আজারবাইজানের উত্থান : কী করবে ইরান?
আয়াতুল্লাহ খামেনি - ছবি সংগৃহীত
আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধে এই দেশ দুটি ছাড়াও এতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল তুরস্ক, রাশিয়া, ইসরাইল, ইরান, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব।
আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সঙ্কট অনেক দিনের। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে নাগার্নো-কারাবাখ নামে পরিচিত আজারবাইজানের ভূমি দখল করে রেখেছিল আর্মেনিয়া। কিন্তু জাতিসঙ্ঘ বা মুসলিম দেশগুলো নীরবতা অবলম্বন ছাড়া আর কিছুই করেনি। অবশ্য এমনটি নতুন কিছু নয়। তাদের নীরবতার কারণেই ফিলিস্তিনিরা নিজ দেশে পরবাসী হয়ে উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে, কাশ্মিরিরা ভারতের অত্যাচার, নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
কেবল ভূখণ্ডগত কারণেই নয়, প্রাকৃতিক সম্পদের জন্যও নাগার্নো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ পাওয়া খুবই দরকারি ছিল আজারবাইজানের। স্বর্ণ, রুপাসহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এই অঞ্চলটি। আর্মেনিয়া এই এলাকাটির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এসব সম্পত্তি ব্যবহার করছিল আজারবাইজানের বিরুদ্ধেই।
ইরানের সাথে আজারবাইজানের সাথে সম্পর্ক ধর্মীয়। কারণ জাতিগত দিক থেকে আজারবাইজানিরা তুর্কি হলেও ধর্মীয়ভাবে তারা শিয়া। আবার উসামনিয়া খেলাফাতের আগে এই এলাকা ইরানের অধীনে ছিল। এবং প্রায় দুই কোটির মতো আজারি অধিবাসী এখনো ইরানের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব হওয়ার পর অতি উৎসাহী ইরানি নেতারা আজারবাইজানেও ইসলামী বিপ্লব রফতানি করতে চেয়েছিল। এ কারণে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া ইরানের আরেকটি ভয়ের কারণ হলো, ইরানি আজারিদের আজারবাইজানের সাথে যোগ দেয়ার আন্দোলন।
আবার আজারবাইজানে ইসরাইলের উপস্থিতিও ইরানের জন্য শঙ্কার কারণ। ১৯৯০-এর দিকে আজারবাইজান ছোট প্রতিবেশী আর্মেনিয়ার কাছে রাশিয়ার কারণে অপমানজনকভাবে পরাজিত হয়েছিল। তখনি ইসরাইল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আজারবাইজানে ঢুকে পড়ে। আজারবাইজান থেকে ইসরাইল তার জ্বালানির প্রায় ৮০ ভাগ আমদানি করে থাকে। এর বিনিময়ে তারা অস্ত্র রফতানি করে আজারবাইজানে।
অন্যদিকে ইরানের শ্লোগানের ভয়ে আজারিদেরকে ব্যবহার করে ইরানে বিভিন্ন রকমের অন্তর্ঘাত অভিযান পরিচালনা করত। এ কারণে ইরানের সাথে সম্পর্ক খুবই খারাপ অর্থাৎ তলানিতে পৌঁছেছিল। এ কারণে আর্মেনিয়ার সাথে সম্পর্ক স্থাপনকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল ইরান। অবশ্য পরে আজারবাইজানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ইরান। ইরান সরকার ও দেশটির সর্বোচ্চ নেতা ইমাম খামেনিও সমর্থন জানান আজারবাইজানের। তাতে আজারবাইজান ও ইরানের মধ্যে আবার ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইসরাইল : তবুও লাভবান
নানা কারণে আজারবাইজানের সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছিল ইসরাইল। আজারবাইজানে ইসরাইল তাদের আধুনিক হেরন ড্রোনসহ বিভিন্ন অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। এমনকি এই যুদ্ধেও আর্মেনিয়াকে সমর্থন করেনি ইসরাইল। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফ্রান্স : কঠিন শিক্ষা
বর্তমানে তুরস্কের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ফ্রান্স। মনে রাখতে হবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত উসমানিয়া খেলাফত ছিল দুনিয়ার একক পরাশক্তি। এই ফ্রান্সই রাশিয়া ও ব্রিটেনকে সাথে নিয়ে উসমানিয়া খেলাফতের পতনের জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে। বিশাল উসামনিয়া খেলাফতের দুর্বলতার সুযোগে সা¤্রাজ্যটি ভেঙে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করার ফন্দি করে। তারা এতে অনেকাংশেই সফল হয়। তবে মুসলিমবিশ্বকে এ জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছে।
তবে এখন ফ্রান্সকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করেছে তুরস্ক। এই যুদ্ধের মাধ্যমে তুরস্ক প্রমাণ করেছে যে তাদেরকে আর দমিয়ে রাখা যাবে না, তারা শিগগিরই বিশ্বশক্তিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। আর্মেনিয়ার এই পরাজয় থেকে ফ্রান্সসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো শিক্ষা গ্রহণ করবে বলে আশা করা যায়।