যে ৪ আমল রাসূলুল্লাহ সা: কখনো ত্যাগ করতেন না

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম | Dec 16, 2020 04:28 pm
মদিনা শরিফ

মদিনা শরিফ - ছবি সংগৃহীত

 

উম্মুল মুমিনিন হজরত হাফসা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, চারটি আমল রাসূলুল্লাহ সা: কখনো ত্যাগ করেননি। আমলগুলো হলো- ১. আশুরার রোজা; ২. রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ; ৩. প্রতি মাসের তিন দিন তথা আইয়ামে বিজের রোজা; ৪. ফজরের ফরজের আগের দুই রাকাত নামাজ।’ (নাসায়ি, মিশকাত হাদিস নং-২০৭০)

১. আশুরার রোজা : হজরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- মহানবী সা: যখন হিজরত করে মদিনায় আগমন করেন, তখন তিনি দেখেন, ইহুদিরা আশুরার রোজা রাখছে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এটা কিসের রোজা? তারা বলল- এটা মহান দিন, এদিন আল্লাহ তায়ালা হজরত মূসা আ: ও বনি ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল থেকে মুক্ত করেন। তাই হজরত মূসা আ: এদিন রোজা রাখতেন। রাসূলুল্লাহ সা: তখন বলেন, ‘আমি তোমাদের চেয়েও মূসার বেশি হকদার।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সা: সেদিন রোজা রাখেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে রোজা রাখতে নির্দেশ দেন। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, মহানবী সা:কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, ফরজ নামাজের পর কোন নামাজ উত্তম? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘মধ্য রাতের নামাজ।’ আবার প্রশ্ন করা হয়েছে রমজানের পর কোন রোজা উত্তম? তিনি উত্তরে বলেন, ‘আল্লাহর মাস, যাকে তোমরা মহররম বলো, অর্থাৎ আশুরার দিনের রোজা।’ (আহমদ, আবু দাউদ ও মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন, ‘আশুরার রোজা তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়নি। আমি এ রোজা রাখি। যার ইচ্ছা এ দিন রোজা রাখতে পারে। আর যার ইচ্ছা রোজা না-ও রাখতে পারে।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রা: বলেন, আশুরার দিন জাহেলি যুগে কুরাইশরা রোজা রাখত। রাসূলুল্লাহ সা:ও রোজা রাখতেন। মদিনায় আসার পরও তিনি আশুরার রোজা রেখেছেন এবং সাহাবিদের এ রোজা রাখার আদেশ দিয়েছেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হয়, তখন তিনি বলেন, ‘যার ইচ্ছা আশুরার রোজা রাখতে পারে, যার ইচ্ছা না-ও রাখতে পারে।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। হজরত আবু মুসা আশয়ারি বলেন, ইহুদিরা আশুরার দিনকে খুবই মান্য করত এবং এ দিন উৎসব পালন করত। মহানবী সা: সাহাবিদের বললেন, ‘তোমরা এদিন রোজা রাখো।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: যখন আশুরার রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার আদেশ দেন, তখন লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল সা:! এ দিনটিকে তো ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা সম্মান করে। তিনি বলেন, ‘আগামী বছর ইনশাআল্লাহ আমরা ৯ তারিখেও রোজা রাখব। হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেন, পরবর্তী বছর আগমনের আগে রাসূলুল্লাহ সা: আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। (সহিহ মুসলিম ও আবু দাউদ) রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমরা আশুরার রোজা ইহুদিদের বিপরীত করো। অর্থাৎ, তারা একদিন রোজা রাখে তোমরা রাখো দুইদিন অথবা তিনদিন। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ও পরিবারের জন্য আশুরার দিন অধিক ব্যয় করবে, আল্লাহ সারা বছর তাকে সচ্ছলতা দান করবেন।’ (বায়হাকি) ১০ মহররম পৃথিবীর অনেক বড় বড় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

২. রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ : ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা, আটক বা আবদ্ধ রাখা, লেগে থাকা ইত্যাদি। পরিভাষায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জামে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। খাদেমে রাসূল হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: প্রতি রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। (তিরমিজি) হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, প্রতি বছর (রমজানে) একবার মহানবী সা:-এর নিকট কুরআন মাজিদ উপস্থাপন করা হতো। যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন সে বছর দু’বার উপস্থাপন করা হয়। তিনি প্রতি বছর ১০ দিন ইতিকাফ করেন, কিন্তু যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন সে বছর ১০ দিন ইতিকাফ করেন। (বুখারি) উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রা: বলেন, মহানবী সা: ওফাত পর্যন্ত রমজানেরশেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। তারপর তাঁর সহধর্মিণীগণ ইতিকাফ করতেন। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

৩. আইয়ামে বিজের রোজা : চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখকে আইয়ামে বিজ বলা হয়। বিজ অর্থ উজ্জ্বল বা আলোকিত। এ তিন রাত্রে চাঁদ উজ্জ্বল থাকার কারণে এ তিন দিনকে আউয়ামে বিজ বলা হয়। এ তিন দিনের রোজায় রয়েছে অনেক ফজিলত। মহানবী সা: এ তিন দিনের রোজা কখনো ভঙ্গ করতেন না। হজরত আবুজারগিফারি রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের আইয়ামে বিজ তথা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতে আদেশ করেছেন এবং বলেছেন, এটা সারা বছর রোজা রাখার মতো। (নাসায়ি) রাসূলুল্লাহ সা: আবদুল্লাহ ইবনে আমরকে বলেছেন, প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখা সারা বছর রোজা রাখার মতো, ফলে প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখো। (বুখারি ও মুসলিম) উম্মল মুমিনিন হজরত উম্মে সালামা বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: আমাকে প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখতে বলেছেন। (আবু দাউদ, নাসায়ি)

৪. ফজরের আগের দুই রাকাত সুন্নত : উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ফজরের নামাজের আগে দুই রাকাত নামাজ আমার কাছে সারা পৃথিবীর চেয়ে প্রিয়।’ (আহমদ, মুসলিম, তিরমিজি) হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘শত্রুদের ঘোড়সওয়ারবাহিনী যদি তোমাদের তাড়া করে, তবুও ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ত্যাগ করবে না।’ (আহমদ, আবু দাউদ, বায়হাকি, তাহাবি) হজরত আয়েশা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ফজরের নামাজের আগের দুই রাকাত সুন্নত যতটা গুরুত্ব দিয়ে আদায় করতেন অন্য কোনো নামাজ অতটা গুরুত্ব দিয়ে আদায় করতেন না।

(বুখারি, মুসলিম, আহমদ, আবু দাউদ) রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন, ‘ফজরের দুই রাকাত সুন্নত পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ অপেক্ষা উত্তম।’ (আহমদ, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি) হজরত আয়েশা রা: বলেন, সব ভালো কাজের মধ্যে ফজরের আগের দুই রাকাত সুন্নত পড়ার প্রতি রাসূলুল্লাহ সা:কে সর্বাধিক দ্রুত ধাবিত হয়ে দেখেছি। (আহমদ, মুসলিম) ফিকহবিদরা ফজরের সুন্নতের গুরুত্বের দিক বিবেচনা করে বলেছেন, যার ফজর নামাজ কাজা হয়, সে জুহরের আগে কাজা করলে সুন্নতসহ পড়তে হবে।

লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামিয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us