কি হবে যাচ্ছে ৬ জানুয়ারি?
ট্রাম্প ও বাইডেন - ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কি আগামী ৬ জানুয়ারি বড় কিছু ঘটে যেতে পারে? ফলাফল পরিবর্তন করে জো বাইডেনকে আশাহত করে ডোনাল্ড ট্রাম্পই ক্ষমতায় থেকে যাবেন? এমন প্রশ্ন এখন ব্যাপকভাবে ওঠছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গত সোমবার ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের যে ফল জানা গেছে- সেটা এখনো 'আনুষ্ঠানিক' ফল নয়। নিয়ম অনুযায়ী, এই ভোটের ফল পাঠানো হবে ফেডারেল রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এবং আগামী ৬ জানুয়ারি ইলেকটোরাল ভোট আনুষ্ঠানিকভাবে গণনা করা হবে কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ও আইনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৬ জানুয়ারির ঘটনাবলী হয়তো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোটের ফল পাল্টে দেবার ক্ষেত্রে 'শেষ সুযোগ' এনে দিতে পারে।
এরকম একটা প্রয়াস নিচ্ছেন কয়েকজন সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্য। তারা আরিজোনা পেনসিলভেনিয়া, নেভাডা, জর্জিয়া ও উইসকন্সিন - এই রাজ্যগুলোতে অবৈধ ভোট ও জালিয়াতির লিখিত অভিযোগ জমা দেবেন - যাতে অন্তত একজন সিনেটরের স্বাক্ষর থাকবে।
এর লক্ষ্য হবে ওই রাজ্যগুলোর ভোট 'ডিসকোয়ালিফাই' বা বাতিল করা।
আলাবামা রাজ্যের রিপাবলিকান সিনেটর মো ব্রূকস এদের একজন। মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলছেন, মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী সেদিন সুপ্রিম কোর্টসহ যেকোন আদালতের বিচারকের চেয়ে বড় ভুমিকা আছে কংগ্রেস সদস্যদের । "আমরা যা বলবো তাই হবে, সেটাই চূড়ান্ত" - বলেন তিনি।
এ ধরনের অভিযোগ উঠলে এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ফলাফল প্রত্যায়ন করতে অস্বীকার করলে কী হবে - তা নিয়ে মার্কিন বিশ্লেষকরা নানা রকম চিত্র তুলে ধরছেন।
ব্রূকস বলছেন, "আমার এক নম্বর লক্ষ্য হলো আমেরিকার ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থা - যা ভোটার জালিয়াতি বা ভোট চুরিকে খুব সহজে মেনে নিচ্ছে - তা মেরামত করা।"
"আর এটা থেকে একটা বোনাস মিলে যেতে পারে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইলেকটোরাল ভোটে আনুষ্ঠানিকভাবে জিতে গেলেন। কারণ আপনি যদি অবৈধ ভোটগুলো বাদ দেন, এবং যোগ্য আমেরিকান নাগরিকদের আইনসঙ্গত ভোটগুলোই শুধু গণনা করেন - তাহলে তিনিই জিতেছেন।"
কিন্তু এরকম কোনো প্রক্রিয়া হবে জটিল ও দীর্ঘ।
প্রতিটি অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে দু'ঘন্টা করে বিতর্ক এবং ভোটাভুটি হতে হবে। কোন একটা রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট বাতিল করতে হলে ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ এবং রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত সেনেটকে একমত হতে হবে।
ঊনিশ শতকের পর কখনো এমনটা হয়নি।
অনুমান করা যায়, ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ভোট বাতিলের চেষ্টা অনুমোদন করবে না।
তা ছাড়া রিপাবলিকান কয়েকজন সেনেটরও এভাবে ভোট বাতিলের প্রয়াস জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা এ চেষ্টার বিপক্ষে ভোট দিলেই জো বাইডেনের জয় নিশ্চিত হয়ে যাবে।
ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের ভুমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
৬ জানুয়ারি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবেন কংগ্রেসের সেই অধিবেশনে সভাপতি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।
কারণ তিনিই সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী ৫০টি অঙ্গরাজ্য থেকে পাঠানো ইলেকটোরাল ভোটের খামগুলো খুলবেন, এবং তার যোগফল ঘোষণা করবেন।
১৯৬০ সালে রিচার্ড নিক্সন এবং ২০০০ সালে এ্যাল গোর-কে এভাবেই ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে তাদের নিজেদের পরাজয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বীর বিজয়কে প্রত্যয়ন করতে হয়েছিল।
তারা এটা করতে গিয়ে তাদের নিজেদের দলের আইনপ্রণেতাদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেছিলেন।
মাইক পেন্সও কি তাই করবেন?
"মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট যে ভূমিকা পালন করেন তার প্রতি লোকে এত দিন কোনো দৃষ্টি দেয়নি, এটা নিয়ে ভাবেওনি। কিন্তু যেহেতু প্রেসিডেন্ট এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প - তাই আপনাকে সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রাখতে হবে" - বলছেন গ্রেগরি বি ক্রেইগ - যিনি প্রেসিডেন্ট ওবামার সময় হোয়াইট হাউসের একজন আইনজীবী ছিলেন।
পেন্সের সামনে উভয়-সঙ্কট?
এত দিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেন্স একদিনে যেমন ট্রাম্পের বিশ্বস্ত ছিলেন, তেমনি তিনি আইন মেনেও চলেছেন।
নির্বাচনের পর থেকে পেন্স ট্রাম্পকে সাহায্য করার ব্যাপারে মিশ্র বার্তা দিয়ে চলেছেন।
প্রথম দিকে তিনি ভোট জালিয়াতির দাবিগুলো সমর্থন করার জন্য ট্রাম্প সমর্থকদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোর ভোট বাতিল করার জন্য টেক্সাসের এ্যাটর্নি জেনারেলের করা মামলার প্রশংসা করেছেন - যদি সে মামলা খারিজ হয়ে গেছে।
সমস্যা হলো, পেন্স নিজেই নাকি ২০২৪ সালে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে চান।
তার সামনে সঙ্কট : তিনি কি এ নির্বাচনের ফলাফলকে মেনে নিয়ে বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে তার নিজের দলের ভোটারদের বিরাগভাজন হবার ঝুঁকি নেবেন?
নাকি রিপাবলিকানদের বাধ্য করবেন ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে আমেরিকান নির্বাচনী ব্যবস্থাকে একটা সংকটের মধ্যে ফেলে দিতে?
যারা ৬ জানুয়ারির দিকে তাকিয়ে আছেন - তাদের প্রশ্ন সেটাই।
সম্ভাবনা 'শূন্য'
ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির সাংবিধানিক আইনের অধ্যাপক এডওয়ার্ড বি. ফোলি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলছেন, যত আপত্তি, মামলা বা অভিযোগই থাকুক - তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারবে না।
"৬ জানুয়ারির কংগ্রেস অধিবেশনে তা নিশ্চিত হয়ে যাবে, এটা আমরা স্পষ্ট আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি" - বলেন অধ্যাপক ফোলি।
বিবিসির বিশ্লেষক এ্যান্টনি যুর্কার বলছেন, "প্রতিনিধি পরিষদ নিয়ন্ত্রণ করছেন ডেমোক্র্যাটরা, ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের ফলাফল অঙ্গরাজ্যগুলো প্রত্যয়ন করে দিয়েছে, এবং ফেডারেল আইনও এখন বাইডেনের পক্ষে ।"
তাই ট্রাম্পের পক্ষে নির্বাচনের ফল উল্টে দেবার চেষ্টায় সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা এখন শূন্য - বলছেন এ্যান্টনি যুর্কার।
সূত্র : বিবিসি