আর্মেনিয়া যুদ্ধে আজারবাইজানের লাভ
আর্মেনিয়া যুদ্ধে আজারবাইজানের লাভ - ছবি : সংগৃহীত
আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সঙ্কট অনেক দিনের। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে নাগার্নো-কারাবাখ নামে পরিচিত আজারবাইজানের ভূমি দখল করে রেখেছিল আর্মেনিয়া। কিন্তু জাতিসঙ্ঘ বা মুসলিম দেশগুলো নীরবতা অবলম্বন ছাড়া আর কিছুই করেনি। অবশ্য এমনটি নতুন কিছু নয়। তাদের নীরবতার কারণেই ফিলিস্তিনিরা নিজ দেশে পরবাসী হয়ে উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে, কাশ্মিরিরা ভারতের অত্যাচার, নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
কেবল ভূখ-গত কারণেই নয়, প্রাকৃতিক সম্পদের জন্যও নাগার্নো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ পাওয়া খুবই দরকারি ছিল আজারবাইজানের। স্বর্ণ, রুপাসহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এই অঞ্চলটি। আর্মেনিয়া এই এলাকাটির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এসব সম্পত্তি ব্যবহার করছিল আজারবাইজানের বিরুদ্ধেই।
আর্মেনিয়া জনবল ও ভূমির আয়তনে আজারবাইজানের এক তৃতীয়াংশের চেয়েও কম। অর্থনৈতিক দিক থেকেও আজারবাইজানের ধারে কাছেও নেই তারা। তারপর শুধু রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সমর্থনে ও ফ্রান্সের মতো মুসলিমবিদ্বেষী পাশ্চাত্য দেশগুরেঅর সাহায্য ও প্ররোচনায় প্রায় ৩০ বছর আগে আজারবাইজানের সামরিক দুর্বলতার সুযোগে ২০ ভাগ ভূমি দখল করেছিল। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আজারবাইজানের থাকলেও এলাকাটি তারা যুদ্ধ ছাড়া ছাড়তে রাজি ছিল না। তাই যুদ্ধে নামতে বাধ্য হয় আজারবাইজান।
আর্মেনিয়া এই অঞ্চলটি দখল করার পর সেখানে শত শত বছর ধরে বংশানুক্রমিকভাবে বাস করা আজারিদের বিতাড়িত করে। তাদের ভূসম্পত্তির পাশাপাশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও চলে যায় আর্মেনিয়ানদের হাতে। আজারিরা শূন্য হাতে আজারবাইজান ও তুরস্কের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আজারবাইজানের এবারের জয়ের পর তারা আবার তাদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে ফিরে যেতে শুরু করেছে।
এই যুদ্ধ আজারবাইজানের জন্য ছিল বড় একটি পরীক্ষা। তবে তারা তাতে পুরোপুরি সফল হয়েছে। অনেক আত্মত্যাগের পর সাফল্য পাওয়ায় তারা এখন এই জয়কে উদযাপন করছে। আবার আনন্দমিছিলে আজারবাইজানের পতাকার পাশাপাশি তুরস্কের পতাকাও দেখা গেছে। এই জয়ের মাধ্যমে আজারবাইজান ৩০ বছর আগের পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করতেও সক্ষম হয়। ৩০ হাজার শহিদের রক্তে অর্জিত এই জয় উদযাপনে তাই উদ্দীপনার কমতি ছিল না।
নাগার্নো-কারাবাখ জয়ের জন্য এবার আজারবাইজান বেশ আটঘাঁট বেঁধে নেমেছিল। তাদের যুদ্ধ প্রস্তুতিতে সহায়তায় এগিয়ে আসে তুরস্ক। ২৭ সেপ্টেম্বর যুদ্ধ ঘোষণার দিনই তুরস্ক সরকার জানিয়ে দেয় যে তারা সর্বশক্তি দিয়ে আজারি ভাইদের সহায়তা করবে। অবশ্য কেবল তুরস্ক নয়, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক ভালো রেখে সেখান থেকেও কিছু ড্রোন ও সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছিল আজারবাইজান। তেলের কারণে আজারবাইজানের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলতেই হয় ইসরাইলকে। আজারবাইজানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পেছনে ইসরাইলের আরেকটি কারণ রয়েছে। আর তা হলো আজারবাইজানের প্রতিবেশি ইরানের বিরুদ্ধে নিজস্ব কর্মসূচি বাস্তবায়নের সুযোগ কাজে লাগানো।
আজারবাইজান এই জয়ের মাধ্যমে বিশ্বকে জানিয়ে দিলো যে তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে একটি শক্তিশালী জাতি ও দেশ। কেউ তাদেরকে দুর্বল ভাবলে ভুল করবে। তারা আরো প্রমাণ করেছে যে সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী না হলে বিশ্ব মোড়লেরা তাদের নিয়ে খেলতেই থাকবে, কোনো সমস্যার সমাধান করবে না। নিজেদের সমস্যার সমাধান নিজেদেরই করতে হবে।
নাগার্নো-কারাবাখ যুদ্ধে জয়ের মাধ্যমে ওই স্বীকৃতিই অর্জন করেছে আজারবাইজান। যুদ্ধে আর্মেনিয়া পরাজয় মেনে নিয়েছে। তারা নাকচিবান ও দুই অঞ্চলের মধ্যে সংযোগকারী একটি রাস্তাও ছেড়ে দিতে রাজি হয়। এই সুবিধা তুরস্কও পাবে। কারণ এলাকাটি তুরস্কের সাথেও সংযুক্ত।