শ্রীলঙ্কার ৪৮০ মিলিয়ন ডলারের মার্কিন সহায়তা বাতিল
শ্রীলঙ্কার ৪৮০ মিলিয়ন ডলারের মার্কিন সহায়তা বাতিল - ছবি সংগৃহীত
অংশীদার দেশের অনাগ্রহে শ্রীলঙ্কাকে প্রস্তাবিত মিলিনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশনের (এমসিসি) ৪৮০ মিলিয়ন ডলার মঞ্জুরী প্রস্তাব বাতিল করেছে এমসিসি বোর্ড। বৃহস্পতিবার কলম্বোর মার্কিন দূতাবাস এ কথা জানিয়েছে। এই অর্থ এখন অন্য কোন আগ্রহী ও উপযুক্ত দেশকে দেয়া হবে। যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন ও অর্থনীতি জোরদারের কাজে লাগবে বলে দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়।
এমসিসি উন্নয়নের মডেলের মৌলিক দিকগুলো দেশের মালিকানা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। বিশ্বের ৩০টির মতো দেশে ৩৮টি এমসিসি চুক্তি সই করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যার আর্থিক মঞ্জুরীর পরিমাণ প্রায় ১৩.৫ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে যে এসব মঞ্জুরী স্থানীয় ও অর্ভন্তরীণ বিনিয়োগ চাঙ্গা করে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র থেকে মুক্তি দিয়েছে।
দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে থাকবে এবং কোভিড সারাদান ও দেশটির অর্থনীতি বিনির্মাণে সহায়তা করে যাবে।
ভূমি ও পরিবহন প্রকল্পে এই মঞ্জুরী দেয়া হচ্ছে, যা দ্বীপদেশটিতে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। দেশটির জাতীয়তাবাদীরা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের অভিযোগ এই টাকা দিয়ে কৃষিজমিকে বাজারের পণ্যে পরিণত করা হবে। ফলে বর্তমান ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। বর্তমানে ৮০% জমির মালিক সরকার এবং তা কৃষকদের লিজ দেয়া হয়। এমসিসি বাস্তবায়ন করা হলে এই অবস্থা থাকবে না। দেশের জনগণের ৭০% কৃষক। ফলে তারা ভূমি ব্যবস্থা পরিবর্তনের ঘোর বিরোধী।
জাতীয়তাবাদীদের আশঙ্কা এমসিসি বাস্তবায়িত হলে দেশের দুর্লভ ভূমি সম্পদ পশ্চিমা ব্যক্তি ও কর্পোরেশনগুলোর হাতে গিয়ে পড়বে, যা দেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তুলবে।
এমসিসি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কাকে মঞ্জুরী প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই এর বিরোধিতা শুরু হয়। এরপরও পশ্চিমাপন্থী রানিল বিক্রমসিঙ্গে সরকার এমসিসি গ্রহণ করার পক্ষে অনড় ছিলেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এটি দেশের একটি বড় নির্বাচনী ইস্যুতে পরিণত হয়। এগিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি)’র প্রার্থী গোতাবায়া রাজাপাকসা বিদেশের সঙ্গে সব চুক্তি জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনার অঙ্গীকার করেন। এমসিসি পর্যালোচনা ছিলো তার এজেন্ডার শীর্ষে।
নির্বাচনে বিপুল বিজয় লাভ করেন গোতাবায়া। ২০২০ সালের আগস্টে সংসদ নির্বাচনকালেও এসএলপিপি অঙ্গীকার করে যে এমসিসি পর্যালোচনা করা হবে। এসএলপিপির জাতীয়তাবাদী ধারণার পক্ষে জনগণ ব্যাপকভাবে ভোট দেয়। দলটি পার্লামেন্টে দুই–তৃতীয়াংশ আসন লাভ করে।
তখনই যুক্তরাষ্ট্র দেয়ালের লিখন পড়তে পারে এবং এমসিসি এগিয়ে নিতে চাপ দেয়া বন্ধ করে দেয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও শ্রীলঙ্কা সফরকালেও এ নিয়ে কথা বলেননি। তিনি মিডিয়ায় বলেন, এমসিসি গ্রহণ করা বা না করা শ্রীলঙ্কার ব্যাপার।
দুটি উপাদান
এমসিসি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে : এই কমপ্যাক্ট শ্রীলঙ্কা সরকারকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে দুটি বাধা অপসারণে সহায়তা করবে। ১. অপর্যাপ্ত পরিবহন লজিস্টিক অবকাঠামো ও পরিকল্পনা, ২. কৃষিভূমি, সেবাখাত ও শিল্পে বিনিয়োগকারীদের প্রবেশ সুবিধার অভাব।
প্রেসিডেন্টের কমিশন
পরিবহন অংশের ব্যাপারে শ্রীলঙ্কার জাতীয়তাবাদীদের আপত্তি না থাকলেও তারা ভূমি প্রকল্পের ঘোর বিরোধী। এই আপত্তি খতিয়ে দেখতে প্রেসিডেন্ট কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের সুপরিশেও বলা হয় যে বর্তমান আকারে এমসিসি গ্রহণযোগ্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ে নতুন করে আলোচনায় রাজি নয়। তাই এমসিসি বোর্ড শ্রীলঙ্কার মঞ্জুরী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেছে।
সূত্র : এসএএম