগ হয়ে, একদিকে ভারত অন্যদিকে পাকিস্তান বিশ্বের মানচিত্রে অস্তিত্ব পেল, ওই সময়ই চিলের মতো কাশ্মিরে ছোঁ মারা হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত উভয় দেশে এ নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে, কাশ্মিরের জনগণকে যে ভুলের খেসারত রক্ত দিয়ে দিতে হচ্ছে। আত্মমর্যাদাশীল কাশ্মিরি জাতি আজ দেশজুড়ে ভিক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে। তখন থেকে ৭৩ বছরের মধ্যে একটি দিনও এমন অতিবাহিত হয়নি, যেদিন কাশ্মিরের জনগণ শঙ্কা থেকে মুক্তি পেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে। একের পর এক হরতাল ও স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার কারণে বেশ ক্ষতি হয়েছে। কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা সংবিধানের ৩৭০ ধারায় ছিল, যার দ্বারা কমপক্ষে এতটুকু মর্যাদা ও অধিকার তাদের ছিল যে, কাশ্মিরের বাইরের মানুষ ভূমি ও দোকান ক্রয় করতে পারত না। কিন্তু মোদি সরকার ৩৭০ ধারা বাতিল করে দেয়। এখন ভারতের যেকোনো ব্যক্তি কাশ্মিরে জমি ক্রয় করতে পারবে, ব্যবসা করতে পারবে সেখানে। এর দ্বারা কাশ্মিরের জনগণ তাদের অধিকার বঞ্চিত হতে থাকবে।

বিগত ৭৩ বছর ধরে কাশ্মির সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। কংগ্রেস যদি চাইত তাহলে তা ১৯৪৭ সালের পরই মিটিয়ে দিতে পারত। কিন্তু কংগ্রেস টালবাহানা করে গেছে, আর সমস্যা ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছে। আজকের অবস্থা এমন যে, সেখানে না চলে শিমলা চুক্তি, না আছে জাতিসঙ্ঘের সালিশের কার্যকারিতা। দলগুলো তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য জান্নাতসদৃশ কাশ্মিরকে জাহান্নাম বানিয়ে দিয়েছে। ২০১৪ সালের পর তো জম্মু-কাশ্মিরকে এমনভাবে নিষ্পেষণ করা হচ্ছে যে, প্রতিদিন সেখানে রক্তপাত ঘটছে। বাণিজ্যিক কার্যক্রম প্রকাশ্যে কাশ্মিরের জনগণ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বাইরের শিল্পকারখানাগুলোর হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। ফলে আত্মমর্যাদাশীল কাশ্মিরের জনগণ যেখানে নিজেদের বাণিজ্য কার্যক্রম নিজেরাই পরিচালনা করছিল, এখন সেখানে তাদের অন্যের চাকরগিরি করতে হবে। কাশ্মিরের জনগণ আর কবে শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপনের স্বাধিকার পাবে? কবে তাদের সন্তানদের অন্তর থেকে শঙ্কা দূর হবে? মোদি সরকার ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করে শুধু বাণিজ্যিক উন্নয়নের গ্যারান্টি দিয়েছে; কিন্তু রক্তপাতের যে অপতৎপরতা চলছে তা থেকে কাশ্মিরের জনগণ কবে মুক্তি পাবে? মোদি সরকারের চিন্তা তো কাশ্মির নিয়ে, কিন্তু কাশ্মিরের জনগণের জন্য চিন্তা করছেন না কেন? কাশ্মিরের পণ্ডিতদের জন্য সবাই ভাবছে, কিন্তু মুসলমানদের জন্য ভাবছে কে? কাশ্মির যখন ভারতেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাহলে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে না কেন?

কাশ্মিরে ‘সন্ত্রাসবাদ’, যা সেখানে আছে বলা হচ্ছে এবং যুদ্ধ ছাড়া সীমান্তে যুদ্ধের পরিস্থিতি বিরাজ করছে কেন? বিগত ছয় বছরে কাশ্মির ও তার সীমান্তে ভারতের এত সেনা জওয়ান মারা গেছে, যতটা যুদ্ধেও সম্ভবত মারা যায়নি। এটা কেন হচ্ছে? সন্ত্রাস দমনের নামে নিরাপরাধ কাশ্মিরিদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে কেন? ভারত সরকার কি কাশ্মিরে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে? কাশ্মির সম্পর্কে কংগ্রেসের যে নীতি ছিল, বিজেপি সরকার তাতে গতি নিয়ে এসেছে। কাশ্মির যদি ভারতের অংশ হয়, তাহলে কাশ্মিরের ‘জনগণ’ কে? তাদেরকে কেন আপন ভাবা হচ্ছে না?

তাদের আবেগ-অনুভূতিকে গভীর ভাবে অনুধাবনের প্রয়োজন। কাশ্মিরের জনগণ কী চায়, কোনো সরকার এ ব্যাপারে তাদের কথা শোনেনি। তাদের সমস্যার কথা শোনেনি। তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে কেউ কখনো ভাবেনি। জনগণই যেখানে অস্থিরতায় ভুগবে, সেখানে আলাদাভাবে কাশ্মিরে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে কি? বন্দুকের নলে কাশ্মিরে কখনোই শান্তি ও নিরাপত্তার পরিবেশ সৃষ্ট হবে না। বরং পরিস্থিতি জটিলতর হতে থাকবে। এ জন্য যতক্ষণ কাশ্মিরের জনগণের কথা শোনা না হবে, তাদের সাথে সরাসরি কথা বলা না হবে, ততক্ষণ এ সমস্যা রক্ত ঝরাতে থাকবে। অন্যায়ভাবে কাশ্মিরের জনগণ ও সেনা জওয়ান মারা যেতে থাকবে। কাশ্মিরের রাজনৈতিক নেতাদেরকে নজরবন্দী এবং তাদের দলগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এ সমস্যার সমাধান কখনোই হবে না।

জনগণ কী চায়, আগে তা অনুধাবন করা আবশ্যক। কেননা কাশ্মিরের জনগণ শান্তি চায়; উন্নতি করতে চায়; দেশের জাতীয় ধারার সাথে সাথে চলতে চায়। এ জন্য তাদের সুযোগ করে দেয়া উচিত। যতক্ষণ কাশ্মিরের জনগণের কথা শোনা না হবে এবং তাদের দাবিদাওয়া মানা না হবে, ততক্ষণ কাশ্মিরে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। জোরজবরদস্তিমূলকভাবে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কাশ্মিরে কখনোই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদি ভারতের সামগ্রিক স্বার্থের কথা বলেন, সবার সাথে সবার আস্থার কথা বলেন, তাহলে তাকে সবাইকে সাথে নিয়েই চলতে হবে। বিশাল জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করে তাদের চেহারায় কখনোই আনন্দ আনা যায় না।

মুম্বাই থেকে প্রকাশিত দৈনিক উর্দুটাইমস ০১ নভেম্বর,
২০২০ সংখ্যা থেকে ভাষান্তর
ইমতিয়াজ বিন মাহতাব

লেখক: ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us