দেশে তৈরী 'অর্জুন' প্রত্যাখ্যান ভারতীয় সেনাবাহিনীর
অর্জুন ট্যাংক - ছবি সংগৃহীত
হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতের যুদ্ধে মহারথী ভীষ্মকে পরাজিত করলেও আপাতত ‘অর্জুনে’ চরম অনীহা ভারতীয় সেনাবাহিনীর। না, হিন্দু কাহিনীর কলিযুগে ধরাধামে ধনঞ্জয় ফের সশরীরে অবতীর্ণ হননি। এখানে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার (DRDO) তৈরি অর্জুন মার্ক-১এ ট্যাংকের কথা বলা হচ্ছে। বেশ কিছু ‘দুর্বলতার’ জন্য দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ট্যাংকটিকে সামরিক বাহিনীতে শামিল করতে চাইছে না ভারতীয় সেনাবাহিনী।
বর্তমানে ভারতীয় ট্যাংক বাহিনীর মেরুদণ্ড হচ্ছে টি-৯০ বা ভীষ্ম ট্যাংক (T-90)। এই মুহূর্তে সেনাবাহিনীতে রয়েছে ১ হাজার ১৯৩টি ভীষ্ম ট্যাংক। ২০০১ সাল থেকে এপর্যন্ত ৮ হাজার ৫২৫ কোটি টাকার বিনিময়ে রাশিয়া থেকে ৬৫৭টি টি-৯০ কিনেছে ভারত। বর্তমানে তামিলনাড়ুর অবডিতে অবস্থিত Heavy Vehicles Factory (HFV)-তে মস্কোর অনুমোদনে আরো ১ হাজার টি-৯০ ট্যাংক নির্মিত হচ্ছে। পাকিস্তান সীমান্তে অত্যাধুনিক মিসাইল, নাইট ভিশন, উন্নতমানের রাডার নিয়ে কার্যত ‘কিলিং মেশিন’ এই টি-৯০ ট্যাংক।
পাকিস্তান সীমান্তে ও লাদাখেও মোতায়েন করা হয়েছে এই ঘাতক হাতিয়ার। তবে ক্ষমতায় এসেই ‘আত্মনির্ভর’ ভারতের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও একই কথা বলেছেন মোদি। গত মাসে জয়সালমেরে একটি অর্জুন ট্যাংকে সওয়ারও হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এই বিষয়ে DRDO-র এক বিজ্ঞানী বলেন, “অর্জুন ট্যাংকের উন্নত সংস্করণ হচ্ছে মার্ক-১এ। এই ট্যাংকে হাতিয়ার, সুরক্ষা, গতি ও ময়দানে দ্রুত পথ পালটানোর ক্ষমতা অনেকটাই বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রায় এক দশক আগে যে ১২৪টি অর্জুন ট্যাংক সেনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল সেগুলোর তুলনায় নয়া মডেলে বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে একটু অর্জুন ট্যাংকের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫৪ কোটি রুপি।”
এত কিছু করার পরও এই ট্যাংকের ওপর ভরসা রাখতে পারছে না ভারতীয় সেনাবাহিনী।
এদিকে, DRDO ভরসা দিলেও ১১৮টি নয়া অর্জুন মার্ক-১এ ট্যাংকের বায়না দিতে দ্বিধায় রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। কারণ প্রায় ৬৩ টন ওজনের অর্জুনের তুলনায় ভীষ্মের ওজন মাত্র ৪৬.৫ টন। প্রচন্ড ভারী হওয়ায় সেতু পার হওয়া বা পণ্য পরিবহণকারী বিমানে করে ট্যাংকটিকে নিয়ে যাওয়া রীতিমতো দুষ্কর। এছাড়া, ট্যাংকের কামান থেকে ছোঁড়া মিসাইল নিয়েও কিছু সমস্যা রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে একযোগে লড়াই চালাতে যুদ্ধের ময়দানে পরীক্ষিত টি-৯০ ট্যাংকেই ভরসা রাখছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সব মিলিয়ে, এখনই অর্জুনে আস্থা রাখতে নারাজ ভারতীয় সেনাবাহিনী।
ভারত মহাসাগরে মোতায়েন ১২০ যুদ্ধজাহাজ
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিভিন্ন দেশের ১২০-টিরও বেশি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রয়েছে। শুক্রবার এমনই দাবি করলেন ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়ত।
‘ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আধিপত্যের প্রতিযোগীতা’ বিষয়ক এক আলোচনা সভায় তিনি জানান, বিভিন্ন উদ্দেশ্যেই গুরুত্বপূর্ণ এই আন্তজার্তিক জলপথে এতগুলি রণতরী অবস্থান নিয়েছে। এর অন্যতম কারণ নৌবাণিজ্যের সুরক্ষা।
জেনারেল রাওয়ত বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের অধিকাংশ দেশই আর্থিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের জন্য উন্নত নৌ যোগাযোগ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সক্রিয়। সেই উদ্দেশ্য এই অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে ওই বাড়তি শক্তি সন্নিবেশ করেছে আঞ্চলিক শক্তিগুলি।’’
জেনারেল রাওয়তের বক্তৃতায় ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাম্প্রতিককালে চিনের প্রভাব বৃদ্ধির প্রসঙ্গও এসেছে। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, সামরিক শক্তিপ্রদর্শনের প্রতিযোগিতার জেরে ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। চীনের নাম না করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই আবহে আঞ্চলিক শক্তিগুলির সামরিক সমন্বয় বাড়ানো প্রয়োজন।’’
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন ও আনন্দবাজার পত্রিকা