‘নাগরিকত্ব’ খেলার অমানবিকতা, বিদেশি অপবাদ নিয়েই বিদায় ১০৪ বছরের চন্দ্রধরের
‘নাগরিকত্ব’ খেলার অমানবিকতা, বিদেশি অপবাদ নিয়েই বিদায় ১০৪ বছরের চন্দ্রধরের - ছবি সংগৃহীত
বিদেশি ফাইল খোলা রেখেই ১০৪ বছর বয়সে বিদায় নিলেন ভারতের আসাম রাজ্যের শিলচরের আমরাঘাটের বাসিন্দা চন্দ্রধর দাস। তিন মাস ডিটেনশন ক্যাম্পে কাটিয়ে দুই বছর লাগাতার অশক্ত শরীরে আদালতে হাজিরা দিয়েও নিজেকে ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ করতে পারেননি। ফলে দেশের মাটিতেই অ-নাগরিকের তকমা নিয়ে তাকে শেষ বিদায় নিতে হলো।এখন চন্দ্রধর দাসের পরিবারের জেদ মৃত্যুর পরও তার নাগরিকত্ব পাইয়ে দিতে দীর্ঘ আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে চান।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল ১০২ বছরের বাসিন্দা চন্দ্রধর দাসকে নিজের ভারতীয় নাগরিত্বের প্রমাণ দেয়ার নোটিশ দেয়। শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি নির্দিষ্ট দিনে আদালতে হাজির হতে পারেননি। এর ফলে ট্রাইব্যুনাল এক তরফা রায়ে তাকে বিদেশি ঘোষণা করে। বয়সের ভারে প্রায় অথর্ব মানুষটিকে তিন মাস কাটাতে হয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। তারপর লাগাতার ভাবে দুই বছর আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে ওই শতবর্ষ-উর্ধ্ব মানুষটিকে। তবুও নাগরিকত্ব প্রমাণিত হয়নি। শেষ ইচ্ছা ছিল, দেশের মাটিতে মারা যাওয়ার আগে নাগরিকত্বের স্বীকৃতিটি পাওয়া। কিন্তু শেষ স্বপ্নপূরণ হলো না। দেশ, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন আইনি লড়াই, সমস্ত সম্পর্ক ও বেড়াজাল কেটে শেষ বিদায় নিলেন।
একজন শতাধিক বছর বয়সী বৃদ্ধের মৃত্যুকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে ধরা হলেও চন্দ্রধর দাসের মৃত্যু সম্পূর্ণ অন্য রকমের। তার মৃত্যু গোটা ভারতের আইন ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। মৃত্যুর পথযাত্রী একজন বয়সের ভারে ন্যুব্জ ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া কি এ এদেশের আইন ব্যবস্থার পক্ষে সম্ভব ছিল না?
আসামের বিদেশি ট্রাইব্যুনাল ২০১৮ সালের মে মাসে তাকে বিদেশি ঘোষণা করে শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। মানবিকতার খাতিরে জামিন পেলেও নাগরিকত্ব নিয়ে চলেছে দীর্ঘ টানা-হ্যাঁচড়া। তার শেষ ইচ্ছা ছিল, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ওপারের বাংলাদেশ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি নির্বাচনের আগে দিয়েছিল, তার ভিত্তিতে তিনিও এবার বোধ হয় নিশ্চিতভাবে নাগরিকত্ব পাবেন। পরে যখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হলো, সেই খবর পেয়েও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন বৃদ্ধ চন্দ্রধর। কিন্তু কেবল প্রশাসন ও সরকারি উদাসীনতায় তাকে দেশের অনাগরিকের তকমা নিয়ে বিদায় নিতে হলো। তার স্ত্রী আদরমণি দাস বলেন, তার স্বামীর মতো তিনিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভক্ত। ‘তবে জানি না তার বানানো আইন আমাদের শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারবে কি না!’
ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে চন্দ্রধর দাসের আইনজীবী ছিলেন সৌমেন চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকার উদাসীন না হলে চন্দ্রধর দাসকে নাগরিকত্ব দেয়া যেত। কেবল ঢালঢোল পিটিয়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-র প্রচার চালানো হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সূত্র : পুবের কলম