চাকরি-পরীক্ষায় দারুণ সুযোগ আসছে!
চাকরির দারুণ সুযোগ সামনেই! - ছবি সংগৃহীত
শিক্ষায় স্থবিরতা। পরীক্ষায় জট। করোনায় লণ্ডভণ্ড শিক্ষা ক্যালেন্ডারের একটি বছর। দীর্ঘ এই সময়ে পাঠ্যক্রমের কোনো পরীক্ষাও হচ্ছে না। চাকরিতে প্রবেশের প্রতিযোগিতার সব পরীক্ষাও স্থগিত। ফলে করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে গেলে ২০২১ সালের বড় একটি সময় ধরেই চলবে স্থগিত হওয়া এসব পরীক্ষা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন শিগগিরই খুলে যাচ্ছে পরীক্ষার জট। ফলে নতুন বছরের পুরোটা সময়ই ব্যস্ততায় কাটবে শিক্ষার্থীদের। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক পরীক্ষার যে রুটিন প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে নতুন বছরের শুরু থেকেই ব্যস্ত থাকবে শিক্ষার্থীরা। একই সাথে চাকরির বাজারের জট কাটাতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হবে ২০২১ সালের পুরোটা সময়জুড়ে।
শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের অনেকেই জানান, ২০২০ সালে করোনার কারণে শিক্ষা ক্ষেত্রে যেমন স্থবিরতা ছিল, তেমনি অ্যাকাডেমিক ও চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রেও একটি জট লেগেছে। উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর অনার্স ভর্তি পরীক্ষা, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার পরীক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের স্থগিত পরীক্ষা, বিসিএসের একাধিক পরীক্ষা, মেডিক্যাল ও ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষাসহ সবগুলো পরীক্ষা নেয়ার চাপ নতুন বছর শুরু থেকে শেষ অবধিই থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজে অনার্স, মাস্টার্স এবং ডিগ্রির ইনকোর্স ও টেস্ট পরীক্ষা চলতি মাসের শেষের দিকে শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে করার কথা ভাবছে। এ ছাড়া এ সময়ের মধ্যে প্রতি সাবজেক্টের একটি করে অ্যাসাইনমেন্টও নেয়া হবে। সাত কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট) ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিশেষ করে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিসিএসের একাধিক পরীক্ষাও আটকে দিয়েছে মহামারী করোনা। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন বাংলাদেশ ও কর্মসংস্থান ব্যাংক গত ৫ ডিসেম্বর সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল। এ পরীক্ষাগুলো রাজধানীর ৬৭টি কেন্দ্রে হওয়ার কথা থাকলেও করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন বছরের শুরুতেই কিংবা এক বা দু’মাস পর স্থগিত লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর পর হবে ভাইভা। এভাবে বছরজুড়ে পর্যায়ক্রমে চলবে সবগুলো পরীক্ষা।
অন্য দিকে গত ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ৪২তম (বিশেষ) ও ৪৩তম সাধারণ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ৪২তম বিসিএসের মাধ্যমে দুই হাজার সহকারী সার্জন নিয়োগ দেয়া হবে। এ বিসিএসের আবেদনপত্র পূরণ ও ফি জমাদান শুরু হয়েছে ৭ ডিসেম্বর। চলবে ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। অন্য দিকে ৪৩তম বিসিএসে এক হাজার ৮১৪ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দেয়া হবে। আবেদনপত্র পূরণ ও ফি জমাদান শুরু হবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর এবং আবেদনপত্র জমাদানের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি। ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সম্ভাব্য সময় হিসেবে আগামী বছরের মার্চ মাস উল্লেখ করা হয়েছে।
করোনার প্রকোপ যদি সহসাই কমে আসে তাহলে আগামী শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ের একটু আগে কিংবা পরে অনুষ্ঠিত হবে। তখন হয়তো ২০২১ সালের মধ্যেই উচ্চতর শিক্ষায় মেডিক্যাল ভর্তি এবং অনার্সে ভর্তির জন্য দু’টি পরীক্ষা (বর্তমান শিক্ষাবর্ষের স্থগিত পরীক্ষাসহ) অনুষ্ঠিত হবে। যদিও ইতোমধ্যে ২০২০ সালের এইচএসসির অটোপাসের শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত গ্রেড পয়েন্ট প্রাপ্তিসাপেক্ষে আগামী ২০২১ সালের ৫ মার্চ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা এবং ২ এপ্রিল ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। একই সাথে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনার্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নেবে। এই পরীক্ষাও নতুন বছরের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় মাসেই অনুষ্ঠিত হতে পারে।
করোনায় আটকে থাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে এই পরীক্ষা শুরু হয়ে চলবে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত হওয়া বিভিন্ন সেমিস্টারের পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের অনুমতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের শিক্ষার্থীদের স্থগিত পরীক্ষাগুলো নিতে পারবে বলে জানিয়েছে। ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই আমরা এত দিন কোনো পরীক্ষার নেয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেইনি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে নিজ নিজ ক্যাম্পাসেই পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে আমরা শুধু বেশ কিছু শর্ত দিয়েছি। সেখানে আবাসিক হলগুলো না খোলার জন্য বলা হয়েছে। তিনি আরো জানান, সম্প্রতি ভিসিদের সাথে সভা করে এ বিষয়ে আমরা অনুমোদনও দিয়েছি।
চলতি বছরের শুরুর দিকেই করোনার কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসগুলো অনলাইনে চললেও সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে এবং অনেক বিভাগের চতুর্থ বর্ষ সম্মান ফাইনাল ও মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা আটকে গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, করোনার বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষাগুলো বাতিল করে জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে উচ্চশিক্ষা লাভের মানদণ্ড নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ এ পরীক্ষার ফল আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশের কথা রয়েছে।
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি করোনাভাইরাসের প্রকোপ দ্বিতীয় দফায় বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ না কমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। বরং আগামী বছরে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষাও পিছিয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।