পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা কাকে ভোট দেবে?

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Dec 19, 2020 12:26 pm
ওয়াইসি ও মমতা

ওয়াইসি ও মমতা - ছবি সংগৃহীত

 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিমদের ভোট কোন দিকে যাবে? শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেসের ‘মাইনরিটি সেল'-এর সম্পাদক পদ থেকে কবিরুল ইসলামের ইস্তফার পর প্রশ্নটা জোরদার হলো।

২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রায় ১০০টি আসনের ভবিষ্যৎ ঠিক করে দিতে পারে ৩০% মুসলিম ভোট। কাজেই ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস যেমন এই ভোট নিজের দিকে ধরে রাখতে সচেষ্ট, তেমনই হিন্দুত্ববাদী বিজেপিও তৎপর সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে ভাগ বসাতে। গত বুধবারই মেদিনীপুরে জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা সিরাজ খান–কে পাশে বসিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ভোটের দায়িত্বে থাকা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় দাপটে ঘোষণা করে গেছেন, বিজেপি হলো সেই দল, যেখানে সিরাজ খান আর শ্রী রাম পাশাপাশি থাকে। তার দুদিন পরই, শুক্রবার তৃণমূলের মাইনরিটি সেলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন কবিরুল ইসলাম।

ওদিকে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ‘‌মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন'‌ দল সাফল্য পাওয়ার পরই দলের প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন ভোটেও তারা প্রার্থী দেবেন। যে জল্পনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে অনেক আগে থেকেই ছিল। কিন্তু ওয়াইসির প্রকাশ্য ঘোষণার পর মুসলিম ভোট ভাগ হওয়ার আশঙ্কায় চটে যান তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। ওয়াইসির বিরুদ্ধে বিজেপির হয়ে কাজ করার কটাক্ষ করেন তিনি। পাল্টা ওয়াইসি বলেন, তাকে বা তার দলকে কেনা যায় না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি–বিরোধী মুসলিম ভোট ভাগ হলে যে বিজেপিরই সুবিধা, সেটা বুঝতে পারছে প্রত্যেকেই।

এদিকে ফুরফুরা শরিফের এক পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, তিনি সংখ্যালঘুদের দল গড়ে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী দেবেন। কাজেই এবার আর মুসলিমরা বাম, কংগ্রেস, তৃণমূল, বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে ভোট দেবে না। সংখ্যালঘু বলতে কেবল মুসলিম না, দলিত, মতুয়া ও নিম্নবর্ণের হিন্দুর কথাও বুঝিয়েছেন আব্বাস সিদ্দিকি, যাদের সম্মিলিত ভোট প্রায় ৩৬%। ফুরফুরা শরিফের আরেক পিরজাদা, আব্বাসেরই দাদা ত্বহা সিদ্দিকি অন্যদিকে জোর দিয়ে বলেছেন, মুসলিমরা মমতা এবং তার দলকেই সমর্থন করবেন। বিজেপিবিরোধী ভোট ভাগ হবে না।

এবার আব্বাস সিদ্দিকি আলাদা দল গড়ে প্রার্থী দিন, বা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল প্রার্থী দিক, পুরোটাই আদতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের নিদানপত্র মেনে হিন্দু ভোট একজোট করার ছক বলেই মনে করছেন সিপিএম নেতা মোহম্মদ সেলিম। তার বক্তব্য, ‘‌‘ঐতিহাসিকভাবে ‌বাংলায় কখনোই মুসলমান ভোট হিসেবে মুসলমান ভোট দেয়নি। স্বাধীনতা–উত্তর ভারতে। তাহলে মুসলিম লিগ অনেক বড় হয়ে যেত। তখন মুসলিম লিগের দু–তিনজন বিধায়ক ছিল। তখনও কংগ্রেস বেশিরভাগ জায়গায় মুসলিম ভোট পেয়েছে। পরে বামেরা পেয়েছে, তৃণমূল পেয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে এই বিভাজনটা হয়েছে। শুধু মুসলমান ভোট না, হিন্দুদের মধ্যেও ভাগ হয়েছে। দলিত, আদিবাসী, রাজবংশী, মতুয়া, গোর্খালি। বিজেপি আর তৃণমূলের একই ফর্মুলা। দু দলই খোপে খোপে ভাগ করেছে বাংলাকে। বাঙালি ভোটারকে। বাঙালি পরিচয় বলতে আমরা সব সময় বলি, অখণ্ড বাঙালি জাতিসত্তা। স্বাধীনতার আগে থেকেই। ধর্মের নামে যখন উগ্রতা তৈরি হয়েছে, তখনও সবাই দেশ ভাগের জন্যে, বাংলা ভাগের জন্যে রাজি ছিল না। তা-ও সেটা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক প্রচার আর ব্রিটিশের জন্য। এখন আবার সেটাই হচ্ছে।'‌'

ওয়াইসির দল প্রার্থী দিলে মুসলিম ভোট সেদিকে যাবে কিনা, সে প্রশ্নে মোহম্মদ সেলিমের পাল্টা প্রশ্ন, ওই দলটা কি আদৌ পশ্চিমবঙ্গে আছে?‌ তাদের দপ্তর কোথায়?‌ জেলার নেতারা কারা?‌ রাজ্যের নেতা কে কে?‌ কাজেই এটা ওয়াইসির দলের ব্যাপার নয়। মুসলিম ভোট বিরুদ্ধে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে বিজেপি হিন্দু ভাবাবেগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। তিনটি কৌশল নিয়েছে বিজেপি। বাংলাদেশবিরোধী প্রচার করে বাংলাদেশকে ভিলেন বানানো। বাংলাদেশ আর উগ্রবাদকে এক করে দেখাচ্ছে, যা আসলে বাঙালিবিরোধী।
দুই হচ্ছে ‘‌ইসলামোফোবিয়া'‌, যা ওরা সারা দেশে ছড়াচ্ছে।
আর তিন হচ্ছে, মুসলমানরা এককাট্টা হচ্ছে, তাই হিন্দুদেরও এককাট্টা হতে হবে!‌ যেটা সত্যি নয়।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us