সোমালিয়ায় মার্কিন নীতি : ট্রাম্প ও বাইডেন
ট্রাম্প ও বাইডেন - ছবি সংগৃহীত
বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের একটি সোমালিয়া। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ যদিও অনেক খ্রিষ্টান রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ২২টি দেশ নিয়ে আরব বিশ্ব গঠিত। সোমালিয়াও আরব দেশ। অথর্ব সরকারের কর্মকাণ্ড ও নিজের ভোগবিলাসের লালসা এর সমস্যা ও দুর্দশাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সোমালিয়ায় সংবিধান অনুসারে, প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী সরকারপ্রধান যাকে প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেন; আর সংসদ অনুমোদন দেয়। সোমালিয়ার আরেক পরিচয়, জলদস্যুর ঘাঁটি। আন্তর্জাতিক জলসীমায় বাণিজ্যিক জাহাজ ও তেলের ট্যাংকারে নির্মম অভিযান চালায় ওরা। সোমালিয়ার সামাজিক সমস্যাও প্রকট। সোমালি মেয়েদের খতনা করা হয়। অনেক দেশে এটি নিষিদ্ধ এবং অনেক দেশ বেআইনি ঘোষণা করেছে এটাকে। কিন্তু সোমালি সমাজে এই রীতি গভীরে প্রোথিত। ফলে মেয়েরা নির্যাতন, রোগ ও মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। যথাযথ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও বিচার কার্যক্রমের অভাবে এটাকে তিরোহিত করা যাচ্ছে না। একই সাথে বাল্যবিয়েও চালু আছে।
গত ৪০ বছরে সোমালিয়ায় ডজনখানেক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে। নিকটাতীতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল ২০১০-১২ সালে, ২০১৪ ও ২০১৬-১৭ সালে। খরা ও গোষ্ঠীগত বিরোধে সোমালিরা মানবিক সহায়তার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। খাবারের দাম আকাশচুম্বী, লাখ লাখ সোমালি জানেন না তাদের পরবর্তী আহার কোত্থেকে আসবে। ২০১১ সালে দুর্ভিক্ষে দুই লাখ ৬০ হাজার জনের মৃত্যু হয়। মানুষ খাবার ও পানীয় জলের জন্য পশুর প্রস্রাব পর্যন্ত পান করেছিল। চলতি বছরের গোড়ার দিকে যেসব কৃষিজাত ফসল জমিতে ছিল, সেগুলো পঙ্গপাল খেয়ে শেষ করেছে। জাতিসঙ্ঘ জানায়, এই বছর সোমালিয়া ও ইথিওপিয়াকে যে পঙ্গপাল আক্রমণ হয়েছে তা গত ২৫ বছরে দেখা যায়নি। বিশাল ঝাঁকে ৩৬০ বিলিয়ন পঙ্গপাল থাকে, এগুলো ওড়ার সময় সূর্যকেও আড়াল করেছে।
সরকারি ও আধাসরকারি কর্তৃপক্ষ পানি সরবরাহব্যবস্থা ভোগ করে। স্বাস্থ্যগত যেসব অসুখে সোমালিরা বেশি মারা যান তার মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, কলেরা, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সোমালিদের নিঃশেষ করে দিচ্ছে। রাজধানী মোগাদিসুতেই দুই ইসলামী গোষ্ঠী কর্তৃত্বের জন্য লড়াই করে। এক দল সুফি ভাবধারার এবং তারা মধ্যপন্থী; অপর দল আল শাবাব ‘মৌলবাদী’ ও উগ্র। কোনো বিরতি ছাড়াই পক্ষদ্বয় ১৯৯১ সাল থেকে লড়াই করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র আল শাবাবকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য বহুদিন ধরে যুদ্ধ করে আসছে। আল শাবাব তাদের ঘোষণা মতে, শরিয়া আইন পুরোপুরি চালু করতে চায়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল শান্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এমন ভয়াবহ রাজনৈতিক দুর্যোগের মধ্যে সোমালিয়ার এক বিরাট অংশ ‘সোমালিল্যান্ড’ নামে স্বাধীন হতে চায়, স্বাধীনতার ডাক দিয়েছে এই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। সোমালিল্যান্ডে ভিন্ন মুদ্রা, সেনাবাহিনী, পাসপোর্ট রয়েছে। তারা দাবি করে- এ অঞ্চলের লোকদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি আলাদা, নৃতাত্ত্বিকভাবেও তারা ভিন্ন। ২০০৮ সাল থেকে সোমালিয়ার চেয়ে তুলনামূলক শান্ত এই এলাকা। এ মুহূর্তে সোমালিল্যান্ডের সাথে সংঘর্ষ বাধিয়ে পরিস্থিতি জটিল করতে চায় না সোমালিয়া। সোমালিল্যান্ডের সাথে তাইওয়ান গোপন সম্পর্ক করেছে। চীনের সাথে বাড়ন্ত-বিরোধের কারণে তাইওয়ান গত ফেব্রুয়ারিতে করা গোপনচুক্তি ও সম্পর্কের বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক বাহিনী সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুতাবিরোধী টহল দেয়। এই টহল দলে চীনের নৌবাহিনী শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে। পাশের জিবুতিতে চীনের নৌঘাঁটি রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শেষ দিনগুলোর দিকে এখন সবার নজর। বিশেষ করে সামরিক দিক দিয়ে তিনি কোথায় সেনা পাঠাচ্ছেন বা সেনা প্রত্যাহার করছেন; সেগুলো বিশেষ বিবেচনা রাখে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সেনাঘাঁটি নিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন কী করবেন, সেসবও ট্রাম্প ভাবছেন মনে হয়। গত নভেম্বরে ক্রিস্টোফার মিলার, প্রতিরক্ষা সচিব ঘোষণা দিয়েছেন, আফগানিস্তানে সেনাসদস্য ৪,৫০০ থেকে ২,৫০০ এবং ইরাকে ৩,৫০০ থেকে ২,৫০০-তে নামিয়ে আনছেন। সোমালিয়া থেকেও সেনা প্রত্যাহার হচ্ছে। যদিও আল শাবাব বাহিনীর সাথে যুদ্ধ ও সঙ্ঘাত চলছে, এ বাহিনী ক্ষিপ্রতার সাথে প্রশিক্ষিত সেনাদের হত্যা করছে। সোমালি স্পেশাল ফোর্স দানাবকে প্রশিক্ষণের জন্য কিছু মার্কিন প্রশিক্ষক থেকে যাবেন। সোমালিয়ায় ক্ষমতার পালা বদলের সময় সবাই শপথ করেই, আল শাবাবকে ‘খতম’ করা হবে। কিন্তু রাজনৈতিক মঞ্চে নিজেরাই ‘খতম’ হয়ে যাচ্ছেন। আল শাবাবকে পশ্চিমারা ‘মৌলবাদী ইসলামী দল’ বলে ডাকে। পশ্চিমা শক্তি মূলত আল শাবাবকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যুদ্ধ করলেও তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সোমালিয়ায় আইএসেরও বড় বড় ঘাঁটি রয়েছে। সময় সময় এসব ঘাঁটি লক্ষ করে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালায়। ওয়াশিংটনের মূল উদ্দেশ্য হলো আল শাবাব ও আইএসকে নিশ্চিহ্ন করা। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় ড্রোনের মাধ্যমে পাকিস্তান, সোমালিয়া ও ইয়েমেনে ৫৬৩ বার বোমা হামলা করা হয়েছিল। যুদ্ধ এলাকার বাইরে বোমা বর্ষণ এমন এক জঘন্য কাজ, যা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ ও মানবতাবিরোধী। কিন্তু ওবামার সময় মিডিয়া ব্ল্যাকআউটের কারণে এসব তথ্য এবং পেন্টাগনের বোমা বর্ষণের দৈনিক প্রতিবেদন দিনের আলো দেখেনি। ওবামাকে ‘ম্যাককুইন অব এরিয়েল ডেথ’ নামে ডাকা হতো।
ওয়াশিংটন আল শাবাব নিয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে সেনা প্রত্যাহার করছে। দুর্র্ভিক্ষপীড়িত ও হতদরিদ্র দেশে বোমা হামলা করেও তাদের নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হয়নি। যুদ্ধ-পরিশ্রমী নেতা মোহাম্মদ ফারাহ আইদিদকে ধরতে গিয়ে ১৮ জন আমেরিকান সৈন্য প্রাণ হারালে ক্ষিপ্ত হয়ে সোমালিয়াতে বিমান থেকে ব্যাপক ক্রুজ মিসাইল ও বোমা হামলা চালায় মার্কিনিরা। ওবামার আমলেও আল শাবাবের ওপর ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছিল। এতে আহমদ আবদি গোদানে মৃত্যুবরণ করেন। গোদানে ‘আলকায়েদার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন’ মর্মে ওয়াশিংটন মিডিয়ায় প্রকাশ করে। তার মৃত্যুতে আল শাবাব শান্তিরক্ষী বাহিনীর ওপর ব্যাপক হামলা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রও মোগাদিসুতে ব্যাপক হামলা চালায়, ফলে ৬০০ সাধারণ নাগরিক নিহত হয়। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তিনিও সোমালিয়ার ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে পড়েন। ২০১৭ সালে পেন্টাগনকে সোমালিয়ায় সারা দেশে আরো যুদ্ধ চালানোর অনুমতি দেন। আল শাবাব সদস্যকে হত্যার জন্য কমান্ডারকে কোনো অনুমোদন না নেয়ার সুয়োগ দেয়া হয়। শুরু হয় নিরন্ন যোদ্ধা ও প্রশিক্ষিত যোদ্ধার লড়াই। মার্কিন জেনারেল টমাস বক্ষ ফুলিয়ে বলেন, ‘আমাদের খুশিমতো লড়াই হবে।’ ২০১৮ সালে ৪৭টি ড্রোন বহর আক্রমণ চালায়। গত বছর ২০১৯ সালে তা বেড়ে ৬৩টিতে দাঁড়ায়। এখন সেনা প্রত্যাহার হলেও সোমালিয়া সরকারকে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা করা হবে বলে পেন্টাগন ঘোষণা দিয়েছে। যথা-পূর্বং তথা-পরং। সমালোচকরা বলছেন, আল শাবাব বাহিনী বোমা বর্ষণের কারণে পার্শ্ববর্তী কেনিয়ার জঙ্গলে আত্মগোপন করেছে। তাই সেনাদের সেখানে অপারেশনের জন্য নেয়া হচ্ছে।
সোমালি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ কিছুই করতে পারছেন না। সমস্যা অন্তহীন; তিনি বরং সমস্যার সাগরে ভাসছেন। এ মুহূর্তে বিদেশী সেনা সহায়তা ছাড়া তিনি কিছু করতে অক্ষম। দেশে পবর্তসম সমস্যা। টুইটারে তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি সহায়তায় সোমালিয়া কার্যকরভাবে আল শাবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করছে।’ যুক্তরাষ্ট্র-সোমালিয়া পার্টনারশিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সোমালিয়ার সিনেটর আইয়ুব ইসমাইল ইউসুফ হঠাৎ সেনা প্রত্যাহারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বৈশ্বিক সন্ত্রাস দমনের জন্য বিদেশী সেনার প্রয়োজন শেষ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট সেপ্টেম্বর-২০ প্রতিবেদনে বলেছে, ‘বহু বছর ধরে সোমালিয়া-যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী চাপ সামাল দিয়ে এলেও পূর্ব আফ্রিকায় আল শাবাবের দৌরাত্ম্য একটুও কমেনি।’ আমেরিকান ইউনিভার্সিটির উইলিয়াম লরেন্স সেনা প্রত্যাহারকে ‘অসহায় প্রস্থান’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্র থেকে একবার সরে এলে আবার ব্যুহরচনা করা সোজা নয়। অনেক গ্রাউন্ড সাপোর্ট হারিয়ে যায়।’
বাইদোয়া সোমালিয়ার উল্লেখযোগ্য একটি শহর। এখানে আল শাবাবের বড় ঘাঁটি। বাইদোয়ার সীমান্তে কেনিয়ার বিশাল জঙ্গল; প্রয়োজনে জঙ্গলে শাবাব বাহিনী লুকিয়ে থাকে। বিবিসির মেরি হার্পার বলেন যে, বাইদোয়া ও কেনিয়া সীমান্তে টার্গেট করা অসম্ভব। আল শাবাব থেকে কেউ ফিরতেও পারে না। তাদের আটক করা হয়। কেউ পালিয়ে এলে তাকে সোমালিয়া ছাড়তে হয়, নতুবা মৃত্যুদণ্ড। সোমালি সরকারি বাহিনী যেখানে রয়েছে সেখানে আল শাবাব আক্রমণ চালায়। এটা তাদের একটি কৌশল। দক্ষিণ সোমালিয়ার পুরো এলাকা থেকে এই বাহিনী ট্যাক্স আদায় করে, এদের সদস্য সংখ্যা ৯ হাজার। গোয়েন্দা বাহিনীতে এক হাজারের কিছু বেশি। মহিলারা আল শাবাবের বড় একটি অংশ। বিভিন্ন অপারেশনে মহিলারা সহায়তা করেন।
আমেরিকার ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের গত ডিসেম্বর ৪ তারিখের ঘোষণা : ‘কোনো পলিসির পরিবর্তন নয়’। এই মার্কিন সেনারা কেনিয়া ও জিবুতিতে প্রেরিত হবে। জিবুতিতে চীনের নৌবন্দর রয়েছে। ক্রমবর্ধমান চীনের সামরিক বাহিনীকে কোনো ‘চেক’ ছাড়া বাড়তে দিতে ওয়াশিংটন রাজি নয় বলেই মনে হচ্ছে। আমেরিকার সেনা কত দিনের জন্য প্রত্যাহার করা হচ্ছে, তা জানা যায়নি। তবে আল শাবাব ও আইএস আবারো শক্তি অর্জন করবে, তা বলাবাহুল্য। ট্রাম্পের সেনা প্রত্যাহারে লাভজনক কিছু নেই; বরং সোমালিয়া অল্প কিছু দিনের মধ্যে ভঙ্গুর অবস্থায় পড়ে যাবে। নতুন প্রেসিডেন্টের ‘ডিসিশান লিস্টে’ সোমালিয়া গুরুত্ব পায়নি; তবে এখন সেটি পরিবর্তিত হতে পারে। যে প্রেসিডেন্ট আমেরিকার অন্তহীন যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাতে চান তিনি ওয়ার জোনে আবার সেনা পাঠালে জনগণের কাছে কী বলবেন? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও ক্ষমতায় আসার আগে ওবামা ও হিলারির সমালোচনা করে বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সেনা পাঠিয়ে নির্বোধের মতো কাজ করেছেন তারা। কিন্তু তিনিও ক্ষমতায় এসে ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সব কিছু করেছেন, ইয়েমেন যুদ্ধে জড়িয়েছেন, সিরিয়ায় নতুন করে সেনা পাঠিয়েছেন, আফগানিস্তানে ‘মাদার অব অল বোম্বস’ মেরেছেন, সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে শতাধিক হাফেজ শিশুকে বোমা মেরে হত্যা করেছেন। ইরানের জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করেছেন এবং বিজ্ঞানী ফখরিজাদে হত্যায় সমর্থন দিয়েছেন। তিনি ইরানের বিরুদ্ধে শেষ দিনগুলোতে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সমর্থন পাননি।
বলা হয়েছে, জো বাইডেন ক্ষমতা নেয়ার আগেই সেনা প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। তা হলে সোমালিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের বোঝাটি নয়া প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ওপরই পড়ছে। সোমালিয়ায় গোষ্ঠীগত সশস্ত্র সংগ্রাম যেন রক্তের সাথে মিশে আছে। নিরাপত্তাহীনতা, রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ও সীমাহীন মানবতাবিরোধী অপরাধ সোমালিদের মহাসঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। ২.৮ মিলিয়ন সোমালি দেশের অভ্যন্তরে উদ্বাস্তু। লুটপাট, ধর্ষণের কোনো বিচার নেই। ২৫ নভেম্বর সিআইএর কিছু কর্মকর্তাও সোমালিয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন। সবাই মনে করছেন এটি আল শাবাব বাহিনীর কাজ। কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই।
সোমালিয়ায় যেমন খরায় সব শুকিয়ে চৌচির হয় আবার বন্যায় সব ডুবিয়ে দেয়া মানুষ অসহায় হয়ে বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে পড়ে। খরা ও বন্যা একটির পর একটি চলতে থাকে। সে সাথে ভায়োলেন্স ও গোষ্ঠীবিরোধ। অনেক বছরের স্বল্প বৃষ্টিপাত ও ন্যূনতম ফসল সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, ইথিওপিয়া ও কেনিয়ায় নিয়মিত দুর্যোগের কারণ। সশস্ত্র সংগ্রাম ও ভায়োলেন্স গত ৩০ বছর ধরে চলছে। সশস্ত্র গোষ্ঠী বোমাবাজি, আত্মঘাতী আক্রমণ, বন্দুকযুদ্ধ ও অপহরণের মাধ্যমে সমাজকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছে। ওদের দমাতে সরকারি সেনাবাহিনীও আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ চালায়। ফলে এলাকা ছেড়েছেন মানুষ। খাবার ও পানির জন্য হাহাকার নিয়মিত ঘটনা। তবু কেউ এগিয়ে আসার মতো নেই। তদুপরি গবেষক ও চিকিৎসা কর্মীদের মতে, কোভিড-১৯ সর্বনাশা বিপর্যয় ডেকে এনেছে। কিন্তু গৃহযুদ্ধ তাদের কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানতে সুযোগও দিচ্ছে না।
নির্বাচনী অঙ্গীকার হিসেবে ট্রাম্প সোমালিয়া থেকে ডিসেম্বরের শুরুতে সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। ১৫ জানুয়ারি তারিখের ভেতর কর্মরত ৭০০ বিশেষ ফোর্স চলে আসার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার ট্রাম্পের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত, অর্থাৎ বিদেশে কর্মরত সেনাসংখ্যা কমানো। ট্রাম্পের ভাষায়, সারা জীবনের যুদ্ধ থেকে আমেরিকার পরিত্রাণ পাওয়া উচিত।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব, বাংলাদেশ সরকার